স্থানীয় সংবাদ

স্ত্রীর জন্য গয়না বানাতে গিয়ে ফেরা হলো না বিশ্বজিতের

স্টাফ রিপোর্টারঃ খুলনার ডুমুরিয়ার ইজিবাইকচালক বিশ্বজিৎ তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চুকনগরে এক স্বর্ণকারের কাছে যান। উদ্দেশ্য ছিল স্ত্রী অন্তিমার জন্য লাল পয়সার গয়না বানানো। শনিবার বেলা ১১টায় বের হয়ে বিকালে বিশ্বজিৎ ফেরেন লাশ হয়ে। আর বিশ্বজিতের স্ত্রী এখন মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন হাসপাতালে। খুলনা সাতক্ষীরা মহাসড়কে এসে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও ইটবাহী ট্রাকের সংঘর্ষে আর ফেরা হলো না বিশ্বজিতের। বিশ্বজিতের সঙ্গে ইজিবাইকে থাকা মেয়ে অর্নি বিশ্বাস, শাশুড়ি অমরী ঢালী, শ্যালকের স্ত্রী নিপা ঢালী ও যাত্রী সাব্বির মারা গেছেন। আহত হয়েছে শ্যালকের ছেলে অর্জিত ঢালী। বিশ্বজিতের দাদি শাশুড়ি সবিতা ঢালী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই অন্তিমার বায়না ছিল লাল পয়সার গয়নার। এই গয়নার নকশার জন্যই নিপাকে ফোনে খুলনা থেকে ডেকে আনে অন্তিমা। এরপর বেলা ১১টার দিকে তারা বিশ্বজিতের ইজিবাইকে চড়ে চুকনগর যায়। এরপর যে কীভাবে কি হলো তা আর জানি না।’ বিশ্বজিতের চাচি পরশ্রী বিশ্বাস বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিশ্বজিৎ চুকনগরের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। বিকালে খবর আসে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আমরা বিমর্ষ।’ শোভনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত বৈদ্য বলেন, ‘বিশ্বজিত চুকনগর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্বজিৎসহ পরিবারের ৪ জন ও একজন যাত্রী মারা গেছেন।’ এদিকে, বিশ্বজিতের আহত স্ত্রী অন্তিমা বিশ্বাস খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আর বিশ্বজিতের শ্যালকের ছেলে অর্জিত ঢালীকে খুমেক হাসপাতাল থেকে একটি ক্লিনিকে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকালে ট্রাক থেকে ইট নামিয়ে সাজু আহম্মেদ নামে এক ড্রাইভার ট্রাকটি চালিয়ে ডুমুরিয়া উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত পুষ্পক সরদার এমএসবি ব্রিকসে আসছিলেন। এ সময় দ্রুতগতি সম্পন্ন ট্রাকটি খুলনা সাতক্ষীরা মহাসড়কের আংগারদোহা গ্রামে পৌঁছালে বিপরীত দিক (চুকনগর বাজার এলাকা থেকে) থেকে আসা ইজিবাইককে সজোরে ধাক্কা দেয়। ট্রাকের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যান ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া ইউনিয়নের আংগারদোহা গ্রামের মাস্টার আব্দুল হান্নান মোড়লের ছেলে সাব্বির মোড়ল (২৮) ও ইজিবাইকচালক বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের শাশুড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম বিলপাবলা এলাকার অনিমেষ ঢালীর স্ত্রী অমরী ঢালী (৫৫)। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইজিবাইকচালক ডুমুরিয়া উপজেলার জিলেরডাঙ্গা গ্রামের বিশ্বজিৎ বিশ্বাস (৩৮), খুমেক হাসপাতালে মেয়ে অর্নি বিশ্বাস (৪), ডুমুরিয়া হাসপাতালে বিশ্বজিতের শ্যালকের স্ত্রী নিপা ঢালী (২৫) মারা যায়। এ সময় ইজিবাইকচালক বিশ্বজিত বিশ্বাসের স্ত্রী অন্তিমা বিশ্বাস (২৮) ও শ্যালকের ছেলে অর্জিত ঢালী (৬) গুরুতর আহত হয়। ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুকান্ত কুমার সাহা বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে প্রায় ২ ঘণ্টা গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। পরে ডুমুরিয়া থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস অফিস ও খর্নিয়া হাইওয়ে থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও ইজিবাইক থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button