স্থানীয় সংবাদ

নয় বছর আইনী লড়াই করে চাকুরি ফিরে পেলেন কেসিসি কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি

স্টাফ রিপোর্টারঃ দীর্ঘ প্রায় নয় বছর লড়াই করে চাকুরি পেলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশন কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি উজ্জল কুমার সাহা। রাজনৈতিকভাবে আ’লীগ আদর্শে বিশ্বাসী না হওয়ায় চাকুরি জীবনে অনেক স্ট্রগল করে বাঁচতে হয়েছে। অনেক চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে কর্তৃপক্ষে শুভ বুদ্ধির উদয় হওয়ার পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে তাকে চাকুরির যোগদান পত্র আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া হয়। গত ২০১৭ সাল থেকে তিনি চাকুরি পাওয়ার জন্য আন্দোলন করে আসছিলেন। অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, হাইকোর্ট ডিভিশনের ৮১৯৬/১৭নং রীট মামলায় গত ১৪/১২/২০১৭ তারিখের আদেশ এবং সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে খুলনা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নিয়োজিত আইন উপদেষ্টা এড. শেখ সিরাজুল ইসলামের মতামতের আলোকে ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তা-কর্মচারি চাকুরি বিধিমালা, ১৯৯৩ অনুযায়ী প্রশাসকের অনুমোদনক্রমে উজ্জল কুমার সাহাকে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভান্ডার শাখার স্টোর কিপার পদে শর্তাবলী সাপেক্ষে ১০.০৩.২০২১ তারিখ থেকে ভূতাপেক্ষ আতœীকরণ করা হলো। ওই যোগদানপত্র প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম, সচিব সানজিদা বেগম, প্রধান প্রকৌশলী মোঃ মশিউজ্জামান, রাজস্ব অফিসার এসকেএম তাছাদুজ্জামান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মারুফ হোসেন, প্রধান লাইসেন্স অফিসার মনিরুজ্জামান রহিম, ডিসিটি মুকুল, হিসাব বিভাগের ওহেদুজ্জামানসহ অন্যান্য কর্মচারিরা। কেসিসি সূত্রে জানা যায়, কেসিসির মাস্টাররোল শ্রমিক-কর্মচারিরা দীর্ঘ দিন যাবৎ নানা অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। তাদের অধিকার নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে দেন দরবার করে ব্যর্থ হয় আন্দোলনকারীরা। অবশেষে তারা বাধ্য হয়ে ৪৩ জনের চাকুরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ২০১৭ সালের প্রথম দিকে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর বিষয়টি কর্তৃপক্ষ অবগত হওয়ার পর মামলাকারী কর্মচারিরা পড়েন বিপদে। কর্তৃপক্ষ তাদের ঠুনকো অজুহাতে চাকুরি চ্যুৎসহ নানা ধরনের বৈষম্য শুরু করেন। অবশেষে গত ১৪.১২.২০১৭ তারিখে আদালত তাদের চাকুরি স্থায়ীকরনের জন্য রায় দেন। আদালতে এ আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে লিব টু আপিল করেন। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট লিব টু আপিল খারিজ করে পূর্বে আদেশ বহাল রাখেন। পরবর্তীতে একই সালে কেসিসি আদালতে রিভিউ পিটিশন (পুনঃ বিবেচনা) দাখিল করেন। আদালত রিভিউ পিটিশন খারিজ করে ১৪.১২.১৭ তারিখের আদেশ বহাল রাখে। কেসিসি বাধ্য হয়ে ১০.০৩.২০২১ তারিখে ৪৩ জনের মধ্যে থেকে উজ্জল কুমার সাহাকে ছাড়া অন্য ৪০ জনকে ধারাবাহিকভাবে স্ব স্ব পদে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়া হয়। বাকী দু’জনের মধ্যে একজন মৃত্যুবরণ করেছে এবং অপরজন আঃ সাত্তার চাকুরি ছেড়ে চলে গেছেন। উজ্জল কুমার সাহা কেসিসির কনঃ ভান্ডারে দায়িত্ব পালনকালে আর্থিক ক্ষতি সাধনের অজুহাতে মাস্টাররোল চাকুরি থেকে তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। উজ্জল পুণরায় চাকুরি ফেরৎ পাওয়ার জন্য হাইকোর্টে রীট মামলা দায়ের করে। যার নং-৯৪৩/১৮। উক্ত মামলায় প্রথমে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ প্রাপ্তির পরও কর্তৃপক্ষ তাকে চাকুরিতে যোগদান করতে দেয়নি। ১৯৪৩/১৮ নং মামলায় উজ্জল সাহা ২০২৩ সালে এই মামলার রায় পাওয়ার পর তাকে স্থায়ী না করে কর্তৃপক্ষ পুনরায় মাস্টাররোলে নিয়োগ দেয়। গত ৫ আগস্টের পর মেয়র আতœগোপনে যাওয়ার পর প্রশাসন আদালতের আদেশের প্রতি সম্মান দেখায়। সে মতে কর্তৃপক্ষ উজ্জল কুমার সাহাকে চাকুরিতে স্থায়ী পদে নিয়োগ দেন। এদিকে ৮১৯৬/১৭নং মামলায় ১৪/১২/২০১৭ তারিখের আদেশে উক্ত ৪৩ জন কর্মচারির সেবা প্রদানের তারিখ থেকে সমুদয় পাওনা পরিশোধের আদেশ থাকা সত্বেও কেসিসি আদেশ বাস্তবায়ন করেনি। এতে করে ক্ষুব্দ কর্মচারিরা আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য গত ২০২২ সালে পুনরায় হাইকোর্টে কোর্ট অব কনডেম মামলা দাখিল করেছেন। মামলাটি বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। চাকুরি ফেরৎ পাওয়া উজ্জল কুমার সাহা বলেন, চাকুরি স্থায়ী করার আন্দোলনে আমি নেতৃত্ব দেই। সবার চাকুরি হলেও কর্তৃপক্ষ আমার চাকুরি দেয়নি। আমি শুধু আ’লীগ না করার অপরাধে সাবেক মেয়র ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। এ জন্য তারা আমাকে অনেক হয়রানী ও নির্যাতন করেছে। বর্তমান কর্তৃপক্ষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তাকে স্থায়ী চাকুরিতে যোগদানের সুযোগ করে দেয়ায় তিনি কেসিসি বর্তমান কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button