সম্পাদকীয়

মাদকের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে কঠোর হোন

দেশে ভয়াবহরূপে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বনাশা মাদক। শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো সমাজই মাদকের কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ধ্বংস হয়ে যেতে পারে পুরো জাতি। বাংলাদেশে অতীতে অনেকবার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বা যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। ডিএনসির প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে (রিহ্যাব) গেছে অন্তত ৫৫ হাজার মাদকসেবী। গত পাঁচ বছরে রিহ্যাবে চিকিৎসা নেওয়া নারী মাদকাসক্ত বেড়েছে পাঁচ গুণ। ১৫ বছর ও তার কম বয়সী মাদকাসক্ত বেড়ে হয়েছে তিন গুণ। মাদকের অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে তরুণদের অনেকেই ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। ২০১৯ সালে জাতিসংঘের এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মাদকপাচারের প্রধান দুটি আন্তর্জাতিক রুটের একটিতে রয়েছে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশেও মাদকের উপস্থিতি ক্রমেই বাড়ছে। ধরা পড়ছে ইয়াবা, আইস, হেরোইন, এলএসডিসহ নানা ধরনের মাদক। অতি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ওষুধ আমদানির নামে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভিন্ন বন্দর দিয়েও অবাধে ঢুকছে মাদক। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মামলা, উল্লেখযোগ্য আসামি ও মাদকদ্রব্যের বিবরণের মধ্যে রয়েছে মোট অভিযান আট লাখ ৫৩ হাজার ২৫৮টি, মামলা হয়েছে দুই লাখ ২৮ হাজার ৭০৯টি এবং আসামি দুই লাখ ৪৪ হাজার ৮৯৪ জন। মাদকের এমন অবাধ প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দেশের সামনে এক ভয়ংকর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। মাদকাসক্তরা নিজেদের ধ্বংস করছে, পরিবারকেও ঠেলে দিচ্ছে বিপর্যয়ের দিকে। নানা রকম অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ার ফলে সামাজিক স্থিতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাদক বিস্তারের প্রধান কারণ মাদকদ্রব্যের সহজপ্রাপ্যতা। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে নানা পথে নানা কৌশলে ঢুকছে মাদকদ্রব্য। মাদকের প্রভাব সামাজিক বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থা থেকে ঘুরে না দাঁড়ালে ভয়ংকর পরিণতি রোধ করা যাবে না। কাজেই যেকোনো মূল্যে মাদকের বিস্তার রোধ করতে হবে। মূল কারবারিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। মাদক ব্যবসা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button