জাতীয় সংবাদ

ধর্ষণের সর্ব্বোচ্চ শাস্তি প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে উত্তাল সারাদেশ

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ দেশের কয়েকটি স্থানে একাধিক ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। সারাদেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ জেলা-উপজেলায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে তারই প্রতিফলন দেখা গেছে। ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুততম সময়ে অভিযুক্তদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদ-ের মত সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে সমাবেশ থেকে। গতকাল এসব প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঃ
ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোববার মধ্যরাতে নেমে এসেছিলেন রাস্তায়। বিক্ষোভ থেকে মাগুরায় আট বছরের শিশুকে ধর্ষণে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিসহ নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার বিচারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ধর্ষকদের সর্বোচ্চ বিচার দাবিসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দেন, ধর্ষণের ঘটনায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তারা আরও বড় কর্মসূচি পালন করবেন। সকাল ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশ করেন ঢাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। সেসময় তাদের ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ঃ ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষার্থীরাও। গতকাল সকালে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ঃ ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ভোররাতে আড়াইটার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। তারা প্রায় ৩০ মিনিট সড়কটি অবরোধ করে রাখেন। জাবি শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের গ্রেপ্তারে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন এবং এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানান।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ঃ সকালে জাবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কে’র ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে শিক্ষকদের পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ঃ ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’ স্লোগানে উত্তাল চবি অন্যদিকে মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ। দুপুর দেড়টার দিকে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন। দুপুর সাড়ে ৩টায় ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চে’র ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী প্রতিবাদ মিছিল করেন। বিকেল ৪টায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের শিক্ষার্থীরা জাবি ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল করেন। সেই সময় তাদের মুখে লাল কাপড় বাঁধা ছিল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ঃ গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কে’র ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে শিক্ষকদের পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ঃ দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারীদের প্রতি সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে এবং ধর্ষকদের মৃত্যুদ-ের দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল দুপুর ২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে এ কর্মসূচি শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষকের বিচারের দাবি জানান। অন্যথায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন তারা। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গণিত বিভাগের হাফিজুল ইসলাম, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পলাশ বখতিয়ার, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সুলতানা আক্তাত লুবনা, পরিসংখ্যান বিভাগের নওরীন জামানসহ অন্যান্যরা।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ঃ রোববার ভোররাত ৩টার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নেন। মিছিল থেকে তারা মাগুরায় শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদ জানান এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তোলেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশে ধর্ষণের ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে। শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউই রেহাই পাচ্ছে না। কিন্তু এসব ঘটনায় বিচারের উদ্যোগ নেই। শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, অপরাধীরা জানে যে তারা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে পারবে। তাই তাদের ভয় নেই। আমরা এমন একটি দেশ চাই, যেখানে কোনো ধর্ষক মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াতে পারবে না। প্রতিটি ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ঃ নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রোববার দুপুরে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টায় ক্যাম্পাসের বটতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মহাসড়কে সমাবেশে মিলিত হয়। আধঘণ্টাব্যাপী সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ধর্ষণবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য স্বরাষ্ট্র সচিবের পদত্যাগও দাবি করেন তারা।
সিলেট ঃ ধর্ষণ ও নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রতিবাদে সিলেটে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। আজ বিকেল ৩টা থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে তারা এই কর্মসূচি পালন করে। সেই সময় তারা ‘দফা এক দাবি এক, জাহাঙ্গীরের পদত্যাগ’, ‘বাহ ইন্টেরিম চমৎকার, ধর্ষকদের পাহারাদার’, ‘তনু থেকে মুনিয়া, মুনিয়া থেকে আছিয়া, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
নারায়ণগঞ্জ ঃ সকাল ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের শহীদ মিনার থেকে শত শত শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও সহিংসতাবিরোধী বার্তা লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে যোগ দেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও। এ সময় তারা ধর্ষকদের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। তারা জোর দিয়ে বলেন, দীর্ঘদিনের দায়মুক্তির সংস্কৃতি ভেঙে নতুন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
নরসিংদী ঃ দেশব্যাপী নারী নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের প্রতিবাদে নরসিংদীতে মানববন্ধন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নরসিংদী জেলা শাখা। গতকাল দুপুরে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা সাম্প্রতিক সময়ের নৃশংস হত্যাকা- ও ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নারীদের প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। কিন্তু বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা আরও সাহস পাচ্ছে। দ্রুত এসব অপরাধের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে না পারলে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা। বক্তারা নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। তারা বলেন, শুধু আইনের কঠোর প্রয়োগই যথেষ্ট নয়, বরং পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। মানববন্ধনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সমাজকর্মী ও সচেতন নাগরিকরা অংশ নেন। বক্তারা নারী নির্যাতন রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ সময় বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোনের সমন্বয়ক সোহান হায়দার, মাসুদ হাকিম, জান্নাতুল ফেরদৌস মালিহা, ইসরাত জাহান মিতু, ফয়েজ আহমেদ, মেহেদী হাসান প্রমুখ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button