স্থানীয় সংবাদ

বিজয়দিনে গ্লানিমুক্ত হোক বাংলাদেশ

নুরুন্নাহার শিরীন
ডিসেম্বর। এদেশের শৃ´খলমুক্তির আনন্দ মাস। একই সঙ্গে বেদনা জাগানিয়াও। কত যে বেদনা কত যে জখমিত মেঘের মতো রক্তাক্ত বেদনার ভার বয়ে বেড়াচ্ছে আজও এদেশের অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার তার কোনও পরিমাপ নেই। বেঁচে থাকা যুদ্ধাহতদেরও নিরন্তর যুদ্ধ করতে হচ্ছে জীবন-জীবিকার জন্য। অথচ অন্যরকম সম্মানিত জীবন কিন্তু প্রাপ্য ছিল তাদের। জীবনবাজি যুদ্ধ করে এই দেশকে যারা মুক্ত করেছে তাদেরকে তাদের প্রাপ্য সম্মানিত সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা বিধান করা উচিত ছিল রাষ্ট্রের। আমাদের দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতার হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সমস্ত সুফল প্রাপ্তি থেকে প্রায় সদ্য স্বাধীন এই দেশটিকে স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরের মাথায় ঠেলে দেয়া হয় বিপর্যয়ের অন্ধকারে। যে অন্ধকার ভেদ করে আলোয় ফেরা ছিল বিস্তর অপালন আর মিথ্যের সঙ্গে কঠিন সংগ্রামের পথে আরও অনেক বছর … আমাদের কোনও জয়ই যে সহজে আসেনি সে তথ্য ইতিহাস জানে … আর জানে আমাদের সত্যাশ্রয়ী বিবেক যারা যুদ্ধদিনের প্রকৃত সত্যচিত্র এই দেশটির বাংলাদেশ হয়ে ওঠার ইতিহাস সতত হৃদয়ে ধারণ করে আছি। বঙ্গবন্ধুহীন যেমন বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটির জন্ম হতো না, তেমনই মুক্তিযোদ্ধাহীন বিজয় আসত না কোনওদিন এই সত্য মানে না কেবল এদেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাষ্ট্রদ্রোহী চক্র। এখন সময় এসেছে রাষ্ট্রদ্রোহীদের যথার্থ বিচারিক প্রক্রিয়ায় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গর্হিত অপরাধ কবুল করবার। এবং একইসঙ্গে এতকালের যত মিথ্যের বেসাতি চলেছে তার অবসানকল্পে সঠিক নীতিমালা প্রণয়নের। যাতে আগামীতে কেউ আর জাতিকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ না পায়। আজ আমাদের নিজস্ব জাতিগত বিবেকের মুখোমুখি হওয়ার দিন। আসুন আমরা সকলে আমাদের একটাই অজর ইতিহাস পড়ি … প্রিয় সন্তান আর প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করি … জানাই বঙ্গবন্ধু ও লক্ষ বীরের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের বিজয়গাথা। যে গাথায় লুকোনো লক্ষ মায়ের-বোনের-ভায়ের রক্তজলভেজা জলছবিমালা তাকে যেন আমরা অবহেলায় হারিয়ে যেতে না দিই আর। এমনিতেই বহু বছরের বহুবিধ অন্যায়ে নষ্ট হয়েছে বহু অমূল্য নথিপত্র যা উদ্ধারের সন্তাবনা ক্ষীণ বলা যায়, তো, আসুন আমরা অন্তত আমাদের জাতিগত স্বার্থের ক্ষেত্রে অভিন্নতা-পাশে আবদ্ধ হই আবারও যেরকম একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর ডাকে হয়েছিলাম। দীর্ঘকাল পরে প্রিয় বাংলাদেশ আজ গণতান্ত্রিক পথে শিশুপ্রায় বলা যায়, সে যেন আর কোনও অশুভ-অশনি-চক্রের শিকার না হয়। কোনও অপালনের খপ্পরে না পড়ে। সচেতন জনগোষ্ঠীর কাছে এ আমার একান্ত আবেদন। এবং সরকারের কাছে আবেদন রাখছি : অবহেলিত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবার যেন সকল রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পায় তার সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন করে তার জরুরি প্রয়োগের কাজে যেন আর অবহেলা না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আজই নির্দেশ দেয়া হোক। আরও এক জরুরি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন রাখছি : এদেশের সকল বীরাঙ্গনার তালিকা করে তাদেরকেও মুক্তিযোদ্ধার সম্মানে ভূষিত করা হোক। যদিও তাদের সঠিক পরিসংখ্যান নেই, তথাপি যতটা সম্ভব উদ্যোগ নিয়ে তাদের সম্মানিত করলে তা হবে জাতীয় এক মহান দৃষ্টান্ত এবং তবেই কেবল মহান বিজয়দিনে গ্লানিমুক্তি ঘটবে আমাদের। তাদের ত্যাগের কোনও মূল্যায়ন হয় না জানি তবুও মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় সম্মান তাদেরও প্রাপ্য বলেই বিশ্বাস। তা বাস্তবায়িত হলে প্রজন্ম তাদের গৌরবগাথার প্রতি সম্মান জানাতে কুণ্ঠিত হবে না নিশ্চয়। আরও একটি বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মনোযোগ কাম্য : সুদীর্ঘ কালের বেদনা গুমড়ানো এক ইতিহাস আমরা রক্তাক্ত বয়ে যাচ্ছি, তা এই, বিজয়ের ঠিক দু’দিন আগে আমাদের জাতীয় বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞের নৃশংস অধ্যায়, জাতি আজ সেইসব চিহ্নিত খুনীর উচিত শাস্তি দেখতে চায়, তা যেন দ্রুত কার্যকর হয়। জয়বাংলা। চিরজয়ী হোক প্রিয় বাংলাদেশ।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button