স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে অসাধু ব্যবসায়ীদের কালো হাত

পেঁয়াজ মজুদকারীদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকারের অভিযান, দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা, দুপুরে অভিযান বিকেলে (পাইকারি) কেজিতে কমলো ৫০ টাকা

কামরুল হোসেন মনি ঃ সারাদেশের ন্যায় খুলনায়ও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিও কারসাজিতে অসাধু ব্যবসায়িদের কালো হাত পড়েছে। তাদের কালো হাতের থাবায় পেঁয়াজের দাম ৩ গুণ বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ গত ৫ দিন ধরে নাজেহাল হচ্ছে। এমন সময় বিষয়টি নিয়ে জন উদ্বেগ দেখা দেওয়ায় খুলনায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নড়েচড়ে বসে। গতকাল নগরীর সোনাডাঙ্গা ট্রাকস্ট্যান্ড পাইকারি কাঁচা বাজার ও নিউ মার্কেট ( খুচরা) কাঁচা বাজারে অভিযান চালিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ খুলনা অধিদপ্তর। অধিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি ও ক্রয় রশিদ সংরক্ষণ না করাসহ বিভিন্ন অপরাধে দুই বাজারের দুই ব্যবসায়ীকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে ট্র্যাকস্ট্যান্ড পাইকারি বাজারে মেসার্স আর আর বাণিজ্য ভান্ডারকে ৫ হাজার টাকা এবং নিউ মার্কেট কাঁচা বাজারে মোঃ আফসান স্টোরকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গতকাল দুপুরে এ অভিযানে নেতৃত্বদেন ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম। এই অভিযানে ২-৩ ঘন্টার মধ্যে অন্য পাইকারি কাঁচাবাজারে পেয়াজের দাম কেজিতে ৫০ টাকায় কমলো। অভিযানের পর এই প্রতিবেদক কয়েকটি পাইকারি কাঁচা বাজারে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছেন। তবে খুচরা বাজারে দাম আগের মতোই আছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর নিউ মার্কেট কাচা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ (পুরাতন) কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। বিক্রেতা ফারুক জানান, রোববার ( ১০ ডিসেম্বর) পাইকারি কাঁচা বাজারে আল্লার দান ভান্ডার থেকে কেজিতে পেঁয়াজ কিনেছি ২১১ টাকায়। এখন বিক্রি করছি ২২০ টাকায়। কারণ এর মধ্যে আনা নেওয়া খরচ বাদ দিয়ে ৫-৭ টাকা কেজিতে লাভ থাকে। ভোক্তার অধিকারের অভিযানে ‘স্যাররা’ আমার ক্রয় রশিদ দেখেছেন। আমি এই দামে বিক্রি করলে কোন সমস্যা নেই। আল্লার দান ভান্ডারের মালিক মো: ইসমাইল হোসেন বলেন, আমি এখন দেশের বাড়িতে অবস্থান করছি, দাম কতো যাচ্ছে জানি না। তবে গত সপ্তাহে অর্থাৎ ( বুধ-বৃহ:) আমি দেশি পেঁয়াজ ( পুরাতন) পাইকারি কেজিতে ৯০-১০০ টাকায় দরে বিক্রি করছি। এখন বিক্রি করছি কতো আমার জানা নেই। রোববার ২১১ টাকায় কেজিতে বিক্রি করা হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন ভারতে পেঁয়াজ আমদানী বন্ধ ঘোষনা ও খুলনায় বৃষ্টির কারণে দাম বেড়েছে। কেজিতে ১১০ টাকা বৃদ্ধির কারন জানতে চাইলে তিনি নানান অজুহাত তুলে ধরেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, এখন নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে দাম কমে যাবেনে। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ পাইকারি মোকামগুলোতে পেঁয়াজ আনতে গেলে বলে পেঁয়াজ শেষ, যদি বেশি দামে নিতে পারলে ব্যবস্থা করে দিতে পারবো। আমরা যেই দামে কিনে আনছি’ তার চেয়ে কেজিতে ৫-৮ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছি। ক্রেতা মো: হাসিবুর রহমান বলেন, গত রোববার- সোমবার শেখপাড়া বাজারে আমদানিকৃত পেঁয়াজ (বড়) কেজিতে ১২০ টাকায় কিনেছেন। গতকালই সেই পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ১৮০ টাকায়। কেজিতে বেড়েছে ৬০ টাকায়। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী মজুদ করে এই দাম বাড়িয়েছে। তিনি এদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান জোরদার করার দাবি জানান।
শেখপাড়া বাজারে গত বৃহস্পতিবার দেশি পেঁয়াজ কেজিতে মান ভেদে খুচরা বিক্রি হচ্ছিলো ১১০-১২০ টাকা। গতকাল বিকেলে বিক্রি হয়েছে ২২০-২৪০ টাকা। আমদানীকৃত পেঁয়াজ ৯০-১০০ টাকার পরিবর্তে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে দেশি পেঁয়াজের (পুরাতন) দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা এবং আমদানীকৃত পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৭০ টাকা। এছাড়া নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায় কেজিতে। নিউ মার্কেটে খুচরা বাজারে কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে (পুরাতন) ২২০ টাকা পূর্বে ছিলো ১০০-৯০ টাকা। আমদানীকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। নগরীর ট্রাক স্ট্যান্ড পাইকারি কাঁচা বাজারে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দেশি পেঁয়াজ (পুরনো) নিউ ফারাজি ভান্ডার কেজিতে বিক্রি করছেন ২২০ টাকা এবং আমদানীকৃত পেঁয়াজ ১৫০ টাকা এবং দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। তবে মিডিয়া কর্মী পরিচয় পাওয়ার পর সুর পাল্টে যায়। মেহরাব ভান্ডারের মালিক টি এম আরিফ বলেন, ওই বিক্রি তালিকা ছিলো সকালের এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। বললেন, তিনি বলেন, ওই দাম ছিলো সকালে। ঘন্টায় ঘন্টায় দাম ওঠা-নামা করে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, ভারতে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ঘোষণা ও বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তবে এক লাফে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০০-১১০ টাকা বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। নগরীর রেলস্টেশন সংলগ্ন পাইকারি আড়তে বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, এক আড়তে দেশি পেঁয়াজ (পুরাতন) কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা। অন্য আড়াতে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। তবে পাইকারি ও খুচরা বাজারের একেক দোকানে একক দাম লক্ষ্য করা গেছে। তবে খুচরা বাজারে কোন মূল্য তালিকা টানানো দেখা যায়নি। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা খুলনায় নগরীর দুই বাজারে অভিযান চালিয়েছি। অভিযানে ব্যবসায়ীরা ক্রয়-বিক্রয়ের রশিদ দেখাতে না পারা ও প্রদর্শিত মূল্য তালিকায় গরমিল করাসহ বিভিন্ন অপরাধে দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়। তারা মূল্যবৃদ্ধি করে ভোক্তাদের কষ্ট দিচ্ছে। জনস্বার্থে এরূপ অভিযান চলমান থাকবে। অভিযানে তার সাথে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ ওয়ালিদ বিন হাবিব এবং সোনাডাঙ্গা থানার একটি চৌকস টিম।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button