খুলনায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে লাইলাতুল কদর পালিত

গুনাহ্ মার্জনা, দেশ ও জাতিসহ কবরবাসীর জন্য বিশেষ দোয়া মোনাজাত
স্টাফ রিপোর্টার ঃ গুনাহ্ মার্জনার মাস, মহামান্বিত মাসের রহমত, মাগফেরাত আর নাজাতের বাড়তা নিয়ে মুসলিম উম্মার দুয়ারে কড়া নাড়ে পবিত্র মাহে রমজান। মহান ¯্রষ্টা একদিকে যেমন রমজানকে মুসলিমের জন্য অফুরন্ত নেয়ামত দান করেছেন অন্য দিকে শেষ দশক অর্থ্যাৎ নাজাতের দিনগুলোর প্রতিটি বিজোড় রাতের যে কোনো একটি রাতে বান্দার জন্য হাজার বছরের উত্তম একটি রাত রেখেছেন, যা পবিত্র লাইলাতুল কদর। পবিত্র মাহে রমজানুল মোবারকের শেষ দশকে বিজোড় রাতে পবিত্র লায়লাতুল কদর প্রাপ্তির আশায় নগরসহ নগরীর স্থানীয় এলাকার মসজিদ সমূহে দীর্ঘ রাত জুড়ে চলে ইবাদতে পালন। একই সাথে সিয়াম সাধনার প্রথম দিন হতে দীর্ঘ বিরতিহীন ভাবে চলে কোরআনের সু-মধুর তেলোয়াত, যা ২৬ রমজান দিবাগত রাতে (২৭ রমজান) খতবে কোরআন করা হয়ে থাকে। মসজিদের খতিব ও ইমামগন রমজানের শেষ দশকের বিশেষ প্রাপ্তি আল্লাহর পক্ষ হতে বান্দার জন্য সু-সংবাদ লায়লাতুল কদরের রাতের মহাগুনান্বিত মহিমা নিয়ে আলোচনা শেষে দেশ ও জাতির, কবরবাসিদের জন্য দোয়া সহ ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির জন্য মহা ¯্রষ্টার নিকট কান্নারত কন্ঠে বিশেষ দোয়া মোনাজাতও করে থাকেন। শনিবার (৬ এপ্রিল) দিনগত রাতে নগরীর ডাকবাংলা, শিববাড়ি, সোনাডাঙ্গা, নিরালা, জিরোপয়েন্ট, রুপসা, বানিয়াখামার, সাচিবুনিয়া, জোড়াগেট, বয়রা, বৈকালি, বাস্তহারা, আলমনগর, খালিশপুর, নতুনরাস্তা, পাবলা, দৌলতপুর, দেয়ানা, আড়ংঘাটা, গাইকুড়, ইস্পাহী কোলনী, মধ্যডাঙ্গা, পালপাড়া, রেলিগেট, মানিকতলা, কালিবাড়ী, রানার মাঠ, তেলিগাতি, ফুলবাড়ীগেট, কুয়েট, শিরোমনি, আটরা, গিলাতলা, ডাক্তারবাড়ী, আলিম গেট, দামোদর, ফুলতলাসহ স্থানীয় এলাকার মসজিদ সমূহে খতবে কোরআন শেষে বিশেষ জাগতিক জীবনের গুনাহ্ মার্জনা, দেশ ও জাতিসহ কবরবাসীর জন্য বিশেষ দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া সারা রাত নফল ইবাদত, কোরআন তেলোয়াত, তাহাজ্জুতের নামাজ, জিকিরসহ নানামুখি ইবাদতের মধ্যে মহান ¯্রষ্টার প্রদত্ত হাজার বছরের শ্রেষ্ট রাত লাইলাতুল কদরের প্রাপ্ত হওয়ার জন্য কান্নারত কন্ঠে জীবনের গুনাহ হতে মুক্ত হয়ে নিষ্পাপ প্রাপ্ত, ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির জন্য ইবাদতে মগ্ন থাকেন শিশু থেকে নারী, পুরুষ, তরুন-তরুনী আবাল-বৃদ্ধা সহ সকল বয়সের মানুষ। সাহারী শেষে ফজরের নামাজের মধ্যে দিয়ে মুসল্লিগন তাদের লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির ইবাদত বন্দেগীর ইতি টানেন।
স্কুল ছাত্র আরিক (১২) মসজিদে দু’হাত তুলে মোনাজাত ধরে বসে আছে। জিজ্ঞাসা করতে সে জানালো আমার দাদা নেই মারা গেছে, দাদা আমাকে খুব আদর করতো, চকলেট কিনে দিতো আজ দাদা নেই। মাঝে মাঝে একাই কৃষি কলেজ করবস্থানে যাই দাদার কবর জিয়ারত করতে। আমি রোজা রেখেছি, আজ মসজিদে মিলাদ দেবে আর অনেক লোক থাকবে। আমি ও এসেছি দাদার জন্য আল্লার কাছে দোয়া করতে। ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স মসজিদে আসা মুসল্লি জাহিদুল ইসলাম জানান, জীবনের সময় পুরাটাই শেষ করে ফেলেছি, এখন কবর পথের যাত্রী। যে কোনো সময় আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে হবে। এই রমজানে রোজা পেলাম, আগামী রমজান ভাগ্যে আছে কিনা জানিনা। আল্লাহ যেন এ রহমাতের মাসে আমাকে মাফ করে দেন, গুন্নাহ্ ক্ষমা করে দেন, নিষ্পাপ করে দেন। লায়লাতুল কদরের প্রাপ্তির জন্য রাত্রী যাপন করছি।
কৃষি কলেজ কবর খানায় বাবার কবর জিয়ারত করতে আসা মুসল্লি মো. শাহাদত হোসেন বাচ্চু জানান, বাবার কয়েক বছর হলো মারা গেছেন। আজ বাবা নেই, এখন বুঝি বাবা কি ছিলো আমাদের জীবনে। পবিত্র মাহে রমজান মাস তো শেষ। জানিনা আল্লাহ জীবনের গুনাহ্ মাফ করবেন কিনা। ২৭ শে রমজান, কদরের রাত। তারাবিহ্ নামাজ আদায় করে কবরস্থানে আসলাম বাবার কবর জিয়ারত করতে। এই পবিত্র মাসের উছিলায় আল্লাহ যেন আমার পিতাকে মাফ করে দেন, এটাই আমার চাওয়া।