দ্রুত সমস্যার সমাধান জরুরি

শিল্পখাতে গ্যাস সংকট
দেশে বেশ কিছুদিন ধরে গ্যাসের তীব্র সংকট বিরাজ করছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়াই গ্যাস সংকটের কারণ। এমন অবস্থায় ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়েছে শিল্প খাত। খবরে প্রকাশ, তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদনে ধস নেমেছে। বেকায়দায় শতাধিক রপ্তানিমুখী শিল্প-কলকারখানা। অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গত ৬ মাস ধরে চলা এ বিপর্যয়ে স্বাভাবিকভাবেই লোকসানের মুখে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাসাবাড়ি, সিএনজি স্টেশনসহ সর্বত্র এর প্রভাব পড়লেও শিল্পকারখানার পরিস্থিতি সবচেয়ে সঙ্গিন। গ্যাস সংকটের কারণে অধিকাংশ কারখানা ডিজেলচালিত জেনারেটরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা উৎপাদন ব্যয় বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে অনেক ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এই পরিদর্শনে শিল্প-মালিকদের মধ্যে যে আশার সঞ্চার হয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। আমরাও আশা করি, দেশের শিল্প খাতের স্বার্থে দ্রুত গ্যাস সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ভুলে গেলে চলবে না, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চাহিদামাফিক উৎপাদিত পণ্য সময়মতো সরবরাহ করতে না পারলে কিংবা পণ্যের গুণগত মান ঠিক না থাকলে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দেওয়া শুধু নয়, বাতিলও করতে পারেন, যা অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক হবে না। বস্তুত গ্যাসের এ তীব্র সংকট দ্রুত নিরসন করা না গেলে অর্থনীতি ও বাণিজ্যে এর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তার অভিঘাত হবে সুদূরপ্রসারী। কাজেই গ্যাস সমস্যার সমাধান করতে হবে দ্রুত। এ লক্ষ্যে মজুত গ্যাস উত্তোলনে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। গ্যাসক্ষেত্র ও সঞ্চালন লাইনে সমস্যা থাকলে তাও অবিলম্বে দূর করতে হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পাইপলাইন দ্রুত মেরামত করতে হবে। গ্রাহকদের ভোগান্তি হ্রাসে এবং শিল্প রক্ষার স্বার্থে গ্যাস সংকট কাটাতে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া উচিত বলেও মনে করি আমরা। পাশাপাশি এলএনজি আমদানির পরিমাণও প্রয়োজনমাফিক বাড়াতে হবে। সর্বোপরি জ্বালানি খাতে স্মার্ট ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে নিকট ভবিষ্যতে এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না। মনে রাখা দরকার, দেশে ডলার আসার যে কয়টি ক্ষেত্র রয়েছে, তার মধ্যে রপ্তানি বাণিজ্য অন্যতম। রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা যদি গ্যাস সংকটে ভোগে, তাহলে উৎপাদন যেমন ব্যাহত হবে, তেমনি ডলার আয়ের প্রবাহ কমে গেলে এর প্রভাবও দেশের অর্থনীতিতে পড়বে। চাহিদামাফিক উৎপাদিত পণ্য সময়মতো সরবরাহ করতে না পারলে কিংবা পণ্যের গুণগত মান ঠিক না থাকলে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দিতে, এমনকি বাতিলও করতে পারেন, যা অর্থনীতির জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না। সব দিক বিবেচনায় সরকারকে দ্রুত গ্যাস সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।