সম্পাদকীয়

কক্সবাজারে সুপেয় পানির সংকট-সমাধানে সময়ক্ষেপণের ঝুঁকি

কক্সবাজার দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন নগরী, যেখানে প্রতি বছর লাখো পর্যটক আগমন করেন এবং একই সঙ্গে দেড় লাখেরও বেশি মানুষের স্থায়ী বসবাস। কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ শহর আজ এক গভীর ও দুঃখজনক সংকটে নিপতিত-সুপেয় পানির অভাব। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় এবং অগভীর নলকূপের ব্যাপক বিকলতায় শহরবাসী ও পর্যটক উভয়েই চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বর্তমানে শহরে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হলেও তা প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। উদ্বেগজনকভাবে, অগভীর ও কিছু গভীর নলকূপ থেকে এখন লবণাক্ত ও পানের অযোগ্য পানি উঠে আসছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুসারে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ১০ থেকে ১১ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে যাচ্ছে। এক দশক আগেও যেখানে পানি পাওয়া যেত ১২০ ফুট গভীরে, এখন তা মিলছে ৩০০ থেকে ৫০০ ফুট গভীরে। এই প্রবণতা শুধু উদ্বেগজনকই নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য এক ভয়াবহ সংকেত। সরকার ২০২০ সালে সুপেয় পানির সংকট নিরসনে যে ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার প্রকল্প হাতে নেয়, তা প্রশংসনীয় উদ্যোগ হলেও বাস্তবায়নের ধীরগতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। প্রকল্পের সময়সীমা একাধিকবার বাড়ানোর পরও ২০২৪ সালের মধ্যে নির্মাণ শেষ করা যায়নি। যদিও কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, চলতি বছরের জুনের মধ্যেই পানি সরবরাহ শুরু হবে, তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি এখনও প্রকট। বিশেষ করে ঘরে ঘরে সরবরাহ লাইন স্থাপনের কাজ এখনো শুরুর পর্যায়ে, যা হতাশাজনক। শুধু হোটেল-মোটেল জোনকে অগ্রাধিকার দিয়ে পানি সরবরাহের সিদ্ধান্ত সুস্পষ্টভাবে বাসিন্দাদের উপেক্ষা করে। শহরের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হিসেবে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করাই হওয়া উচিত প্রকল্পের প্রথম অগ্রাধিকার। পানি সংকট শুধু জনদুর্ভোগই বাড়াচ্ছে না, এটি শহরের অর্থনীতিকেও হুমকির মুখে ফেলছে। পর্যটননির্ভর অর্থনীতির জন্য পানি একটি মৌলিক অবকাঠামো উপাদান। শত শত হোটেলের পানির পাম্প বিকল হওয়ায় এর প্রভাব ব্যবসায়িক খাতেও পড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের সুস্পষ্ট দাবি-শোধনাগার প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে এবং শহরের প্রতিটি ঘরে পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে কার্যকর সময়সূচির ভিত্তিতে। পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অতিনির্ভরতা কমিয়ে বর্ষার পানি সংরক্ষণ, পুনঃব্যবহারযোগ্য পানি ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button