খুমেক হাসপাতাল যেন ময়লা ভাগাড়

নোংরা পরিবেশ দেখে এমপি শেখ জুয়েলের ক্ষোভ প্রকাশ
মহিলা হরিজনরা বেতন পায় না ১০ মাস
কামরুর হোসেন মনি ঃ খাবারের উচ্ছিষ্ট, পলিথিনের ব্যাগ, প্লাস্টিকে বোতল, ওষুধের বোতল, ইনজেকশনের শিশি-সিরিঞ্জ, ব্যান্ডেজ-গজ, স্যালাইনের প্যাকেট, রক্ত ও পুঁজমাখা তুলা-গজসহ নানা মেডিকেল বর্জ্য খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ভবনের চারপাশে পানিতে ভাসছে। গতকাল শনিবার সকাল ১১টার দিকেও হাসপাতালে পরিচালকের রুমে আসে। ১৫-১৮ জন হরিজন মহিলা ১০ মাস ধরে বেতন না পাওয়ার বিষয়ে পরিচালকের কাছে অভিযোগ দেন।
এদিকে খুলনা ২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল আকষ্মিক খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। গত বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রয়ারি) তিনি পরিদর্শনকালে তিনি হাসপাতালে ভর্তি ও বর্হিবিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীদের খোঁজ খবর নেন। পরিদর্শনকালে হাসপাতাল অপরিচ্ছন্ন থাকায় তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে হাসপাতালের কর্তপক্ষকে সর্তক করেন। এ সময় স্থানীয় কাউন্সিলরসহ আা’লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যপাারে খুমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: মো: হুসাইন শাফায়াত বলেন, হরিজনরা বেতন না পাওয়ার বিষয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। আমি বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তাদেরকে আশ^াস দিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সাথে কথা বলবো।
শনিবার খুমেক হাসপাতালে এ প্রতিবেদককে হাসপাতালের একাধিবক মহিলা হরিজন বলেন, তারা দীর্ঘ ১০ মাস বেতন পায় না, এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। তিনি আজ ( শনিবার) আমাদেরকে হাসপাতালে তার সাথে দেখা করতে বলেন। হরিজনরা বলেন, আমরা মুর্খসুর্খ মানুষ ; প্রথমে আমরা ১০৭ লডে কাজ করছিলাম, অনেক ১০৪ লডে কাজ করেছে, অনেকে আবার ৯৭ লডে কাজ করছি। এভাবে তারা বিভিন্ন লডে নিয়ে আমাদেরকে কাজ করায়। এখন বলছে আমরা ১০০ লডেতে আছি। হরিজনরা বলেন, আমাদের ্েবতনের টাকা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা মেরেও খাচ্ছে। ১৬ হাজার টাকার পরিবর্তে ৮ হাজার করে দিছে। এখনতো ১০ মাসের বেতন পাওনা রয়েছে। খুমেক হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালটির চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা আবর্জনা আর নোংরা পরিবেশ স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মতে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর অবহেলার জ্বলন্ত প্রমাণ এটি। ভর্তি রোগীরা বলছেন, এই হাসপাতালটিতে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ছুটে আসেন ভালো সেবা পাওয়ার জন্য, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার আশায়। কিন্তু এই হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন নোংরা পরিবেশের কারণে। শুধু রোগীই না, হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগীর স্বজন এবং দর্শনার্থীরাও অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে দাবি তাদের। আক্ষেপ করে অনেকের অভিযোগ খুমেক হাসপাতাল যেন মশা-মাছির প্রজনকেন্দ্র পাশাপাশি ময়লা ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা জানান, একটু বাতাস হলে ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে পেটের নাড়িভুড়ি উল্টে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। ড্রেনগুলো নোংরা পানিতে ভর্তি। সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে জন্ম নিচ্ছে মশা। আর এ মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ রোগীরা। এতে মশাবাহিত নানা রোগে আক্রান্তের শঙ্কা করছেন তারা। ভবনগুলোর আশপাশের ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। রাত-দিন শুরু হয় মশার উৎপাত।
রব্বানী নামের এক রোগী বলেন, হাসপাতালের চারপাশ কতটা নোংরা, অপরিচ্ছন্ন তা এখানে ভর্তি না হলে বুঝতাম না। পচা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হাসপাতালের রোগীরা। নোংরা পানিতে মশা মাছি ভোঁ ভোঁ করছে। হাসপাতালে সুস্থ হতে এসে নতুন রোগ নিয়ে অনেকে বাড়িতে ফিরতে হবে। হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর রোগীর সুস্থ হওয়া অনেকাংশে নির্ভর করে। কিন্তু পুরো এ হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ রোগীকে আরও অসুস্থ করে ফেলছে।
ভুক্তভোগীরা স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে অনুরোধ জানিয়েছেন।