বাগেরহাটে নৃত্য শিল্পীকে গণধর্ষণ ও আ’লীগ নেতাসহ ২ জনকে হত্যা এবং বিচ্ছিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদ উযযাপন

বাগেরহাট প্রতিনিধি ঃ বাগেরহাটের মোল্লাহাটে বিবাহ বাড়ীতে নৃত্য করে বাড়ী ফেরার পথে নৃত্য শিল্পীকে গন-ধর্ষন, অপর বিয়ে বাড়ীতে বরের দুলাভাইকে হত্যা এবং চিতলমারীতে আওয়ামী লীগ নেতা কে হত্যাসহ বিচ্ছিন্ন একাধিক অপরাধ কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উযয্াপিত হয়েছে। বাগেরহাট জেলায় ঈদের প্রধান জামায়াত হয়েছে ৩ দফায় ঐতিহাসিক ষাটগম্ভুজ মসজিদ ময়দানে। আর এবার পবিত্র ঈদের সময়টাতে বাগেরহাট জেলায় ঘটেছে ধর্ষন, হত্যাকান্ড ও মারামারিসহ নানা অপরাধমুলক কর্মকান্ড। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল জেলার মোল্লাহাট উপজেলার ঘাটবিলা এলাকায় স্বামী ও সন্তানের কাছ থেকে তুলে নিয়ে একজন নৃত্য শিল্পীকে (২০) গনধর্ষন। শুক্রবার রাতে এ খবর জানতে পেরে মোল্লাহাট থানার ওসি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং ভিকটিম নৃত্যশিল্পীকে উদ্ধার করে। এ সময় হাতে-নাতে ৪ লম্পট ও পরে আরো একজন মোট ৫ লম্পট কে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো উপজেলার কাহালপুর গ্রামের আরমান শেখ (১৯), রাজিব শেখ (১৯), সোহাগ মোল্লা (১৮), নাসিম মোল্লা(১৯) ও করিম শেখ (২২)। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ভিকটিম নৃত্যশিল্পী শুক্রবার রাতে স্বামী ও শিশু সন্তান নিয়ে উপজেলার সরসপুর গ্রামে একটি বিবাহ বাড়ীতে নাচ করতে যান। অনুষ্ঠান শেষে রাত প্রায় ১২ টার দিকে ভিকটিম কে পৌছে দেয়ার কথা বলে কৌশলে লম্পটরা একটি মটরসাইকেলে তুলে আনে। আর স্বামী ও সন্তান কে অপর একটি মটরসাইকেলে নিয়ে আসায় একটি শুন্যতা হলে লম্পটরা ঢাকা খুলনা মহাসড়কের ঘাটবিলা এলাকায় মোল্লাহাট উপজেলা চেয়ারম্যানের জমির উপর পরিত্যাক্ত একটি টিনশেড ঘরে নিয়ে ৭/৮ জনে পালাক্রমে ধর্ষন করে। ঘটনা জানতে পেরে রাতেই মোল্লাহাট থানা পুলিশ আকস্মিক অভিযান চালিয়ে ভিকটিম কে উদ্ধার ও ৫ জন লম্পট কে হাতে-নাতে গ্রেফতার করে। এ বিষয়ে বাগেরহাট পুলিশ অফিসের মিডিয়া সেলের পুলিশ পরিদর্শ সৈয়দ বাবুল আক্তার বলেন থানার ওসি রাতেই ভিকটিম কে উদ্ধারসহ ৫ জন বখাটেকে আটক করেছে। এ ঘটনায় বাকী আসামীদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা অব্যাহত আছে। অপরদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় প্রতিপক্ষের হামলায় মোজাফফর হোসেন খান (৬৬) নামে একজন আওয়ামীলীগ নেতা খুন হয়েছেন। উপজেলার কাননচক বাজার এলাকায় স্থানীয় দুইপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হন এই আওয়ামীলীগ নেতা। পরে তাকে উদ্ধার করে পাশর্^বর্ত্তি গোপালগঞ্জ উপজেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মোজাফফর হোসেন খান কাননচক গ্রামের বাসিন্দা ও চিতলমারি উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য। স্থানীয়রা জানান, হিজলা ইউনিয়ন আওামীলীগের এক নেতার বিবাহিত মেয়ের সাথে পরকিয়া রয়েছে এমন অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে কাননচক গ্রামের সজিব খান নামের এক যুবককে তুলে নিতে আসেন হিজলা এলাকার কাজী শাহেদসহ কয়েকজন। এ সময় কাননচক গ্রামের লোকজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজী শাহেদসহ তুলে নিতে আশা লোকজনকে বেধড়কক মারপিট করে। পরবর্তীতে হিজলা ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান কাজী আবু শাহীন ও আওয়ামী লীগ নেতা লিটন কাজীর নেতৃত্বে শতাধিক ক্যাডার কাননচক গ্রামে আসেন। তখন প্রতিরোধে কলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান মোঃ বাদশা মিয়া শেখের নেতৃত্বে কাননচক এলাকার লোকজন ঐক্যবদ্ধ হয় এবং দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়। এতে আওয়ামী লীগ নেতা মোজাফ্ফর হোসেন খানসহ উভয়পক্ষে কয়েকজন আহত হয়। গুরুতর অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতা মোজাফফর খানকে টুঙ্গিপাড়া হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন । এদিকে সিনিয়ন এ আওয়ামীলীগ নেতাকে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এলাকায় দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও পথ সভা হয়। পরে বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রাসেলুর রহমানসহ পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়। চিতলমারী থানার ওসি মোঃ ইকরাম হোসেন জানান, মেয়েলি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ দুই পক্ষকে শান্ত করে। নিহতের মরদেহের ময়না তদন্তের জন্য বাগেরহাট জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এছাড়া বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার চুনাখোলা আংড়া গ্রামের বিবাহ বাড়ীতে সৃষ্ট বিরোধে আজিজুর মোল্লা (৪৫) নামের একজন কে হত্যা করা হয়েছে। আর এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে শনিবার রাত ১০ টার দিকে আংড়া গ্রামের শাহাদত মুন্সির বাড়ীতে। ঘটনা বিষয়ে পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, মোল্লাহাট উপজেলার গাংনী মাতার চর গ্রামের মোহাম্মদ গাজী এর ছেলে মো: হাফিজুর রহমান গাজী (২৮) শনিবার সন্ধ্যায় একই উপজেলার চুলখোলা আংড়া গ্রামের শাহাদত মুন্সীর মেয়েকে বিবাহ করতে যায়। বিবাহের অনুষ্ঠানে শাহাদত মুন্সীর মেয়েকে দেখে ছেলের পছন্দ না হওয়া নিয়ে উভয়পক্ষে কথাকাটি হয়। কথাকাটির একপর্যায়ে ছেলের দুলাভাই (বোনের জামাই) পাশর্^বর্ত্তি খুলনা তেরখাদা উপজেলার ইছামতি গ্রামের শাহাদত মোল্লার ছেলে আজিজুর মোল্লা কে বেধড়ক মারপিট করা হয়। তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে বাগেরহাট পুলিশ অফিসের মিডিয়া সেলের পুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ বাবুল আক্তার বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে শাহাদত মুন্সিসহ ২ জন গ্রেফতার হয়েছে।