জনস্বাস্থ্য সেবায় অস্থিরতা: কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সংকট গভীর উদ্বেগজনক

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের সিসিইউ (করোনারি কেয়ার ইউনিট) বিভাগ বন্ধ হয়ে যাওয়া ও আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) বিভাগের অস্তিত্ব টিকে থাকা বিনা বেতনে কর্মরত চিকিৎসক-কর্মচারীদের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে থাকা-এই পরিস্থিতি দেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি গভীর সংকটকে উন্মোচিত করেছে। এটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। প্রায় নয় মাস ধরে ৩০ জন চিকিৎসকসহ ১৩০ জন কর্মচারী কোনোরূপ বেতন ছাড়াই সেবা দিয়ে গেছেন, কেবল মাত্র একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদনের আশায়। তাদের এই নিষ্ঠা প্রশংসার দাবি রাখে, তবে তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন রাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকা। সদর হাসপাতালের বিশেষায়িত বিভাগগুলো দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল ছিল। ২০১৯ সাল থেকে এসব সংস্থা বিশ^ব্যাংকের অর্থে কক্সবাজার জেলার স্বাস্থ্য খাতে যে সহায়তা দিয়ে আসছিল, তা স্বাস্থ্যসেবায় কিছুটা গতি আনলেও এটি যে একটি টেকসই সমাধান ছিল না, তা প্রকল্প মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জুন ২০২৪-এ প্রকল্প শেষ হওয়ার পর তিন মাস মেয়াদ বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চালু রাখা হয়েছিল। কিন্তু এরপর থেকে কার্যত স্বাস্থ্যসেবা চলছে ‘স্বেচ্ছাশ্রমে’। চিকিৎসা একটি মৌলিক অধিকার। আর সেটি যদি দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা ও রোহিঙ্গা শরণার্থী বহুল কক্সবাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলায় ব্যাহত হয়, তবে তা শুধু স্থানীয় জনগণের নয়, জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বার্থের ক্ষেত্রেও হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এই মুহূর্তে ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ রোগী ভর্তি থাকেন। জরুরি বিভাগে প্রতিদিন সেবা নিচ্ছেন ৫০০ রোগী, অথচ সেখানে নিয়োজিত আছেন মাত্র তিনজন চিকিৎসক। যেখানে ন্যূনতম প্রয়োজন ১২ জন। অনুমোদিত ৩২৮টি পদের মধ্যে ৭৬টি এখনো শূন্য। প্রশ্ন ওঠে, দীর্ঘ সময় ধরে এসব শূন্য পদ পূরণ না হওয়ার দায় কার? এখনই সময়, সরকার দ্রুত দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী জনবল ও অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। শুধু মাত্র প্রকল্পনির্ভর কাঠামোতে চিকিৎসাসেবা চালু রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে একটি নীতিগত পরিবর্তন দরকার। দেশের যেকোনো অঞ্চলের হাসপাতাল যেন কেবল দাতা সংস্থার অনুদানের ওপর নির্ভর করে না থাকে, তা নিশ্চিত করাই হবে ভবিষ্যতের টেকসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল চাবিকাঠি।