খুলনার আলু’র বাজার পশ্চিমবঙ্গের দখলে
দাম উঠানামা করছে পারদের মত, আলুর দাম কমাতে নারাজ ছিল ব্যবসায়িরা, ভারত থেকে ৪০০ মেট্রিক টন আলু আমদানি, জনস্বার্থে সরকার বাধ্য হয়েই এত আলু আমদানী করেছে
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান : খুলনার ২৬ বাজারে উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত আলু’র চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের আলু’র পরিমানই বেশি। ভরা মৌসুমেও আলুর আমদানি অব্যাহত রয়েছে। সংকট কাটেনি। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে বৈরি আবহাওয়ার কারণে এবার ভালো ফলন হয়নি। বিক্রিও হচ্ছে চড়া দামে। দাম উঠানামা করছে পারদের মত। বারবার খুলনা ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানকে পাত্তাই দেয়নি অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফলে সরকার বাধ্য হয়ে ভারত থেকে আলু আমদানী করে এখন আলুর দাম সাধারণ গ্রাহকের নাগালে আনতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তার দামও রমজান মাস উপলক্ষে পারদের মত ওঠানামা করাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। আলুর সরবরাহ সঙ্কট না থাকায় আগের মত ৩গুণ দাম নিতে পারছে না কথিত অসৎ ব্যবসায়ীরা। এদিকে, পবিত্র মাহে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে দুইদিনে ৪০০ মেট্রিক টন আলু আমদানি করা হয়েছে। চাল, ডাল, গম, ডিম, পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের পাশাপাশি আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। ফলে খুলনার আলু’র বাজার এখন অনেকটাই পশ্চিমবঙ্গের দখলে।
এর আগেও গেল রোজার পর থেকে সংকট দেখা দেয়। ওই সময়ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে আলু আমদানি করতে হয়। ফলে ভরা মৌসুমে খুচরা বাজারে কখনও কেজিপ্রতি ৭০ টাকা আবার এখন ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয় আলু। তবে আলুর খুচরা বাজারদর এই রমজানের আগে কিছুটা নি¤œমূখি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে প্রতি কেজি আলু এখন ২৮ থেকে ৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুলনা মহানগরীর নতুন বাজার, মিস্ত্রিপাড়া বাজার, বউ বাজার, জোড়াকল বাজার, শেখপাড়া বাজার, বড় বাজার, নিউ মার্কেট কাঁচা বাজার, গল্লামারি, বৈকালি, চিত্রালী, আলমনগর, দৌলতপুর ও ট্রাক টার্মিনালসহ পাইকারী ও খুচরা বাজারে ভারতীয় আলু’র জমজমাট বাণিজ্য চলছে। বড় বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো. আসাদ তথ্য দিয়েছেন, ফাস্ট ফুডের দোকানে বড় সাইজের আলু’র চাহিদা থাকায় কেজিপ্রতি ভারতীয় আলু ৩৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুলনার পাইকারী আড়তে আসা কুষ্টিয়ার চরবাহেরমাদি গ্রামের চাষি মো. ফারুক হোসেন, বজলু শেখ, হাকিম উদ্দিন, মো. জহুরুল দেওয়ান, নিলফামারির কিসমত ধনাইতলা গ্রামের মতিয়ার রহমান, একই গ্রামের আইনাল হক তথ্য দিয়েছেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণে এসব এলাকায় আলুর কাঙ্খিত উৎপাদন হয়নি। নিলফামারির কিসমতডাঙ্গী গ্রামের চাষি সাদ্দাম হোসেন জানান, তার দেড় বিঘা জমিতে গতবারের তুলনায় এবার অর্ধেক ফলন হয়েছে। সার, বীজ ও কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেশি। লাভ হলেও উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে চাহিদা মিটছে না। এ সুযোগে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আলু এসে স্থানীয় বাজার ভরে গেছে। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধূরী জানান, গত সেপ্টেম্বরে হঠাৎ করে আলু’র দাম বাড়তে থাকে। খুচরা পর্যায়ে সরকার প্রতি কেজির মূল্য নির্ধারণ করে ৩৫-৩৬ টাকা। ভোক্তা অধিদপ্তর এ সময় দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে। অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা মেটাতে সরকার ৩০ অক্টোবর আলু আমদানির অনুমতি দেয়। আমদানির সময়সীমা ছিল ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৩ লাখ ৬ হাজার টন আমদানির অনুমতি দিলেও বেনাপোল ও হিলিসহ অন্যান্য বন্দর দিয়ে ৬০ হাজার টন আলু আসে। চাহিদা অনুযায়ী আলু না আসায় মৌসুমের শুরুতেই দাম বাড়ে। তবে সংকট না কাটায় এখনও ভারত থেকে আলু আমদানি অব্যাহত রয়েছে। ভারত থেকে ৪০০ মেট্রিক টন আলু আমদানি : এদিকে, ভারতের পেট্রাপোল বন্দর হয়ে দু’দিনে ১৬ ট্রাকে করে ৪০০ মেট্রিক টন আলু আমদানির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল বন্দরের চেকপোস্ট কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা আজিজ খান। এর আগে গত ২ ডিসেম্বরে ৩টি ট্রাকে ৭৪ টন আলু আমদানি হয়। এরপর আর কোনও আলু আমদানি হয়নি। আলুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ইন্টিগ্রেটেড ফুড এ্যান্ড বেভারেজ। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের পেপসিকো ইন্ডিয়া হোল্ডিংস বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর থেকে আলু চালান ছাড় করতে আসা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সমেরিন লজিস্টিক লিমিটেড সিএ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি মাসুম বিল্লা জানান, ১৩ ও ১৪ মার্চ ভারতীয় ১৬টি ট্রাকে ৪০০ মেট্রিক টন আলু আমদানি করা হয়েছে। যার প্রতি মেট্রিক টন আলুর আমদানি খরচ পড়ছে ১৯৪ মার্কিন ডলার। বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘বেনাপোল বন্দর দিয়ে দুই চালানে ৪০০ মেট্রিক টন আলু আমদানি হয়েছে। আলুর চালানটি এখনও বন্দরে রয়েছে। দ্রুত ছাড়করণের জন্য আমদানিকারকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।’ ‘আমদানিকারকের পক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলে আলুর মান পরীক্ষা শেষে খালাসের অনুমতি দেওয়া হবে।