নিহত হামাস নেতা সালেহ সম্পর্কে যা জানা গেলো
প্রবাহ ডেস্ক : বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় গত মঙ্গলবার হামাসের উপ-প্রধান সালেহ আল-আরৌরি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও তীব্র হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই এ হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হিজবুল্লাহ। এদিকে, আরৌরির মৃত্যুর খবরের পর উত্তর রামাল্লার অধিকৃত পশ্চিম তীরের আরুরা শহরের মসজিদগুলো শোক প্রকাশ করছে এবং গতকাল বুধবার রামাল্লায় সাধারণ ধর্মঘটেরও ডাক দেওয়া হয়েছে। লেবাননে নিহত হামাসের এই কর্মকর্তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে গতকাল বুধবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। আল-জাজিরার ওই প্রতিবেদনের আলোকে তার সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
কে ছিলেন সালেহ আল-আরৌরি?
৫৭ বছর বয়সী সালেহ আল-আরৌরি ছিলেন ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপ-প্রধান এবং গ্রুপটির সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
১৯৬৬ সালে দখলকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ’র কাছাকাছি আরুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আল-আরৌরি। ইসলামি শরিয়া বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন তিনি।
১৯৮৭ সালে হামাসে যোগ দেন। এরপর তিনি পশ্চিম তীরে সংগঠনটি সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন। ইসরায়েলি কারাগারে ১৫ বছর কাটানোর পর লেবাননে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাসিত জীবনযাপন করছিলেন আরৌরি।
২০১১ সালে ইসরায়েলি সেনা গিলাত শালিতের মুক্তির বিনিময়ে বহু ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্ত করার ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন আরৌরি।
সম্প্রতি, হামাসের একজন মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। গত মাসে এক সাক্ষাৎকারে আল জাজিরাকে তিনি বলেছিলেন, গাজায় ইসরায়েলি অভিযান বন্ধ না হলে বন্দি বিনিময় চুক্তি নিয়ে কোনো প্রকার আলোচনা করবে না হামাস।
২০১৫ সালে তাকে একজন ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে তার সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল মার্কিন সরকার।
৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
আল-আরুরির মৃত্যু সম্পর্কে যা বলেছে ইসরাইল
হামাস এই কর্মকর্তার মৃত্যুর বিষয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যদিও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে নেতানিয়াহুর এক উপদেষ্টা মার্ক রেগেভ মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে বলেছেন, এই হামলার দায় স্বীকার করছেন না ইসরায়েল। তিনি বলেন, তবে ‘যারাই করে থাকুক, তা পরিষ্কার যে এটি লেবানন রাষ্ট্রের ওপর কোনো হামলা নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারাই করেছে, তারা হামাস নেতৃত্বের ওপর সার্জিক্যাল হামলা করেছে।’ এদিকে, এই হামলাকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের সাবেক ইসরায়েলি দূত ড্যানি ড্যানন। আল-আরৌরিকে হত্যার জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনী, শিন বেট, নিরাপত্তা পরিষেবা এবং ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন তিনি। ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার কথা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশিত এক পোস্টে ড্যানি ড্যানন বলেন, ‘৭/১০ গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের জানা উচিত, আমরা তাদের মুখোমুখি হব এবং আমাদের বোঝাপড়া মিটিয়ে নেব।’ হামাসের ওই হামলায় ইসরায়েলের প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন। হামাসের হামলার জবাবে ওইদিনই পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তাদের এ হামলায় এখন পর্যন্ত ২২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। ইসরায়েলি মিডিয়ার মতে, ড্যাননের এই টুইটের পর মন্ত্রীপরিষদের মন্ত্রীদের আল-আরৌরির মৃত্যু সম্পর্কে কোনো সাক্ষাৎকার না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি সরকার।
আল-আরৌরির মৃত্যুতে লেবাননের প্রতিক্রিয়া
বৈরুত শহরতলিতে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি। এই হামলাকে একটি ‘নতুন ইসরায়েলি অপরাধ’ এবং একইসঙ্গে লেবাননকে যুদ্ধে টেনে নেওয়ার প্রচেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। হিজবুল্লাহ বলেছে, লেবাননের রাজধানীতে হামলার বিষয়টি কোনোভাবেই ‘শাস্তি ছাড়া ছেড়ে দেওয়া হবে না।’