বৃক্ষরোপণে জোর দিতে হবে
বৃক্ষের ছায়াতলেই গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতা। তাই বৃক্ষ ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। এককথায় বৃক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে জড়িত। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব রোধ ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাসহ নৈসর্গিক শোভাবর্ধনে বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবেশের দূষণ রোধ ও বৈশি^ক উষ্ণতা কমাতে গাছ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখে থাকে। অথচ নগরায়ণ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন আর যন্ত্র-প্রযুক্তির মোহে অযাচিতভাবে বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে। উজাড় হচ্ছে বন। ফলে দেখা দিচ্ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বাড়ছে উষ্ণায়ন আর মানবসভ্যতা পড়ছে হুমকির মুখে। আমরা জানি, একটা দেশের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু সে তুলনায় বর্তমানে বনভূমির পরিমাণ হলো ১৩ শতাংশ; যদিও সরকারের দাবি ১৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী শিল্পায়ন ও নগরায়ণের কারণে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে। প্রকৃতির উপর আমরা কত অত্যাচার করেছি। এক-একটা প্রোজেক্টের জন্য শ’য়ে শ’য়ে গাছ কেটে ফেলছি। গাছের চারদিকে কংক্রিটের বেড়া দিচ্ছি। একটা মানুষের দুটো পা বেঁধে দিলে তিনি হালকা ঠেলা দিলেই উল্টে পড়ে যাবেন। গাছের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। এ বার অন্তত সব কিছু যেন পরিকল্পনামাফিক হয়।’ জীবন ও জগতে খাদ্য বা শক্তির জোগানদাতা উদ্ভিদ নিজেই তার খাদ্য তৈরি করতে পারে, যা অন্য কোনো প্রাণীর পক্ষে অসম্ভব। প্রতিটি প্রাণীই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। এক কথায় বৃক্ষ ছাড়া পৃথিবীতে জীবজগৎ অকল্পনীয় বা অবাস্তব হয়ে দাঁড়াবে। বৃক্ষ বাতাস থেকে কার্বন-ডাইঅক্সাইড শোষণ করে পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা করে। অপরদিকে বাতাসে অক্সিজেন যোগ করে বায়ুম-লে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত বজায় রাখে। উদ্ভিদ দূষণ রোধ করে বায়ুকে বিশুদ্ধ রাখে; বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে। উদ্ভিদের অভাবে উর্বর, উৎপাদনশীল মাটি ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হয়। মাটির উর্বরতা বজায় রাখার জন্য দরকার বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিপাত ঘটাতে গাছপালার আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। পরিবেশ রক্ষায় শুধু গ্রাম নয়, শহরের মানুষকেও নিতে হবে বিশেষ ভূমিকা। যাঁদের বাড়ির ছাদে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে তাঁরা সেখানে বিভিন্ন জাতের ফলের গাছ লাগাতে পারেন। দেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণের মতো সামাজিক আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মাঝে। শুধু জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান বা বৃক্ষমেলার সময় নয়, নিজ নিজ উদ্যোগে প্রত্যেক সচেতন মানুষকে সময়-সুযোগ বুঝে বৃক্ষরোপণে এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে হতে হবে বৃক্ষপ্রেমিক।