স্থানীয় সংবাদ

জাল জালিয়াতির অভিযোগে কেসিসির ৩৭ জন মাস্টাররোল কর্মচারি চাকুরিচ্যূত

নগরভবনে তোলপাড়

স্টাফ রিপোর্টার : খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৩৭ জন মাস্টাররোল কর্মচারিকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কেসিসির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সানজিদা বেগম এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এরা কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল ও নকল কাগজপত্র দিয়ে হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি তারা জানার পর তার সঠিক তথ্য উদঘাটনের মধ্য দিয়ে জাল জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। পরে মেয়রের নির্দেশনায় সোমবার তাদের চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। অফিসের শেষ মুহুর্তে এ খবর প্রকাশিত হলে শ্রমিক-কর্মচারিদের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অন্য একটি সূত্র জানায়, গত ৪/৫ মাস আগে কেসিসির বিভিন্ন দপ্তরের ৩৭ জন মাস্টাররোল শ্রমিক গ্রেডভুক্ত হওয়ার জন্য হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। শুনানী শেষে আদালত আবেদনকারীদের দক্ষতা ১০ বছর হওয়ার বিষয়টি অনুমোদন কপি আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। সে মতে, ৩৭ জন কর্মচারি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল ও স্বাক্ষর কপিতে নকল স্মারক নাম্বার দিয়ে আদালতে দাখিল করে। বিষয়টি ধরা পড়ার পর কেসিসি কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েক দিন ধরে এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণ করেন। চাকুরি থেকে অব্যাহত প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গাড়ীর চালক জাফর। এ চক্রের পিছনে আরো অনেকে জড়িত রয়েছে বলে সূত্রটি জানায়। কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, এসব কর্মচারীরা কেসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে স্প্রেম্যান, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নিরাপত্তা প্রহরী ও গাড়ির চালকসহ বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। তারা চাকরি স্থায়ী করার জন্য হাইকোর্টে একটি মামলা করেন। সেখানে তারা বেশ কিছু কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকটি আবেদনের কাগজ সিটি করপোরেশনের রিসিভ করা কপি তারা জমা দিয়েছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ওই কাগজপত্র কখনও সিটি করপোরেশন রিসিভ করেনি। ওই কাগজপত্রে সিটি করপোরেশনের যে সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে তা ভুয়া। এই কাজের মূল হোতা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্প্রেম্যান বাচ্চু শেখ। তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বাচ্চু শেখসহ ৩৭ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সোমবারই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার চালক মোঃ জাফরের পরিবর্তে নতুন করে আলতাপ নামের অন্যজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অন্যদের মধ্যে রয়েছে কনজারভেন্সী শাখার স্প্রেম্যান বাচ্চু শেখ, কনজারভেন্সী শাখার স্প্রেম্যান মোঃ আলাউদ্দীন, কনজারভেন্সী শাখার স্প্রেম্যান নিলকমল মল্লিক, কনজারভেন্সী শাখার স্প্রেম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান, কনজারভেন্সী শাখার স্প্রেম্যান কুদ্দুস শেখ, কনজারভেন্সী শাখার স্প্রেম্যান লিয়াকত শেখ, কনজারভেন্সী শাখার স্প্রেম্যান আক্কাস, কনজারভেন্সী শাখার স্প্রেম্যান মুজিবর, পরিচ্ছন্নতা কর্মী বেল্লাল শেখ, পরিচ্ছন্নতা কর্মী প্রলাদ দাস, পরিচ্ছন্নতা কর্মী রুস্তম খা, কনজারভেন্সী শাখার স্প্রেম্যান বাবুল হাওলাদার, পরিচ্ছন্নতা কর্মী মমতাজ বেগম, শ্রমিক কালাম ফকির, পরিচ্ছন্নতা কর্মী জাকারিয়া হোসেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী খান মনিরুল ইসলাম, পরিচ্ছন্নতা কর্মী দেলোয়ার হোসেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী শহিদুল ইসলাম, অফিস সহায়ক আজিজুল শিকদার, পরিচ্ছন্নতা কর্মী মনিরুল শেখ, ক্লিনার কোরবান আলী, ড্রাইভার ইউসুফ হাওলাদার, ক্লিনার শাহাজাহান, ড্রাইভার আশরাফুল ইসলাম, ড্রাইভার ইসমাইল হোসেন, ড্রাইভার নজরুল ইসলাম, হেলপার আইয়ুব আলী, ড্রাইভার নাসির, ড্রাইভার মোজাম গাজী, ড্রাইভার মোতালেব আলী, বিদ্যুৎ মিস্ত্রী সোনা দাস, নিরাপত্তা প্রহরী রাসেল বিশ্বাস, নিরাপত্তা প্রহরী শহিদুল ইসলাম, নিরাপত্তা প্রহরী হাবিবুর রহমান শেখ, নিরাপত্তা প্রহরী নাসির উদ্দীন ও নিরাপত্তা প্রহরী শেখ আবু জাফর। কেসিসির অফিস আদেশে আরো উল্লেখ করা হয়, ভূয়া কাগজপত্র এবং কেসিসির অফিসিয়াল (প্যাড) দলিলাদি ব্যবহার কওে অসৎ উদ্দেশ্যে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে ১৪৩৪৮/২৩নং রীট মামলা দায়ের করা হয়। সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য কেসিসির উল্লেখিত ৩৭জন মাস্টাররোল শ্রমিককে ১ এপ্রিল থেকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। এর মাস খানেক আগে মৃত শ্রমিকের টাকা আতœসাতের দায়ে মাস্টাররোল শ্রমিক সাইফুর রহমান (কেসিসি কর্মচারি ইউনিয়নের নেতা) ও শহিদকে (কেসিসি এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের নেতা) চাকুরিচ্যূত করা হয়। এক সাথে কেসিসিতে এত কর্মচারির আগে কখন চাকুরিচ্যূতির ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় নগরভবনে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button