সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা বরাবর সংগ্রাম পরিষদের স্মারকলিপি
খবর বিজ্ঞপ্তি ঃ থ্রী-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা-২০২৪ চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ এবং নীতিমালার আলোকে আধুনিকায়ন করে রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের নিবন্ধন, গত সরকারের আমলে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এবং পুলিশ কর্তৃক আটককৃত ব্যাটারী-মোটর ফেরত ও ক্ষতিপূরণ দেয়া, চালকদের লাইসেন্স ও রুট পারমিট প্রদান এবং সড়ক মহাসড়কে স্বল্পগতির ও লোকাল যানবাহনের জন্য সার্ভিস রোড/বাইলেন নির্মাণসহ ৮ দফা দাবিতে আজ ২৪ অক্টোবর বেলা ১১:৩০টায় খুলনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেছে রিকশা, ব্যাটারী রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ, খুলনা মহানগর কমিটি। জেলা প্রশাসকের অনুপস্থিতিতে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জনাব বিতান কুমার মন্ডল। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে জেলা প্রশাসকের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগ্রাম পরিষদ খুলনা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক এস এম আলমগীর হোসেন বাবু এবং সঞ্চালনা করেন কোষাধ্যক্ষ কোহিনুর আক্তার কনা। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কমিটির সদস্য সচিব জনার্দন দত্ত নান্টু, আব্দুল করিম, দৌলতপুর থানা ব্যাটারী রিকশা মালিক সমিতির সভাপতি লোকমান শেখ, সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ, সংগ্রাম পরিষদ খালিশপুর থানা কমিটির সভাপতি ইউনুস আহমেদ মাসুদ, সহ-সভাপতি ফিরোজ মোল্লা, দৌলতপুর থানা মালিক সমিতির সহ-সভাপতি শহীদ বিশ্বাস, যুগ্ম সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক রাহাত হাওলাদার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নান্টু হাওলাদার, প্রচার সম্পাদক বিপ্লব বিশ্বাস, সংগ্রাম পরিষদ সদর থানা সংগঠক আব্দুল আলিম, জাহাঙ্গীর হোসেন, রমজান গাজী, বিল্লাল সরদার প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, রিকশা চালানো কত অমানবিক পরিশ্রমের কাজ। আমদানিকৃত ইজিবাইক দিয়ে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের শুরু হলেও চালকদের পরিশ্রম লাঘব করা, যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য আর খরচ কমানোর কথা বিবেচনা করে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে রিক্সায় ব্যাটারি স্থাপন করা শুরু হয়। প্রথমদিকে নির্মাণজনিত কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও ইতোমধ্যে তার অনেকাংশই দূর করে আধুনিকায়ন করা সম্ভব হয়েছে। ফলে দ্রুত এই বাহন যেমন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে তেমনি ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এই সব বাহন ব্যবহার সহজ, সস্তা এবং শহরের ছোট রাস্তায় চলতে পারে বলে স্বল্প আয়ের মানুষের দৈনন্দিন কাজে এক অপরিহার্য বাহন হয়ে দাড়িয়েছে। নেতৃবৃন্দ আরোও বলেন, সারা দেশে প্রায় ৫০ লাখ চালক পরিবার এইসব ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলার ও সমজাতীয় যানবাহনের উপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। এইসব যানবাহন তৈরি, মেরামত, খুচরা যন্ত্রাংশ নির্মাণ, বিক্রি, চার্জিংসহ নানা ধরনের কাজে অসংখ্য মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্ভরশীল। দেশের সকল জেলা ও বিভাগে নগর পরিবহণ নেই ফলে কোটি কোটি মানুষ ব্যাটারি চালিত যানবাহন ব্যবহার করে থাকে। এই খাত যেমন বিপুল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার অবদান রাখছে। যা মোট জিডিপির প্রায় ১২ ভাগ। এর সাথে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের নিবন্ধন ও চালকদের লাইসেন্স প্রদান করলে সরকারে রাজস্বেও বাড়তি টাকা যুক্ত হবে।এই বাহন পরিবেশ বান্ধব এবং বায়ু ও শব্দ দূষণ করে না।বিদ্যুৎ ব্যবহারের কারণে এদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ চুরি এবং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারের অভিযোগ করা হয়। অথচ এইসব বাহন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, চালকেরা বিদ্যুৎ চুরি করে না বরং বর্ধিত দামে (প্রায় ২৫ টাকা ইউনিট) বিদ্যুৎ কিনে থাকে। তাই কর্মসংস্থান, জীবিকা, যাতায়াত এবং দেশের অর্থনীতির বিকাশের কথা বিবেচনা করলে এই খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নেতৃবৃন্দ আরোও বলেন, সংগ্রাম পরিষদ দীর্ঘ ১২ বছর নীতিমালা তৈরি করে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের নিবন্ধন, চালকদের লাইসেন্স, প্রতিটি সড়ক মহাসড়কে ইজিবাইক, রিকশাসহ স্বল্পগতির ও লোকাল যানবাহনের জন্য বাই লেন বা সার্ভিস রোড নির্মাণ ও সড়কে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। আন্দোলনের চাপে খসড়া “থ্রী-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযান সুষ্ঠু ব্যবস্থপনা ও নিয়ন্ত্রন নীতিমালা-২০২৪” হলেও এখনও তা চূড়ান্ত হয়নি। মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের ৪ এপ্রিল ও ২৫ এপ্রিলের রায়ে মহাসড়ক ব্যতীত সর্বত্র চলাচলে বাধা নেই বলে আদেশ প্রদান করেছেন। কিন্তু নানা অজুহাতে ব্যাটারিচালিত যানবাহনে চলাচলে নানা বিধি নিষেধ ও অবৈধ চাঁদাবাজি, রেকারিং চলছে। নেতৃবৃন্দ সড়কে নিয়ম শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ ও রাজস্ব খাতে আয় বৃদ্ধিতে দ্রুত ব্যাটারিচালিত যানবাহনের জন্য থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযান নীতিমালা-২০২৪ চূড়ান্ত ও দ্রুত গেজেট প্রকাশ, তার আলোকে কারিগরি ত্রুটি সংশোধন করে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের আধুনিকায়ন, ব্যাটারি রিক্সা ও ইজিবাইকের নিবন্ধন, লাইসেন্স ও রুট পারমিট প্রদান, চালকদের প্রশিক্ষণ এবং প্রতিটি সড়ক মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য বাই লেন/সার্ভিস রোড নির্মাণসহ সংগ্রাম পরিষদ ঘোষিত ৮ দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।