খুলনায় ভয়াবহ লোডশেডিংএ অস্থির জনজীবন!
# দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় লোডশেডিং মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করে কাজ কর্ম, উৎপাদন
# ব্যবসা-বাণিজ্যে ধ্বস নামার আশঙ্কা #
মেহেদী মাসুদ খান ঃ আমাদের দেশে আমরা যুগ যুগ ধরে দেখে আসছি সাধারণত ২০ অক্টোবরের পর থেকে শীত জেঁকে বসতে শুরু করে। একটা বৃষ্টি ডেকে আনে এই শীতকে। কিন্তু এবার গতকাল অক্টোবর বিদায় নিলো কিন্তু শীতের দেখা নেই, চলছে তীব্র গরম। এর মধ্যে আগুনে ঘি ঢালছে ঘন ঘন লোডশেডিং। খুলনা শহরে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিঃ এর বিদ্যুৎ আর মফস্বল বা গ্রামাঞ্চলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পল্লী বিদ্যুৎ মাঝে মধ্যে মানুষ পাচ্ছে। এতে করে বিদ্যুৎ চালিত সেচ, কারখানার উৎপাদন, কম্পিউটার নির্ভর প্রতিষ্ঠান, ডিজিটাল সব কিছুই মুখ পড়তে শুরু করেছে। খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় চলছে এই লোডশেডিং। লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে খুলনার অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পোস্ট / ভিডিও ছাড়তে শুরু করেছেন। সেখানে চলছে ভুক্তভোগিদের মন্তব্য। খুলনায় শহরের তুলনায় গ্রামে লোডশেডিং আরও বেশি।
খুলনা বিভাগের ১০ জেলা, বরিশাল বিভাগের ৩ জেলা ও বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫ জেলাসহ মোট ২১ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। সংস্থাটির খুলনা মহানগরীর বয়রা এলাকার প্রধান কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এই ২১ জেলায় বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছে প্রায় ১৪ লাখ ২৮ হাজার। এর মধ্যে শুধুমাত্র খুলনায় গ্রাহক আছে প্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার। ২১ জেলায় ওজোপাডিকোর আওতাধীন এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৬৫৯ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৫৬০ মেগাওয়াট, অর্থ্যাৎ লোডশেডিং ছিল ৯৯ মেগাওয়াট। এর মধ্যে শুধুমাত্র খুলনাতেই লোডশেডিং ছিল ৪৫ মেগাওয়াট। এছাড়া বরিশালে ১১ মেগাওয়াট, গোপালগঞ্জে ৫, নড়াইলে ২, মাগুরায় ৩, সাতক্ষীরায় ২, কুষ্টিয়ায় ৬, চুয়াডাঙ্গায় ৫, ফরিদপুরে ৬, রাজবাড়িতে ৪, মাদারীপুরে ৪, শরীয়তপুরে ২ ও ঝালকাঠিতে ৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল। নগরীর নিউ ডাকবাংলা হার্ডমেটাল গ্যালারীতে অবস্থিত জিলানী ট্রেডিং এর মালিক বাবলা বলেন, ২ দিন ধরে দিন-রাতে ১ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে লোডশেডিং হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের সময় এই মার্কেটের ভিতরে গরমে ঢুকতে চায় না কেউ। আমাদের ফ্যান, চার্জার ফ্যান এর বেচাকেনা বেড়েচে তবে সেগুলোও ঠিকমত চালিয়ে দেখাতে পারছি না। জেনারেটর এর শব্দে আর গরমে এ্ বদ্ধ মার্কেটে কেউ ঢুকতে চায়না। ফলে ব্যবসা বাণিজ্যে ধ্বস নামছে।
নগরীর ২ কেডিএ এভিনিউতে অবস্থিত ফাতেমা টাওয়ারের নীচে অবস্থিত ফটোস্ট্যাট দোকানি শফিকুর রহমান শফিক বলেন, ২ দিন ধরে লোডশেডিং চলছে। লোডশেডিংয়ের সময় ফটোকপি করতে পারছি না লোকজন ফিরে যাচ্ছে। আমি গরীব দোকানি, আমি বিকাশ, নগদ, রিচার্জ, কিছু ফার্স্ট ফুড আর ফটোস্ট্যাট নিয়ে বসেছি। ফটোকপি করে এখানকার কমার্শিয়াল জোনের বহু অফিসের লোকজন আসে। পুরা ব্যবসা বন্ধ হতে চলেছে। উপরন্তু বিদ্যুৎ এলে কারটা আগে দেবো, কারটা দেরি হলো চেঁচামেচি, হট্টগোল লেগেই আছে। তারপরে গরমে ঘেমে যাই এই ঘুপচির মধ্যে । পশ্চিম টুটপাড়া নিবাসী এমএম মিন্টু বলেন, খুলনায় আবার লোডশেডিং শুরু হয়েছে। গরমে ঘুমাতে পারছি না। ছেলের লেখাপড়া হচ্ছে না। অনেক দিন মোমবাতি কেনা লাগতো না, এখন আবার কিনতে হচ্ছে। একই এলাকার সজিব মামা বলেন, রাত-দিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এদিকের অবস্থা খুবই খারাপ এখানে মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ আসছে।। প্রচ- গরমেও ফ্যান চালানো যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ যাওয়ার পর এক ঘণ্টার মধ্যে আসছে তাতেই স্বস্তি। খুলনার পাশ্ববর্তী রূপসা উপজেলার রূপসা পত্রিকা ব্যবসায়ী তাছির বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। রাতে ঘুমাতে পারিনা দিনে পত্রিকা বিক্রি করতে আসতে লেট হয়ে যাচ্ছে। খুলনায় হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক হুমায়ুন কবীর বলেন, লোডশেডিং হলে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কোল্ড স্টোরেজে তাপমাত্রা ঠিক রাখতে পারে না। লোডশেডিং চলাকালে জেনারেটর চালিয়ে রাখতে বাড়তি ব্যয় হয়। এ ব্যাপারে নাম ওজোপাডিকোর ডিভিশন ৪ এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রকৌশলী বলেন, কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কয়লা ও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখিয়ে বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি ভারতে ঝাড়খন্ড আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে থেকে ১৩২০ মেগওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি বন্ধ রয়েছে। সে কারণে ঘাটতিপূরণে লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এটা শুধু খুলনা অঞ্চলে নয়, আরও অনেক জেলায় হচ্ছে।