সম্পাদকীয়

জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মসূচি আর নয়

যানজটের এ নগরীতে কোনো একটি রাস্তা বন্ধ হলেই এর প্রভাব পড়ে আশপাশের অন্য সব সড়কে। সেখানে বর্তমান সময়ে রাস্তায় অবরোধ করে আন্দোলন করা এক বিরক্তিকর প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেকোনো সমস্যার প্রতিবাদ জানাতে জনসাধারণের অসুবিধার কথা বিবেচনা না করেই অনেকেই রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলনে বসেন। এর ফলে স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, অফিসগামী মানুষ এবং জরুরি পরিষেবা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। জরুরি রোগী পরিবহণ, অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়া থেকে শুরু করে যানজট, অসহায়ভাবে রাস্তার মধ্যে আটকে থাকা মানুষদের দুর্ভোগ এই আন্দোলনের অন্যতম ক্ষতিকর দিক। রাস্তায় আন্দোলনরত ব্যক্তিরা নিশ্চয়ই তাদের দাবি আদায়ে সচেষ্ট হতে পারেন, তবে রাস্তা অবরোধের বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। তারা তাদের দাবির কথা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানোর জন্য অন্য কোনো শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খল পন্থা বেছে নিতে পারেন। যেমন গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, প্রশাসনের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বা মিডিয়ার মাধ্যমে মতামত প্রকাশ। এসব বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করলে জনজীবন ব্যাহত না করেই আন্দোলন সম্ভব হবে এবং কর্তৃপক্ষের কাছেও দাবি পৌঁছে যাবে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ও পালিয়ে যাওয়ার পর এক শ্রেণীর মানুষ নানা অভিযোগ ও দাবি-দাওয়া তুলে রাস্তা অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি এবং সরকারকে বিপাকে ফেলার অপচেষ্টা করেছে। সচেতন ছাত্র-জনতা ও সরকারের ত্বরিত পদক্ষেপে সেসব ঝামেলা অনেকটা কমে আসলেও অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনিক কর্মকা-ে শৈথিল্য ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে অনেক মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর বনানীতে গত সোমবার সকাল পৌনে ৭টায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক পোশাক শ্রমিক মারা যান। এর পরপরই ঘাতক চালকের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে আসেন বনানীর দুটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। সকালে বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ থেকে মহাখালীর আমতলী পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নেন পোশাক শ্রমিকরা। সড়কের উভয় পাশের যান চলাচল বন্ধ করে দেন তাঁরা। দীর্ঘ সাত ঘণ্টা অবরোধের কারণে মহাখালী ও গুলশানে আসা-যাওয়ার সব পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। আটকা পড়ে ছোট-বড় শত শত যানবাহন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন অসংখ্য মানুষ। রাস্তায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করে লাখ লাখ মানুষকে ৭-৮ ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। দুর্ঘটনার প্রতিবাদে যদি যেখানে সেখানে সড়ক অবরোধের ঘটনা অব্যাহত থাকে, তাহলে দেশের অর্থনীতি ও মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হতে বাধ্য। তাই আমাদের সমাজে ইতিবাচক আন্দোলনের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার জন্য রাস্তায় অবরোধের পরিবর্তে নতুন এবং সুশৃঙ্খল পদ্ধতির প্রয়োগ প্রয়োজন।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button