সম্পাদকীয়

শিক্ষার ক্ষেত্রে বিপদ সংকেত: বই না পাওয়ার কারণে সংকটে শিক্ষার্থীরা

২০২৫ শিক্ষাবর্ষের বই সরবরাহে ঘাটতি নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের জন্য বড় এক বিপদের ইঙ্গিত বহন করছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে সকল শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও, এ মাসের শেষ হতে মাত্র ১৫ দিন বাকি থাকলেও, বইয়ের ছাপা এখনও শেষ হয়নি। বিশেষ করে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বইগুলোর কাজ অনেকটাই পিছিয়ে আছে। এসব বইয়ের ছাপা এখনও সাড়ে ১৫ কোটি বইয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, এবং প্রেস মালিকরা মনে করছেন, মার্চের আগে বইয়ের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন দিশেহারা, তেমনি স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও চিন্তার শেষ নেই। শিক্ষার্থীদের হাতে বই না আসলেও, স্কুলগুলোর পরীক্ষা নেয়ার তাগিদ চলছে। অনেক স্কুল যেখানে দুই মাস পরপর পরীক্ষা হয়, তারা ফেব্রুয়ারিতেই পরীক্ষা নিতে চাচ্ছে, ফলে শিক্ষার্থীদের জন্য এ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এনসিটিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কিছু মুদ্রণকারী বেশি কাজ নিয়ে থাকলেও, সময়মতো বই সরবরাহ করতে পারছেন না। এই বিলম্বের পেছনে মূল কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে কাগজের সংকট এবং বাইন্ডারের অভাব। কিছু প্রেসে বই ছাপানোর পর বাইন্ডিং করার কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, এবং এই কারণে বইয়ের কাজ এগোচ্ছে না। তবে শিক্ষকদের উদ্বেগ আরও বেশি। নতুন শিক্ষাবর্ষের দেড় মাস চলে গেছে, কিন্তু বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় মনোযোগী হতে পারছে না। জানুয়ারির ২০ তারিখে ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাসহ অন্যান্য কার্যক্রম শেষ হলেও, বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ কমে গেছে। এতে তারা শিখন-অভ্যাস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার মানে বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। শিক্ষাবর্ষের প্রথমে ছুটি ও ধর্মীয় উৎসবের ছুটির কারণে এক বছরেই ক্লাস-পরীক্ষা হয়ে থাকে মাত্র ১৮৫ দিন। কিন্তু, যদি মার্চে বই সরবরাহ না হয়, তবে এক বছরের সিলেবাস আট মাসে শেষ করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা যেভাবে পড়াশোনা করবে, তা খুবই কঠিন হবে। বইয়ের ছাপা নিয়ে নানা সমস্যা থাকার পরও, মুদ্রকরা নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রক ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ। এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানিয়েছেন, বর্তমানে ২৬ কোটি বই ছাপানো হয়ে গেছে, কিন্তু বাইন্ডিংয়ের কাজ পিছিয়ে থাকায় ১১ কোটি বই এখনও বাকি। অবশ্য, বর্তমান পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের জন্য বড় একটি ঝুঁকি তৈরি করছে, এবং শিক্ষা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে শিক্ষার্থীরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button