পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে বছর ‘২৩

প্রবাহ ডেস্ক : পাকিস্তান ২০২৩ সালে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের বছর কাটিয়েছে। দারিদ্র্য, মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ব বৃদ্ধির সাথে লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য, খাদ্য এবং যথাযথ জীবনযাত্রার অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলেছে দেশটি। গত শুক্রবার প্রকাশিত হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। খবর ডনের। ৭৪০ পৃষ্ঠার ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২৪’-এ এইচআরডব্লিউ ১০০টিরও বেশি দেশে মানবাধিকার অনুশীলন পর্যবেক্ষণ-পর্যালোচনা করেছে। সেখানে তারা পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অতিরিক্ত মিতব্যয়িতা এবং পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণমূলক ব্যবস্থা ছাড়াই ভর্তুকি অপসারণের ফলে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর অতিরিক্ত কষ্ট হয়েছে বলে উল্লেখ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। বৈশ্বিক গড় উষ্ণতার চেয়ে অনেক বেশি তাপমাত্রা বৃদ্ধি হয়েছে, যা চরম জলবায়ু সংকট সৃষ্টি করেছে। একটি স্থানীয় এনজিও অনুসারে, পাকিস্তানের পাঞ্জাবে ২০২৩ সালের প্রথম চার মাসে নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ১০ হাজার ৩শ ৬৫টি মামলা পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে। রিপোর্ট করতে বাধা দেওয়া, সামাজিক নিয়ম এবং পুলিশের নিষ্প্রভ প্রতিক্রিয়ার কারণে ঘটনার প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে। পাকিস্তানে ধর্ষণের জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার তিন শতাংশেরও কম। পাকিস্তানে ৬০ লাখের বেশি প্রাথমিক স্কুল-বয়সী শিশু এবং ১ কোটি ৩০ লাখ মাধ্যমিক স্কুল বয়সের শিশু স্কুলের বাইরে ছিল, যাদের বেশিরভাগই মেয়ে। এইচআরডব্লিউ বলছে, স্কুলের অভাব, পড়াশোনার খরচ, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম এবং লিঙ্গ বৈষম্যসহ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরাই স্কুল থেকে দূরে ছিল। মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা বন্দিদের প্রায়ই উপহাস করা হয় এবং সেবা দিতে অস্বীকার করা হয়। কারাগারে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে এবং কারা কর্তৃপক্ষ মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যে কোনো রিপোর্টকে সন্দেহের চোখে দেখে। হিজড়া নারীরাও বিশেষ করে খাইবার, পাখতুনখোয়ায় আক্রমণের শিকার হয়েছেন। ২০১৮ সালের হিসাবে পাকিস্তানের ২৩ কোটি মানুষের প্রায় ৩৭ শতাংশ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৮৯ লাখ পরিবার সহায়তা পেয়েছে। এইচআরডব্লিউ বলেছে, এশিয়ার দেশগুলোর সরকার কর্তৃক ক্রমবর্ধমান দমন-পীড়ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকারকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে। এশিয়ায় ইউরোপ, আফ্রিকা ও আমেরিকার মতো মানবাধিকারের মান রক্ষার্থে অর্থবহ মানবাধিকার সনদ বা আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে। ক্ষতিপূরণমূলক ব্যবস্থা ব্যতীত ভর্তুকি অপসারণের ফলে আইএমএফের নীতি নিম্ন-আয়ের জনগোষ্ঠীর কষ্ট বাড়িয়ে দেয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গণমাধ্যমের ওপর সরকারী হুমকি-হামলা সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের গোষ্ঠীর মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। এজন্য অনেকে নিজেনিজে সেন্সরশিপের আশ্রয় নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা বিচার বিভাগের সমালোচনা না করার জন্য গণমাধ্যমকে চাপ বা হুমকি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।