দরজা ভাঙ্গা নোংরা দুর্গন্ধময় : ওয়ার্ডে ঢুকতেই দুর্গন্ধে বমি আসে
খুমেক হাসপাতালে অনিয়ম-অবহেলা চরমে, দেখার কেউ নেই (পর্ব-৩)
সংকটে হারপিক, ভিক্সল, হ্যান্ডওয়াশ, ফিনাইল, সাবান, ডিটারজেন্ট সামগ্রী, রোগ সারাতে গিয়ে আরেক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে রোগীরা
কামরুল হোসেন মনি ঃ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গোসলখানা ও শৌচাগারগুলোতে। পানি জমে মেঝে পিচ্ছিল, কোনটার দরজা ভাঙ্গা, কোনটির আবার কপাটই নেই। বাথরুমের ছাদ থেকে পানি পড়ে, দেয়াল স্যাঁতসেঁতে। ময়লা নোংরা দুর্গন্ধময় পরিবেশ। এই দশা হাসপাতালের রোগীদের জন্য তৈরি গোসলখানা ও শৌচাগারগুলো। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা আর অবহেলার কারণে সরকারি হাসপাতালে রোগ সারাতে গিয়ে আরেক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে রোগীরা। তবে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বলছেন, গোসলখানা ও শৌচারগারগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য যেসব সামগ্রী প্রয়োজন তা সংকট রয়েছে। আগামী সপ্তাহ এ সংকট দুর হবে বলে আশাবাদি। গত মঙ্গলবার দেখা গেছে, একাধিক ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, গোসলখানা স্যাঁতস্যাঁতে, শৌচারগুলো ময়লা ভর্তি। ওয়ার্ডে ঢোকার আগে ময়লা ড্রামগুলো ময়লা-আবর্জনা ভরে উপচে পড়ছে। মেডিসিন ইউনিটসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে অধিকাংশই গোসলখানা ও শৌচাগার বেহাল। পানি পড়তে পড়তে সেগুলো স্যাঁতস্যাতে হয়ে গেছে। মেঝেগুলো নোংরা-অপরিস্কার। শৌচাগারের দরজার নিচের অংশ ভাঙ্গা, ছাদ থেকে টিপটিপ করে পানি পড়ছে। দ্বিতীয় তলায় বহির্বিভাগে সাধারন রোগীদের ব্যবহার জন্য শৌচারগুলো ঢুকতে গেলেই নাকে রুমাল চেপে ঢুকতে হয়। এখানেও ওপর থেকে পানি পড়ে। অনেক টয়লেটের প্যান উপচে পড়ছে ময়লা পানি। রোগীদের বেডের বিছানো চাদরগুলোও নোংরা ; কারণ ডিটারজেন্ট সঙ্কট। ওয়ার্ডগুলোর মেঝেতে টিস্যু, ফলের খোসা, তুলা, কাগজের টুকরো যেখানে সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ভবনগুলোর দেয়ালও নোংরা। যেখানে সেখানে কফ থুতু পানের পিকের ছোপ ছোপ দাগ। কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও ঠিকমতো কাজ করে না। তারা শুধু লোক দেখানো পরিষ্কার করে। তারা তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করলে হাসপাতাল আরও বেশি পরিষ্কার থাকত। খুমেক হাসপাতালের সূত্র মতে, দীর্ঘ ৩-৪ মাস ধরে টয়লেট ও মেঝে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য হারপিক, ফিনাইল, ভিক্সল সংকট রয়েছে। আগে প্রতিমাসে ওই সব ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দ থাকতো ৪টা করে। এখন প্রতিমাসে দেওয়া হচ্ছে একটি করে। এছাড়া পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সময়মতো ড্রামের ময়লাগুলোও পরিস্কার রাখে না। ময়লাগুলো ভরে উপচে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিভিন্ন ওয়ার্ডে একাধিক রোগীরা বলেন, এই হাসপাতালে দুর্গন্ধে থাকা যায় না। টয়লেট ও বেড নোংরা, আছে ছারপোকাও। টয়লেটে যাওয়া যায় না দুর্গন্ধের কারণে। সুস্থ হচ্ছি নাকি অসুস্থ বুঝতেছি না। চিকিৎসকদের মতে, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যেসব জায়গায় মানুষের নিয়মিত চলাচল আছে, সেখানে আবর্জনা ফেলা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। এ ব্যাপারে খুমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: মো: হুসাইন শাফায়াত এ প্রতিবেদককে বলেন, দীর্ঘদিন ওই সব ক্রয়ের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ ছিলো। এখন টেন্ডার হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহ থেকে আর সংকট থাকবে না বলে তিনি আশাবাদি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ঠিকাদারের মাধ্যমে চতুর্থশ্রেণীর কর্মচারিদের কাজ করানো হয়। কিন্তু ঠিকাদারের কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে ওইসব পরিচ্ছন্ন কর্মীর কাজ ঠিকমত কাজ করছে না। অল্প সময়ের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ হয়ে গেলেই এই সমস্যা আর থাকবে না।