স্থানীয় সংবাদ

বন্ধুর বর্ণনায় উঠে এলো খালিশপুরে চাঞ্চল্যকর কলেজছাত্র হাসিব হত্যা

চার বছর পর রায় ২২ অক্টোবর

স্টাফ রিপোর্টারঃ ১৯ আগষ্ট ২০২০, বুধবার বিকেলে খুলনার খালিশপুর লাল হাসপাতালের সামনের মাঠে ক্রিকেট খেলেন হাজী মুহাম্মাদ মুহসীন কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র মো: হাসিবুর রহমান নিয়াজ। পরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে যান খালিশপুর কাটর্স এন্ড ক্যাফেতে । রাত ৯টার দিকে হঠাৎ ওইস্থানে হামলা চালায় ওই এলাকার কতিপয় মাদক কারবারী। আর এই হামলায় নিহত হন হাসিবুর রহমান। এ সময় আহত হন হাসিবুরের দু’ বন্ধু। আঘাতে ক্ষত চিহ্ন নিয়ে দীর্ঘ ৪ বছর সন্ত্রাসীদের অব্যাহত হুমকিতে যোবায়ের ও রানা পালিয়ে থাকলেও বৃহস্পতিবার এ হত্যা মামলার যুক্তিতর্কের শেষ দিনে আদালতে হাজির হয়েছিলেন দু’ভুক্তভোগী। তাদের মুখ থেকেই জানা গেল সে দিনের ঘটনার আদ্যপান্ত।
নিহত হাসিবের বন্ধু যোবায়ের বলেন, এ হত্যাকা-ের সূত্রপাত ছিল মাদক কারবার ও কলেজের মেয়েদের ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে। হাসিব সবসময়ে মাদক ও ইভটিজিংয়ের বিরোধীতা করত। আর এ কারণে এজাহারে উল্লেখিত আসামিরা প্রায় ফোন করে হাসিবকে হুমকি দিত। তবে কখনোই এসব হুমকির কোন তোয়াক্কা করত না হাসিব।
তিনি আরও বলেন, হাসিব হত্যাকা-ের সপ্তাহ দুয়েক আগে খালিশপুর প্লাটিনাম ২নং গেট এলাকা থেকে পুলিশ পরিত্যাক্ত অবস্থায় ২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মাদক কারবারীরা হাসিবকে সন্দেহ করে। এক সময়ে তারা হাসিবকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সন্ত্রাসীরা হত্যার জন্য খালিশপুর শিশু পার্ক সংলগ্ন কাটর্স এন্ড ক্যাফে সেন্টারকে বেছে নেয়। রাত ৯ টার দিকে আড্ডা দিতে হাসিবুর রহমান নিয়াজসহ তারা সেখানে যান। সেখানে ২৫/২৬জন সন্ত্রাসী দেশী তৈরি অস্ত্র নিয়ে হাসিবের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। অন্তু ও মেহেদী হাসান ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাসিবের মাথায় কোপ দেয়। মাথা সরিয়ে নিলে হাসিবের দু’কাঁধে আঘাত লাগে। আঘাত পেয়ে হাসিব মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তাদের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য দু’হাত করোজোর করে রক্ষা পায়নি হাসিব। হাসিবকে বাঁচাতে তিনি এগিয়ে এলে তার ওপর চলে নির্মম নির্যাতন। সন্ত্রাসীরা যোবায়েরের ডান ও বাম হাত এবং ডান পায়ে দু’টি কোপ দেয়। কোপে যোবায়েরের ডান পায়ের রগ কেটে যায়। এ ঘটনার পর আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। স্থানীয় লোকজন হাসিবকে নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর তাকে বাঁচিয়ে রাখা যায়নি। কতর্ব্যরত চিকিৎসক হাসিবকে মৃত ঘোষণা করেন। যোবায়ের জানান, এ ঘটনায় হাসিবের বাবা হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে খালিশপুর থানায় ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৬ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর আসামিদের পুলিশ একের পর এক গ্রেপ্তার করে। স্বাক্ষী করা হয় তাকে। আদালতে স্বাক্ষী দেওয়ার পর আসামিদের পরিবারের অব্যাহত হুমকির মুখে পড়তে হয় যোবায়েরকে। প্রাণভয়ে পালিয়ে যান বরিশালে। সেখানে গিয়েও মোবাইল ফোনে অব্যাহত হুমকিতে পড়তে হয় স্বাক্ষী দেওয়ার কারণে। তিনি বলেন, আসামি অন্তুর মা শারমিন রহমান শিখা খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। তিনি বিভিন্ন সময়ে মোবাইলে তাকে হুমকি দিত। তার ছেলের কিছু হলে তাকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। তিনি আরও বলতেন, টাকায় সবকিছু কেনা যায়। টাকায় রায় বদলে দেওয়া যাবে কিন্তু তোর কি হবে। এ হুমকি পেয়ে প্রাণভয়ে তিনি খুলনা ত্যাগ করে বরিশালে চলে যান। মামলার বাদী হাসিবের অসহায় বাবা হাবিবুর রহমানও আসামিদের অব্যাহত হুমকির কারণে প্রাণভয়ে খুলনা ত্যাগ করে বরিশালে চলে যান। তিনি আরও বলেন, হাসিবের বাবা হাবিবুর রহমান ৮ অক্টোবর’২৪ আদালতে হাজির হন। পরবর্তীতে বাড়ি ফেরার জন্য প্রস্তুত হলে এ মামলার ৩ নং আসামি অন্তুর মা শারমিন রহমান শিখা (খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী) অপরিচিত নম্বর থেকে তাকে হুমকি দিতো। এ সময়ে হাবিবুর রহমানকে শিখা বলেন, আমার ছেলে অন্তুর কিছু হলে তোকে শেষ করে ফেলব। তুই একছেলেকে হারিয়েছিস, অপর ছেলেকে হারাবি। ওই নারী তাকে আরও হুমকি দিয়ে বলে, পরবর্তী দিনে তুই আদালতে আয়, তোর কোন বাপ তোকে বাঁচাবে। এ ঘটনায় হাসিবের বাবা ১৩ অক্টেবর খুলনা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। আদালতে থাকা অবস্থায় এ রকম হুমকিতে তিনি নিরাপ্তাহীনতায় ভুগছেন। হাসিবের বাবা হাবিবুর রহমান হুমকির ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, ছেলে হত্যার বিচার নিতে এসে এখন নিজে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কী করবো তা এখন ভেবে পাচ্ছি না। আসামীরা বেশীর ভাগ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এদিকে কলেজ ছাত্র হাসিবুর হত্যা মামলার রায় আগামী ২২ অক্টোবর ধার্য করেছন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক আব্দুস ছালাম। বৃহস্পতিবার মামলার যুক্তিতর্ক শেষে বিচারক রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৯ আগস্ট রাত ৯টার দিকে খালিশপুর হাজী মুহাম্মাদ মুহাসীন কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র হাসিবুর রহমান নিয়াজ সন্ত্রাসীদের ধারলো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান তদন্ত শেষে ২৬ জন আসামির নাম উল্লেখ করে থানা অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তিনি তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, মাদক বিক্রির প্রতিবাদ করায় অন্তুর নেতৃত্বে এ খুন হয়। অভিযুক্ত আসামিরা হলেন, রওশন আনিজি অন্তু, মো: ফয়েজুর রহমান আরাফাত, সৈকত, মোঃ মেহেদী হাসান রাব্বি, মো: সাজ্জাত হোসেন, ইমদাদুল ইসলাম হৃদয়, মো: আরিফ ওরফে চোরা আরিফ, মো: মুন্না, রফিকুল হাসান শাওন ওরফে আতাং বাবু, মো: সাইফুল, মো:মোস্তাক আহমেদ, মিঠাই হৃদয়, মো: ফাহিম ওরফে কালা ফাহিম, রুবেল, মো: মিজানুর রহমান, সবুজ, মো: তুষার, তুষার আশিকুর রহমান মোল্লা, রাব্বি ওরফে নাটা রাব্বি, নাইম বাবু ওরফে পয়েন্ট বাবু, রায়হান, ইয়াছির রাব্বি ওরফে জুয়েল ওরফে নাটা জুয়েল, সালমান, সাকিব শেখ, নাঈমুর রহমান ফাহিম, রুনু হওলাদার।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button