চলনবিলে পাখিদের দুর্দিন দূর হোক

সাদা বক, মাছরাঙা, ভারই, ঘুঘু, বালি হাঁস, রাতচোঁরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মিলছে চলনবিলে। একশ্রেণির শিকারিরা রাতে এবং কুয়াশার ভোরে এসব পাখি শিকার করছেন। শিকার করা পাখি হাট-বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে হরহামেশাই। আইনের তোয়াক্কা না করে এভাবে নির্বিচারে পাখি শিকার করে এক শ্রেণির অসাধু শিকারিরা স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রিও করছেন। অথচ বন বিভাগের কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। ১৯৮০ থেকে ’৯০ দশকের শুরু পর্যন্ত চলনবিলে পাখির ব্যাপক আনাগোনা ছিল। বিশেষ করে শীত মৌসুমে দেশীয় এবং অতিথি পাখির কলকাকলি, ওড়াউড়ি, প্রকা- তেঁতুল, বট-পাকুড়, বাঁশঝাড় বা অন্য কোনো গাছে পাখির ডানা ঝাপটানোর দৃশ্য উপভোগ্য ছিল বৈ কি। শীতের মৌসুমে পাখি ছিল বলেই চলনবিলের বিল-জলাশয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও ছিল ওই সময়ে দেখার মতো। ’৯০ দশকের মাঝামাঝি অল্পস্বল্প পাখি শিকার ছিল ভয়ংকর বিষয়। অথচ বর্তমানে চলনবিলের পাখি শিকার যেন মামুলি ব্যাপার। শিকারির বিষটোপ, জাল, ফাঁদ পাখির জীবন ও নিরাপত্তাকে বিষিয়ে তুলছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাখির আগমনের হার কমেছে বটে। তারপরও সংখ্যায় বেশি না হলেও পাখির আগমনের ব্যত্যয় ঘটেনি এ বছরও। সেই সঙ্গে বিলে আসতে না আসতেই দেশীয় ও অতিথি পাখি নির্মম লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। চলছে নির্বিচারে নিধনযজ্ঞ। সাধারণত দিনের বেলায় বিলের কাদা-মাটিতে পাখির পায়ের ছাপ বা চিহ্ন দেখে রাখে ভয়ংকর শিকারিরা। সন্ধ্যায় সেসব স্থানে শিকারিরা তিন-চারজনে দল বেঁধে বিলে বিষটোপ, বড় দৈর্ঘ্যরে অসংখ্য সূক্ষè জাল, হাতে বোনা বিশেষ জাল বা নিজেদের তৈরি নানা ধরনের পাখি শিকারের ফাঁদ পেতে রাখে। রাতে যখন পাখি খাবার খেতে আসে তখন অনায়াসে শিকারিদের পাতা জাল বা ফাঁদে আটকে যায় শত শত নিরীহ পাখি। পরে শিকার হওয়া পাখি ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। প্রথমে ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন হয়। এরপর ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে শিকারিদের দ-ের বিধান রয়েছে। আইনে, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি রয়েছে এক বছর জেল, এক লাখ টাকা দ- বা উভয় দ-ের বিধান। কেউ যদি বার বার পাখি শিকার করেন তাহলে অপরাধীর দুই বছরের জেল, দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই আইনের কোনো প্রয়োগ হচ্ছে না। আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে গত দেড় দশকে চলনবিলে শীত মৌসুমে পাখি শিকারিদের হাতের মুঠোয় চলে যাচ্ছে পাখির জীবন। এ জন্য আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি জনসচেতনতা জরুরি। কেউ যেন পাখি শিকার এবং পাখি হাট-বাজারে বিক্রি করতে না পারে, এ জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।