খুলনা-৪ : আওয়ামী লীগের ১০ : বিএনপিসহ অন্যান্য দল গতিহীন!
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান ঃ ভৈরব-রুপসা-আঠারোবেকি ও আঁতাই নদীর পাড় ঘেঁষা তেরখাদা, রূপসা ও দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ে খুলনা-৪ আসন। আসছে নতুন বছরেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সারাদেশের মত খুলনা-৪ আসনেও নির্বাচনের হাওয়া বইছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে দলীয় নেতাকর্মীদের কদর বেড়েছে বহুগুণে। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদীসহ ১০জন। মনোনয়ন পেতে দলীয় হাইকমান্ডে লবিংসহ মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক গণসংযোগ করছেন তারা। আসনটি টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের দখলে। এ আসনটিতে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই পদচারণা বাড়াচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নির্বাচনের আগে ভাগেই সক্রিয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। জনগণের পাশাপাশি নিজ দলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা, প্রচার-প্রচারণা, উঠান বৈঠক, সরকারের উন্নয়ন প্রচারণা, গণসংযোগসহ সামাজিক অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণ বেড়েছে। তবে এ আসনে ভোটারদের প্রতিক্রিয়া এবার কিছুটা ভিন্ন। সবাই আশা করছেন এবার নির্বাচনের মাঠ বেশ জমজমাট এবং প্রতিযোগিতামূলক হবে। অপরদিকে, আন্দোলনে থাকা বিএনপি এখন নির্বাচন নিয়ে ভাবছেনা বলে জানিয়েছেন দলটির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। অনিশ্চয়তা থাকায় নির্বাচন ঘিরে বিএনপির তেমন তোড়জোড় শুরু হয়নি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলের প্রার্থীদের ভোটের মাঠে তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি এখন দলীয় কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ। বিগত নির্বাচনের তথ্য থেকে জানা যায়, এ আসনটি ১৯৮৯ সালে মুসলিম লীগ অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিল। যার ফলশ্রুতিতে মুসলিম লীগ পন্থিরা সব সময় আওয়ামী লীগ বিরোধী একটা মনোভাব পোষণ করতেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে প্রয়াত এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা আসনটিতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এই আসনটিকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী প্রয়াত এম. নুরুল ইসলাম দাদুভাই আসনটি পুনঃদখলে নেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসন হতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোল্যা জালাল উদ্দিন পেয়েছিলেন ১ লাখ ৯ হাজার ২১৬টি। তবে নিকটতম প্রতিদ্বন্দী বিএনপি প্রার্থী শরীফ শাহ কামাল তাজ পেয়েছিলেন ৯৬ হাজার ৫৪৩টি ভোট। স্বাধীনতা উত্তর ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের শেখ আব্দুল আজিজ, ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের আব্দুল মতিন খান, ১৯৮৬ সালে আট দলীয় জোটের শরীক দল ওয়ার্কার্স পার্টির মরহুম শেখ সাইদুর রহমান, ১৯৮৮ সালের জাতীয় পার্টির মোক্তার হোসেন জয়লাভ করেন। এরপর থেকে আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়নি। যার কারণে আসনটিতে সব সময় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী হয়। প্রয়াত এমপি এসএম মোস্তফা রশিদী সুজার মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শিল্পপতি তারকা ফুটবলার আব্দুস সালাম মূর্শেদী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আব্দুস সালাম মূর্শেদী দ্বিতীয় বারের মত মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। তবে আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগর মনোনয়ন দৌড়ে ৯জন তৎপর।
এমপি সালাম মূর্শেদীর বাইরেও এখানে মনোনয়ন চান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত অধিকারী, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তেরখাদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ শরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামরুজ্জামান জামাল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রয়াত এসএম মোস্তফা রশিদী সুজার পুত্র এসএম খালেদিন রশিদী সুকর্ণ, খুলনা মহানগর যুবলীগের সভাপতি সফিকুর রহমান পলাশ, স্পেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রিজভী আলম, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য মো. নূর আলম মিয়া, শেখ মারুফ হাসান ও শিবাজী ফকির। অপরদিকে, দল নির্বাচনে অংশ নিলে এবার মনোনয়ন চাইতে পারেন বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শরীফ শাহ্ কামাল তাজ ও যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পারভেজ মল্লিক। মামলায় সাজা না হলে আজিজুল বারী হেলালও প্রার্থী হতেন। এছাড়াও নির্বাচনে অংশগ্রহণ সাপেক্ষে এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর খুলনা জেলা শাখার নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, জাতীয় পার্টির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এম হাদিউজ্জামান, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. সৈয়দ আবুল কাশেম ও বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ। খুলনা-৪ আসনের এমপি আব্দুস সালাম মূর্শেদী বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ আমাকে এমপি নির্বাচিত করে যে গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন আমি সেই দায়িত্ব বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেও আগামী দিনেও এই ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ শরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু বলেন, ২৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগে আছি। ১০ বছর উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। তৃণমূলের মানুষের পাশে থেকে তাদের জন্য কাজ করেছি। সাধারণ মানুষ আমাকে এমপি হিসেবে দেখতে চান। এজন্য আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী।