স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় হাসপাতালগুলোতে ফুড পয়জনিং রোগীর সংখ্যা বাড়ছে

হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে চার দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর # খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে ৪০.৪ ও খুলনায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস

কামরুল হোসেন মনি ঃ যতই গরম বাড়ছে, ততই হাসপাতালে হু হু করে বাড়ছে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সাবিনা ইয়াসমিন রোজীনা (৪৮), স্বামী ইব্রাহিম শেখ (৫৫) ছেলে শিবলী (২৭) এবং মেয়ে রামিমা (৩০) এই একই পরিবারের ৪জনই ফুড পয়জনিংয়ে আক্রান্ত হয়ে সোমবার রাতে খুলনার রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বাংলাটিভি খুলনার প্রতিনিধি তরিকুল ইসলাম ডালিম বলেন, সোমবার রাতে তার আপা সাবিনা ইয়াসমিন রোজীনাসহ দুলাভাই ভাগ্নে ভাগ্নি রাত ৮টার দিকে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। রাত ৯টায় দিকে সবার পেটে ব্যাথা, সাথে বমিও শুরু হয়। এরপর শুরু হয় ডায়রিয়া। তার বোন ফকিরহাট উপজেলা ঘনশ্যামপুর এলাকায় বসাবস করেন। ওই রাতে তাদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন ফুড পয়জনিং এর কারণে তাদের এই অবস্থা। তিব্র গরমে ফুডপয়জনিংসহ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার খুলনার ৯ উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ২৫০ শয্যা খুলনা জেনারেল হাসপাতালে একদিনে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে ৩৮ জন। এর আগেদিন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিলো ৪৩ জন। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো যশোরে। এই জেলায় তাপমাত্রা ছিলো ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময়ে খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া এমন পরিস্থিতিতে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ফুড পয়জনিং রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অপরদিকে সারা দেশে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্দেশনা প্রদান করেছে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের মতে, রাস্তার অপরিশোধিত পানি থেকে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ নানা কিছু হতে পারে। পানি রোটা ভাইরাস থেকে হেপাটাইটিস বি-ও ছড়াতে পারে। সালমেলা সিগেলা ভাইরাস রক্ত আমাশয়ের অন্যতম কারণ। আর এগুলো তপ্ত আবহাওয়াকে সঙ্গী করে খাবারের মাধ্যমে গরমে চুপিসারে ঢুকে পড়ছে শরীরে। শুধু তাই নয়, আধুনিক গবেষনা বলছে. ফুড পয়েজনিং তো বটেই, হেপাটাইটিস এ ও ই-এর ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়েই অপরিশোধিত পানির ভূমিকা থাকে।
খুলনা সিভিল সার্জন ( ভারপ্রাপ্ত) ডা: শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, অতি তিব্র গরমের কারণে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এটা ফুডপয়েজনিং এর কারণে হতেও পারে। তিনি বলেন, হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিতে কমাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বিশেষ বার্তা প্রদান করা হচ্ছে। সবাইকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। যাতে রোগীদের সেবায় কোন ঘাটতি না থাকে। তিনি বলেন, এই প্রচন্ড রোদে বের হলে রাস্তায় দু-তিনটা ডাব খেয়ে নিন। শরীরকে সুস্থ রাখতে ও বিষক্রিয়া রুখতে ডাবের পানি কাজে আসবে। বাড়িতে শিশু থাকলে বেশি সতর্ক থাকুন। শিশুকে ফোটানো পানি ছেঁকে খাওয়ান। শীররকে ঠান্ডা রাখে এমন খাবার খান। ডিম, মাংস, তেল-মশল্লার রান্না গরমে হজমে সমস্যা করে। তাই খেয়াল রাখুন সে দিকে। বাড়ির ফিল্টার নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিষ্কার করুন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরএমও ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা। তিনি বলেন, ফুডপয়েজনিং রোগীও বাড়ছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন বহি:বিভাগে ২২শ রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। বেশির ভাগ রোগী বয়স্ক ও শিশু। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টা পর্যন্ত হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলো ১ হাজার ৪৪৩ জন। এর আগের দিন রোগী ভর্তি ছিলো ১ হাজার ৪৩৯ জন।
এদিকে দেশে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ। সহ্য না করার মতো গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এ পরিস্থিতিতে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে চার দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়- তীব্র গরম থেকে দূরে থাকুন, মাঝে মাঝে ছায়ায় বিশ্রাম নিন; প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করুন। হেপাটাইটিস এ, ই, ডায়রিয়াসহ প্রাণঘাতী পানিবাহী রোগ থেকে বাঁচতে রাস্তায় তৈরি পানীয় ও খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে একাধিকবার গোসল করুন; গরম আবহাওয়ায় ঢিলেঢালা পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরুন, সম্ভব হলে গাঢ় রঙিন পোশাক এড়িয়ে চলুন; গরম আবহাওয়ায় যদি ঘাম বন্ধ হয়ে যায়, বমি বমি ভাব দেখা দেয়, তীব্র মাথাব্যথা হয়, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, প্রস্রাব কমে যায়, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয়, খিঁচুনি এবং অজ্ঞান হওয়ার মতো কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে হাসপাতালে যান এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর তিনটার পর খুলনা বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোরে। এই জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলিসয়াস। এই সময়ে খুলনা ও মোংলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ইশ^রদীতে ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি, চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ দশকি ৬ ডিগ্রি, সাতক্ষীরায় ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি, কুমারখালী ( কুষ্টিয়া) ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি এবং কয়রায় ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এর আগের দিন যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, খুলনায় ও ইশ^রদীতে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া একই দিনে মোংলা ও কুমারখালী (কুষ্টিয়া) ৪০ ডিগ্রি, সাতক্ষীরায় ৩৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি এবং কয়রায় সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button