কৃষি ক্ষাতে ঋণ ব্যবস্থার সংকট দূর হোক

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। এ খাতের প্রবৃদ্ধি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্যবিমোচন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে যে, কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে এবং এ খাতে ঋণ বিতরণেও ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি খাতে চূড়ান্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৩০ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় সামান্য কম। জিডিপিতে কৃষির অবদান প্রায় ১১.৩৭ শতাংশ হলেও এ প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখা যাচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব, কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সীমিত ব্যবহার এবং ঋণপ্রাপ্তিতে জটিলতা কৃষির সামগ্রিক উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মন্থরগতির অন্যতম কারণ হলো কৃষি খাতে বিনিয়োগের অভাব। কৃষিখাতে ঋণ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও ব্যাংকগুলো তা যথাযথভাবে পালন করছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা এ খাতে ঋণের জন্য নির্ধারণ করে রাখলেও অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংক তা মানছে না। সুদহারও অনেক বেশি। ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে ৩৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও প্রথম পাঁচ মাসে বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ১৩ হাজার ৮১ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৪ শতাংশ। কৃষি খাতে আমাদের উৎপাদন বাড়াতে ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাকে উন্নতি করতে হবে। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে কীভাবে সাধারণ কৃষক আরো বেশি সুবিধা নিতে পারেন, সে বিষয়ে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিশেষায়িত ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য বিশেষায়িত নিয়ম থাকতে হবে। তা না হলে কৃষকের জন্য কৃষি খাতে অর্থায়ন করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। উচ্চ সুদের হার কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষকদের প্রয়োজনীয় অর্থায়ন না পেলে উৎপাদনশীলতা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হয়, যা কৃষির প্রবৃদ্ধির নি¤œগতির অন্যতম কারণ। এছাড়া কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাওয়াও একটি বড় সমস্যা। অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্প কারখানার সম্প্রসারণ এবং নগরায়ণের ফলে চাষযোগ্য জমি কমছে, যা কৃষি উৎপাদনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে বন্যা, খরার মতো পরিস্থিতি কৃষকদের ফসল উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এ সংকট মোকাবিলায় সরকারকে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃষি ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়াকে সহজ করতে হবে, যেন প্রকৃত কৃষকরা সহজেই ঋণ সুবিধা পেতে পারেন। কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে এবং ছোট ছোট খামারগুলোকে একত্রিত করে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদনের সুযোগ তৈরি করতে হবে।