আবু নাসের হাসপাতালে পাচারকালে বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা সরাঞ্জামাদি আটক : গ্রেফতার ১

থানায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, আউটসোর্সিং নুরজাহান ওষুধ চোরকে ধাওয়া করলে নার্স তাহমিনা তার মুখ চেপে ধরে
শেখ ফেরদৌস রহমান ঃ খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালে রোগিদের বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা সরাঞ্জামাদি পাচারের সময়ে হাতে নাতে সুমন নামে হেরাজ মার্কেটের একজন সার্জারি দোকানদার আটক হয়েছে। এঘটনায় খালিশপুর থানায় মামলা হয়েছে। এছাড়া আবুনাসের হাসপাতাল থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া এসব চিকিৎসা সরাঞ্জামাদির মধ্যে রয়েছে ফলিশ ক্যাথাটার, ইউরিন ব্যাগ, ক্যাথাটাল, ব্লাড সেট, স্যালাইন, হ্যান্ড গ্লোভস, যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫০ হাজার টাকার মত। আটককৃত সুমন বড় বাজারের হেরাজ মার্কেটের সার্জারি ওষুধের দোকানদার। তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ি, আমার খুলনা হেরাজ মার্কেটে দোকান আছে। তবে দীর্ঘ ৬ থেকে ৭মাস যাবৎ আবুনাসের হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের নার্স ইনচার্জ তহমিনা খাতুন ও কার্ডিওলজি বিভাগের নার্স ইনচার্জ সোনিয়া খাতুন আমার কাছে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত চিকিৎসা সরাঞ্জামাদি বিক্রি করত।আমি নিজেই এসে স্কুলের ব্যাগে করে ওষুধ ও চিকিৎসা সরাঞ্জামাদি নিয়ে যেতাম। এ বিষয়ে আউট সোর্সিং কর্মচারী মোসাম্মাৎ নুরজাহান বলেন, আমি প্রায় সময়ে দেখতাম যে এই লোকটি নার্স ইনচার্জের সাথে দেখা করে। আর দুটি তিনটি স্কুল ব্যাগ ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা সরাঞ্জাদি নিয়ে যায়। তবে আমি নার্স ইনচার্জের ভয়ে কিছু বলতে পারিনি। আজ সকাল দশটায় সময়ে আবার এই লোকটিকে দেখতে পেয়ে আমি নজরদারি করতে শুরু করি। লোকটি যখন ব্যাগে করে নিয়ে চলে যাচ্ছে আমি তাকে আটকানোর চেষ্টা করলে পিছন থেকে নার্স তহমিনা আমার মুখ চেপে ধরে বলে কোন চিৎকার করবিনা। এই বলে আমার সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে। এক পর্যায়ে আমি তার কাছ থেকে দৌড়ে নিচে অপেক্ষায় থাকা এ্যাম্বুলেন্স চালক টিপুকে ঘটনা সম্পর্কে অবগত তরলে তিনি দৌড়ে যেয়ে এই চোরকে চিকিৎসা সরাঞ্জামাদি সহ হাতে নাতে আটক করে। বিষয়টি নিয়ে নার্স সুপার ভাইজার শিলা রাণী বলেন, আমরা এর আগেও এই ঘটনার সম্পর্কে কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলাম। এখানে নার্স ইনচার্জ ও দায়িত্বে থাকা নার্সরা বিভিন্ন সময়ে রোগীর চিকিৎসা সরাঞ্জামাদি ওষুধ পাচার করছে। তবে হাতে নাতে আটক করা যাচ্ছিলনা। আজ আউট সোর্সিং কর্মচারী দেখতে পেয়ে তার চিৎকারে চোর আটক হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত নার্স ইনচার্জ তহমিনা খাতুন ও সোনিয়া খাতুন এর বক্তব্য বলেন, আমরা এই ঘটনার সম্পর্কে কিছু জানিনা। আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি মহল দীর্ঘদিন যাব্ৎ আমাদের পিছনে কুৎসা রটনা করে আসছে। এ বিষয়ে আবুনাসের হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালক মোঃ টিপু বলেন, আমি বাহিরে অপেক্ষা করছিলাম এসময়ে আউট সোর্সিং কমচারী নুরজাহানের চিৎকারে এগিয়ে আসলে নুরজাহান বলেন, একটি লোক ব্যাগ এর মধ্যে চিকিৎসা সরাঞ্জামাদি নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। আমি এসময়ে দৌড়ে যেয়ে হাসপাতালের সামনের সড়ক থেকে ব্যাগের মধ্যে থাকা চোরাই চিকিৎসা সরাঞ্জামাদি সহ একজনকে আটক করে হাসপাতালের পরিচালক স্যারের কাছে নিয়ে আসি। এ বিষয়ে আবু নাসের হাসপাতালের মেট্রোন পারভিন আক্তার বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে শুনেছি আমাদের দুই জন নার্স ইনচার্জ এর সহায়তায় রোগীদের চিকিৎসা সরাঞ্জামাদি পাচার করার সময়ে চিকিৎসা সরাঞ্জামাদিসহ একজন আটক হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি আইনগত ব্যবস্থা নিব। এ বিষয়ে শহীদ শেখ আবুনাসের হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ শেখ আবু শাহীন বলেন, রোগীদের চিকিৎসা সরঞ্জামাদি পাচার করার সময়ে হাতেনাতে একজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃত ব্যক্তি জানিয়েছে যে দুইজন নার্স ইনচার্জ জড়িত। আমরা ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া আটকৃত চোরকে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে জড়িত অপরাধিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিব। এ বিষয়ে খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, আবুনাসের হাসপাতাল হতে চিকিৎসা সরাঞ্জামাদি পাচার করার সময়ে একজন আটক হয়েছে। আটকৃত ব্যক্তির নাম সুমন। এ ব্যাপারে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খালিশপুর থানায় এজহারভুক্ত নাম ছাড়াও অজ্ঞাত নামে মামলা করেছে। যার মামলা নং ৩০।