স্থানীয় সংবাদ

বেনাপোল বন্দরে প্রচন্ড গরমে কাজ করতে পারছেন না হ্যান্ডলিং শ্রমিকরা

মোঃ মোকাদ্দেছুর রহমান রকি যশোর থেকে ঃ দেশের রাজস্ব আদায়ের অন্যতম স্থলবন্দর বেনাপোলে প্রচন্ড গরমে একটানা কাজ করতে পারছেন না বেনাপোল বন্দরের হ্যান্ডেলিং শ্রমিকরা। ফলে ট্রাকে পণ্য উঠানামা যেমন ধীর গতি দেখা দিয়েছে, তেমনি কমেছে তাদের দৈনিক আয়। তীব্র খরতাপে হতদরিদ্র দিনমজুর বন্দর শ্রমিকদের দৈনিক আয়-রোজগার ব্যাপকহারে কমে গেছে। দিনমানে বাড়ছে কষ্ট-দুর্ভোগ। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। যশোর মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া অফিস বলেছে, বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার ১৯ এপ্রিল দুপুর ২টা পর্যন্ত যশোরে তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। কিন্তু শনিবার ২০ এপ্রিল গত কয়েকদিনের সব রেকর্ড ভেঙে তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ২১ এপ্রিল রোববার বেলা ১ টা৩০ মিনিটে তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৩৯,০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বেনাপোল স্থলবন্দরের হ্যান্ডেলিং শ্রমিক মিন্টু রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ২ সপ্তাহ ধরে প্রচন্ড গরম। এই গরমে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের বেশি একটানা কাজ করা যাচ্ছে না। দুপুরে কোনো কাজ করাই সম্ভব হচ্ছে না এই গরমে।’
আরেক শ্রমিক ইউনুছ আলি জানান, আগে ২০ জন শ্রমিক ৩ ঘণ্টায় একটি ট্রাকের পণ্য আনলোড করতাম। এখন সময় লাগছে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা।অনেকে গরমে এই কাজ করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’
একটানা কাজ করতে না পারায় আয় কমেছে শ্রমিকদের। স্থলবন্দরের শ্রমিক সেলিম আহম্মেদ বলেন,অন্যান্য সময় সারা দিন কাজ করে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা আয় করতাম। এখন ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকার বেশি আয় করা সম্ভব হচ্ছে না।’ ট্রাকচালক রেজাউল ইসলাম বলেন,’গরমের কারণে শ্রমিকরা সেভাবে কাজ করতে পারছে না।সময় মতন ট্রাক লোড হচ্ছে না। তাই আমাদেরও সময় অপচয় হচ্ছে। বন্দরে বেশি সময় বসে থাকতে হচ্ছে।’ বনাপোল স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক আবু ফয়সল বলেন, ‘গরমের কারণে শ্রমিকরা লাগাতার কাজ করতে না পারায় ভারতীয় ট্রাক থেকে পণ্য খালাস করতে অধিক সময় চলে যাচ্ছে। ট্রাকে পণ্য লোড করতেও তুলনামূলক বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে।এতে সময় মতো পণ্য সরবরাহ করা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।’গত বছরের তুলনায় এবার বেশি গরম পড়েছে। শ্রমিকরা লাগাতার কাজ করতে না পারায় পণ্য উঠানামায় (লোড-আনলোড) বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান হ্যান্ডেলিং শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের (রেজিঃনম্বর-৯২৫)সভাপতি রাজু উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রচন্ড রোদ আর গরমের কারণে বন্দরের শেড ইয়ার্ড ও গুদামের ভেতরে শ্রমিকেরা কাজ করতে পারছেন না। এক ট্রাক লোড দেওয়ার পর বিশ্রাম নিয়ে আবার আরেক ট্রাক লোড দিচ্ছেন। এতে প্রতিদিন যেখানে ২০ ট্রাক লোড হতো। বর্তমানে গরমের কারণে শ্রমিকেরা ৮ থেকে ১০ ট্রাক লোড দিতে পারছেন।’ এদিকে বেনাপোল বন্দর হ্যান্ডেলিং শ্রমিক ইউনিয়নের আরেকাংশের (রেজিঃনম্বর-৮৯১) সেক্রেটারি জানে আলম বলেন, “মাস খানেক বৃষ্টির দেখা নেই, তাই প্রচ- তাপদাহে শ্রমিকরা কাজ এগিয়ে নিতে পারছে না।প্রচন্ড গরমের কারণে হ্যান্ডেলিং শ্রমিকরা স্বস্তিতে কাজ করতে পারছেন না।” বেনাপোল বন্দরে পরিচালক রেজাউল করিম জানান, বন্দরে লোড আনলোডে তেমন কোন সমস্যা হচ্ছেনা। তবে প্রচন্ড গরমে শ্রমিক যরা কাজ করতে পারছে। তবে লোড আনলোডে আগের চেয়ে এখন সময় বেশী লাগছে। স্বাস্থ্য ঝুকি এড়াতে তাদেরকে প্রচুর পানি খেতে বলা হচ্ছে। পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে। তাদের খাবার পানির জন্য বন্দর থেকে একটা টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে আর ওরা নিজেরা ২ টা টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করবে। খাবার পানির ব্যবস্থাটা হয়ে গেলে শ্রমিক দের কাজ করতে কস্ট কম হবে। বেনাপোল সিএন্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন,প্রতিদিন ভারত থেকে গড়ে ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ পণ্যবাহী ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে বেনাপোলে আসে।বাংলাদেশ থেকে গড়ে দেড়শ থেকে ২০০ট্রাক রপ্তানি পণ্য নিয়ে ভারতে যায়। প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ ট্রাক পণ্য খালাশ করে ভারতে ফেরত যায়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button