আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসিক সুবিধা নেই। এতে থাকা-খাওয়া, পড়াশোনা নিয়ে তারা নানা সমস্যায় ভুগছেন। অনেক ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে মেসে অবস্থান করলেও নিরাপত্তার অভাবে ছাত্রীরা সেভাবে থাকতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে শিক্ষা কার্যক্রম চালু ছিল ৫৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই লাখ ৯২ হাজার ২৯৬। এগুলোর ২৫২টি হলে এক লাখ ১৮ হাজার ৩৬ জন, অর্থাৎ ৪০ শতাংশের আবাসিক সুবিধা রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রীর সংখ্যা এক লাখ ৯ হাজার ৪২৯। ৯৭টি হলে আবাসিক সুবিধা রয়েছে ৪৯ হাজার ৪২৭ জনের। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ ছাত্রীর আবাসিক সুবিধা নেই। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদের সংখ্যা এক লাখ ৮২ হাজার ৮৬৭। তাদের জন্য ১৫৪টি হলে ৬৮ হাজার ৫৯৯ জনের আবাসিক সুবিধা রয়েছে। অর্থাৎ ৬৩ শতাংশেরই হল সুবিধা নেই। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করেই নিকট অতীতে দেশে একের পর এক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বানানো হয়েছে। অনেক শিক্ষা বিশেষজ্ঞের মতে, এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনাই প্রাধান্য পেয়েছে। আবার পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও শিক্ষার্থীদের আবাসিক ও অন্যান্য সুবিধার কথা বিবেচনা না করেই একের পর এক বিভাগ বাড়িয়েছে, শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়িয়েছে। ফলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সংকট প্রকট হয়েছে। বিশেষ করে, মেয়ে শিক্ষার্থীদের যেখানে-সেখানে মেস করে থাকা কিংবা রাত-বিরাতে যাতায়াতের কারণে নিরাপত্তার অভাব তীব্র হয়েছে। পাবলিক বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত মেধাবী শিক্ষার্থীরাই ভর্তির সুযোগ পান। কিন্তু এমন অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যাদের পারিবারিক অবস্থা সচ্ছল নয়। মেসে থাকা এবং রিকশায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজন হয় অনেকের পক্ষেই তা জোগাড় করা সম্ভব হয় না। আবার অনেক শিক্ষার্থীকে টিউশনি করে পড়ার খরচ জোগাড় করতে হয়। ছোট শহরগুলোতে টিউশনির তেমন সুযোগও নেই। ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরই মাঝপথে এসে শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটে। এটি শুধু শিক্ষার্থীর ক্ষতি নয়, রাষ্ট্রেরও ক্ষতি। আবাসিক সমস্যা সমাধানসহ একাধিক দাবিতে সম্প্রতি আন্দোলনে নামেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আবাসিক সুবিধা নেই বললেই চলে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির বেহাত হওয়া হলে নামমাত্র শিক্ষার্থীদের থাকার সুবিধা রয়েছে। ছাত্ররা আশপাশের মেসে থাকতে পারলেও বড় সমস্যায় পড়েন ছাত্রীরা। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবাসিক সংকট দূর করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে, মেয়ে শিক্ষার্থীদের শতভাগ আবাসিক সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমরা আশা করি এই সংকট দ্রুত সমাধানে এগিয়ে আসবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।