সম্পাদকীয়

নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করতে হবে

বহু বছর ধরে নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশায় ঢাকাসহ সারাদেশই সয়লাব। রাজধানীসহ দেশের সব সড়কে ‘বেপরোয়া গতি’তে ছুটে চলা ঝুঁকিপূর্ণ বাহন ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। যদিও প্রতিদিন কত সংখ্যক ব্যাটারিচালিত নতুন রিকশা সড়কে নামছে তার হিসেব কারও কাছেই নেই, তবে সরেজমিনে দেখা গেছে ব্যাটারিচালিত নতুন রিকশা তৈরির হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরই) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাটারি চালিত তিন চাকার যানবাহনের কারণে সারাদেশে ৯০০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মাঝে ৫৮২টিই ছিল মারাত্মক। যানবাহনের স্ট্যাবিলিটি নির্ভর করে তার সেন্টার অব গ্রাভিটি কোথায় আছে, তার ওপর। কিন্তু পায়ে চালিত রিকশায় যখন বৈজ্ঞানিকভাবে দুই-চারটা ব্যাটারি বসানো হচ্ছে, তখন তার গ্রাভিটি চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে এবং তাকে একটি ভারসাম্যহীন বাহনে পরিণত করছে। সেজন্য দেখা যায় যে কোনও মোড়ে যখন এরা দ্রুত বেগে বাঁক নিচ্ছে, তখন এরা উল্টিয়ে পড়ে যাচ্ছে। কারণ তার সেন্টার অব গ্রাভিটি জায়গামতো নেই। বর্তমানে সড়কে ব্যাটারিচালিত কয়েক ধরনের রিকশা চলাচল করছে। এর কিছু আসে বিদেশ থেকে, কিছু স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয়, আবার কিছু প্যাডেলচালিত রিকশায় ব্যাটারি ও ইঞ্জিন লাগিয়ে রাস্তায় নামানো হয়। এসব বাহন অবৈধ। তা সত্ত্বেও রাজধানীর বাইরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে দীর্ঘদিন ধরেই। রাজধানীতে গত কয়েক বছর ধরে এ ধরনের রিকশা চলাচল করতো সীমিত আকারে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। এগুলো শুধু রাজধানীর অলিগলি নয়, মূল সড়কও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ঢাকা শহরে এখন অগণিত অটোরিকশা রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, সংখ্যাটি প্রায় ১২ লাখ। গত পাঁচই অগাস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অসংখ্য নতুন রিকশা ঢাকায় এসেছে। সেটা আরেকটা ডিজাস্টার। তারা মনে করেছে, ঢাকায় আয় বেশি । সংখ্যাটা এখন ব্যাপক এবং এর সাথে জীবন জীবিকা জড়িত। কিন্তু এখানে নিরাপত্তার দিকও তো ভাবতে হবে। নিরাপত্তার জায়গায় কোন ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ জীবিকার কথা বলে অটোরিকশা চলাচলের অনুমোদন দেওয়া অন্যদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। উচ্চ আদালত থেকে যে নির্দেশনা রয়েছে তা বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ না হওয়ার পেছনে সক্রিয় রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এসব রিকশার চালকরা বলছেন, তারা নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে টোকেন নিয়ে যানবাহন চালান। কাজেই রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করতে হলে এদিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button