স্থানীয় সংবাদ

টুটপাড়ার কিশোর গ্যাং লিডার আব্দুল্লাহ ফের অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার

আব্দুল্লাহ, সোহাগ ও সোহেল মিলে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার স্বীকারোক্তি, মাদক ও চাঁদাবাজিসহ ৯ মামলার আসামি
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম

স্টাফ রিপোর্টার ঃ নগরীর দক্ষিণ টুটপাড়া এলাকার আলোচিত কিশোর গ্যাং লিডার আব্দুল্লাহ ওরফে আব্দুল্লাহ আল মামুনকে (২৩) আবারও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে একটি অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। এ সময় মোঃ সোহাগ হোসেন (৩৫) নামে তার এক সহযোগিকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত সন্ত্রাসী আব্দুল্লাহ’র বিরুদ্ধে ৯টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি আব্দুল্লাহ নগরীর দক্ষিণ টুটপাড়া ছোট খালপাড়স্থ বায়তুল আমান মসজিদ সড়কের বাসিন্দা মোঃ জাহাঙ্গীর বাবুর্চির পুত্র। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) কেএমপি’র সদর দপ্তরস্থ সম্মেলন কক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। এ নিয়ে কেএমপি’র চলমান সাঁড়াশী অভিযানে ২১ টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৪৮ রাউন্ড গুলি, ২৫ টি চোরাই মোটরসাইকেল এবং বেশ কয়েকটি ককটেল, গান পাউডার, চাপাতি, রাম দা, ছোরা ও চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন ধরণের আলামত উদ্ধার করে। প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, রোববার (২৮ জানুয়ারি) রাত ১২টারদিকে কেএমপি’র লবণচরা থানা পুলিশের একটি টিম স্থানীয় আমতলা মদিনাবাদ উকিলের কালভার্টের সামনে চেকপোস্ট ডিউটিতে ছিল। এ সময় সন্দেহবশত তারা সন্ত্রাসী সোহাগ হোসেনকে আটক করে তার প্যান্টের পকেট থেকে ২ রাউন্ড পিস্তলের গুলি উদ্ধার করে। সে নগরীর ইসলামপাড়া ২য় গলি (বাচ্চু মিয়ার বাড়ীর ভাড়াটিয়া) মোঃ মানিকের পুত্র। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোঃ সোহাগ হোসেন জানায়, উক্ত ২ রাউন্ড গুলি সে কিশোর গ্যাং লিডার মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছ থেকে ক্রয় করেছে এবং আব্দুল্লাহ’র কাছে ১টি বিদেশী পিস্তল ও আরও গুলি রয়েছে। তাকে নিয়ে রাত দেড়টার দিকে পুলিশ বড় খালপাড় সংলগ্ন আর্জুর কালভার্ট এলাকা থেকে সন্ত্রাসী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুল্লাহ জানায়, লবণচরা থানাধীন খান বাহাদুর সড়কস্থ মতি মিয়ার মিলের উত্তর পাশে সোহেল ওরফে পালসার সোহেল এর নির্মাণাধীন ১তলা ভবনের ভিতরে ২ রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশী পিস্তল লুকিয়ে রাখা আছে। ওই পিস্তলটি সে নিজে এবং সোহাগ ও সোহেল মিলে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যবহার করে। তার দেওয়া তথ্য মোতাবেক পুলিশ লবণচরা থানাধীন খান বাহাদুর সড়কস্থ মতি মিয়ার মিলের উত্তর পাশে সোহেল ওরফে পালসার সোহেলের নির্মাণাধীন ১তলা ভবনে অভিযান চালায়। তবে ভবনটি তালাবদ্ধ থাকায় পুলিশ স্থানীয় জনসাধারণ ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ভবনের তালা ভেঙ্গে প্রবেশ করে আসামি আব্দুল্লাহ আল মামুনের দেখানো মতে নির্মানাধীন একতলা ভবন এর দক্ষিণ-পূর্ব পাশের রুমের ভিতরে মেঝের বালুর নিচে সিমেন্টের বস্তার মধ্যে নীল রংয়ের পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় ১টি বিদেশী পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি ও ১টি ম্যাগজিনসহ লোড করা অবস্থায় পিস্তলটি উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে লবণচরা থানায় ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া পলাতক আসামি সোহেল ওরফে পালসার সোহেলকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশ জানায়, আসামি মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুনের মূল পেশা মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, ভূমি দখলবাজ ও চাঁদাবাজি। তার পিতা একজন বাবুর্চি। সে ছোটবেলা থেকে খুলনা সদর থানার চাঁনমারি ও মতিয়াখালি এলাকায় বেড়ে উঠেছে। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মারামারি ও মাদকসহ ফৌজদারি আইনে ৯টি মামলা রয়েছে।
জানা গেছে, সন্ত্রাসী আব্দুল্লাহ এর আগেও একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিল। তার কিশোর গ্যাং’র অন্যতম সদস্য স্থানীয় গেদনপাড়া এলাকার মৃত ইদ্রিস শেখের ছেলে নাদিম হোসেন (২২), সৌরভ, ছোট মেহেদী, ফিরোজ, নয়ন, পলাশ, হাফিজুল, হিরা, তারেক, অভি ও সাইফুলসহ ১০-১৫ জন। অপর আসামি মোঃ সোহাগ হোসেনের মূল পেশা মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, ভূমি দখলবাজ, চাঁদাবাজি। তার পিতা একজন শ্রমিক। সে লবণচরা ও খুলনা সদর থানা এলাকায় বেড়ে উঠেছে। সে গ্রেনেড বাবুর অনুসারি। এছাড়া পলাতক আসামি সোহেল ওরফে পালসার সোহেল খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী আশিক গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। মিডিয়া বিফ্রিংয়ে কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম বলেন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং নগরবাসীর সেবায় সর্বদা তৎপর। এরই অংশ হিসেবে অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী, জঙ্গী, মাদক ব্যবসায়ী, সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানাভুক্ত ও হত্যাকান্ডে জড়িত আসামি এবং ভূমিদস্যুসহ সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তিশালীদের গ্রেফতারের জন্য সাঁড়াশী অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় গত আগস্ট মাস থেকে ইতোমধ্যেই ২১ টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৪৮ রাউন্ড গুলি, ২৫ টি চোরাই মোটরসাইকেল এবং বেশ কয়েকটি ককটেল, গান পাউডার, চাপাতি, রাম দা, ছোরা ও চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার এবং ক্লু-লেস হত্যা মমলার মূল রহস্য উদঘাটনসহ আসামি গ্রেফতার, চোরাই স্বর্ণালঙ্কার ও বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মিডিয়া বিফ্রিংয়ে কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক এন্ড প্রটোকল অতিঃ দায়িত্বে ক্রাইম) মোছাঃ তাসলিমা খাতুন; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম; অতিঃ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) পলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন্ হাছান, পিপিএম-সেবা; সহকারী পুলিশ কমিশনার (খুলনা জোন) রুবাইয়াত সানজিদ হোসেন; লবণচরা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button