স্থানীয় সংবাদ

বন বিভাগের ৩৩ শর্তে সুন্দরবনের রাজস্ব আদায়ের কার্যক্রম গেলো বেসরকারী খাতে

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি ঃ কর্তৃপক্ষের ৩৩ শর্তে সুন্দরবনের পর্যটক স্পট ও বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রের রাজস্ব আদায়ের কার্যক্রম বেসরকারী খাতে ছেড়ে দিয়েছে বন বিভাগ। ১ জানুয়ারী থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে ৩০ লক্ষ টাকার চুক্তিতে দেশী-বিদেশী পর্যটক আগমনের প্রবেশ ফি ও রাজস্ব আদায় করবে একটি ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠান বলে বন বিভাগ পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে ট্যুর ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা বলছে, বন বিভাগের এ পদক্ষেপে রাজস্ব আদায় বাড়লেও পর্যটদের সাথে ইজারাদারের আচারনে ভবিষ্যতে দর্শনার্থী আগমন কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বন বিভাগ সুত্রে জানায়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, প্রকৃতির অপরুপ সেই নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পর্যটক আগমন মৌসুমে সুন্দরবনের করমজল, হারবাড়িয়া, আন্দারমানিক, দুবলা, কটকা, কচিখালী, নীলকমলসহ সমুদ্র তীরবর্তী বনাঞ্চলের ৭টি পর্যটক স্পটে দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে এক ধরনের মিলন মেলায় পরিণত হয়। বনের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা ও বন্যপ্রানী দেখতে একটি নির্দিষ্ট রাজস্ব দিয়ে দেশ-বিদেশী দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে হয় সুন্দরবনে। পর্যটক স্পটগুলো শুরু থেকেই বনের প্রবেশ ফি ও অন্যান্য রাজস্ব আদায় করে আসছিল প্রতিটি স্পটের বন রক্ষীরা। কিন্ত বন বিভাগের এক সিদ্ধান্তে গত বছরের ১৮ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৭টি স্পটের মধ্যে করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রের পর্যটকদের প্রবেশ ফি ও সার্ভিস চার্জ আদায়রে জন্য ১১ নভেম্বর সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়ায় “মেসার্স ইমন মেডিকেল হল এন্ড ঠিকাদার” নামের এক প্রতিষ্ঠানকে ইজারাদার প্রদান করা। ভ্যাট ও আইটি বাদে ৩০ লক্ষ টাকা রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া বন্যপ্রানী ও মৎস্য প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে ৩ মাস পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রাখা, বন্যপ্রানীদের কোন খাবার না দেয়া, শব্দ দুষণ না করা, বনের মধ্যে প্লাষ্টিক বর্জ্য না ফেলা, নির্ধারিত প্রবেশ ফি দেশী পর্যটক-৪৬ ও বিদেশী পর্যটক- ৫৭৫ টাকা, ভিডিও ক্যামেরা দেশী-৩৪৫, বিদেশী-৫৭৫ টাকা সহ আনুসাঙ্গিক ৩৩টি শর্ত বেধে দিয়ে এক বছরের জন্য ইজারা প্রদান করা হয়। যা ১ জানুয়ারী থেকে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেধে দেয় বন বিভাগ। ১ জানুয়ারী থেকে সুন্দরবনের করমজল ও বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রের রাজস্ব আদায় শুরু করে ইজারাদার “মেসার্স ইমন মেডিকেল হল এন্ড ঠিকাদার” প্রতিষ্ঠান। রাজস্ব খাতটি ছেড়ে দেয়ায় ব্যক্তি মালিকানায় সরকারী রাজস্ব বৃদ্ধি পেলে ও পর্যটক আগমন হ্রাস ও এর সাথে সংশ্লিষ্টরা চরম ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। ইজারাদার পক্ষের প্রতিনিধি জি এম রফিকুল হাসান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান ৩০ লক্ষ টাকায় ইজারা নিয়েছি। এর সাথে ভ্যাট ও আইটি রয়েছে , তাতে প্রায় আরো ৫ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। এছাড়া এ কাজে ১২ জন কর্মচারী কাজ করছে, তাদের জন্য প্রতি মাসে বেতন ও অন্যান্য খাতে ২ লাখ টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে চলতি মৌসুমে পর্যটকের সংখ্যা কম। তার পরেও আমাদের লক্ষমাত্রার পরিপূর্ণ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা এবং বন বিভাগ মিলে মিশে কাজ করতে পারলে একটি ভাল সুফল আসবে বলেও জানায় তিনি। খুলনা জোনের ট্যুরিষ্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার দেবব্রত সরকার বলেন, পর্যটকদের আগামন বাড়াতে এবং তাদের নিরাপত্তায় কাজ করছে ট্যুরিষ্ট পুলিশের পৃথক টিম। ২০২৩ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যটক কম হওয়ার পরেও করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যটক স্পট থেকে প্রায় ২৪ লাখ ১১ হাজার ৫৭৩ টাকা রাজস্ব আয় করেছিল বন বিভাগ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button