ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি: জনস্বাস্থ্যের জন্য নতুন সংকট

বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ জনগণের জন্য এক ভয়াবহ বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে যখন নি¤œ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ দিশেহারা, তখন চিকিৎসা খাতে অতিরিক্ত ব্যয় তাদের জীবনযাত্রাকে আরও দুর্বিষহ করে তুলছে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত, যেমন উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ কিংবা অন্যান্য জটিল অসুস্থতায় ভুগছেন, তাদের জন্য এই মূল্যবৃদ্ধি একপ্রকার মৃত্যু ফাঁদের মতো। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসির তথ্যই দেখা গেছে, সাধারণ ওষুধের দামও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত লোসারটান পটাশিয়াম ৫০ মিলিগ্রামের প্রতি পিসের দাম ৮ থেকে ১০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। একইভাবে, ফেক্সোফেনাডিনের প্রতি পিস ৮ থেকে ৯ টাকা, অ্যাজিথ্রোমাইসিনের প্রতি পিস ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং অ্যামলোডিপাইন অ্যাটেনোলোলের দাম ৬ থেকে ৮ টাকায় উন্নীত হয়েছে। প্যারাসিটামল সিরাপ, যা শিশুদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তার দামও বেড়ে ২০ থেকে ৩৫ টাকা হয়েছে। এমন অবস্থায়, দরিদ্র ও নি¤œবিত্ত শ্রেণির মানুষ প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। ওষুধ উৎপাদনকারীরা মূল্যবৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান হ্রাসকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, ওষুধের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়, যা বৈদেশিক মুদ্রার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই সংকট মোকাবিলায় সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে না? জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার কেন আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না? সংবিধান অনুযায়ী, চিকিৎসা সেবা জনগণের মৌলিক অধিকার। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এটি যেন শুধুই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কম, ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণে নেই, আর সেই সুযোগে মুনাফালোভী একটি গোষ্ঠী সাধারণ জনগণের দুর্দশাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করছে। এ অবস্থায় সরকারের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে ওষুধের মূল্য সহনীয় মাত্রায় রাখা যায়। প্রয়োজনে ওষুধ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো, স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে। সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হলে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতেই হবে। অন্যথায়, জনস্বাস্থ্যের এই সংকট আরও গভীর হতে থাকবে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।