দ্রুত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
# খুলনায় বর্নাঢ্য র্যালী পুর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে #
স্টাফ রিপোর্টার ঃ বিএনপির স্থায়ী কমিটিরি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে জনগণ কী চায়। রাজনৈতিক দলকে আলাদা আলাদা ভাগ করার দরকার নেই। রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিতে হবে, তাদের সহযোগিতা নিতে হবে। তা না হলে আপনারা এই মাজা ভাঙা প্রশাসন দিয়ে কিছুই করতে পারবেন না। আমরা বিদায়বেলায় বর্তমান উপদেষ্টাদের লাল গোলাপ শুভেচ্ছা দিয়ে বিদায় দিতে চাই। অন্য কোনো পথে হোক এটা আমরা আশা করি না। পরিবর্তন আছে, সংস্কার আছে সবকিছুর সঙ্গে একমত, কিন্তু জনগণের নির্বাচিত পার্লামেন্ট ছাড়া সংবিধানের কোনো কিছু পরিবর্তন করা যায় না। আমরা এই সরকারকে সহযোগিতা করবো- সেটা একটা যৌক্তিক সময় পর্যন্ত। দেশে দ্রুত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বিকাল ৪টায় নগরীর শিববাড়ি মোড়স্থ জিয়াহল চত্ত্বরে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে খুলনা মহানগর বিএনপি আয়োজিত তিনদিনের কর্মসুচির দ্বিতীয় দিনে বর্নাঢ্য র্যালী পুর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গয়েশ^র চন্দ্র রায় দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, আর ৫ আগস্ট আমরা স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। এই অর্জন আমাদের ধরে রাখতে হবে। বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা কথা একটু কম বলেন, কিন্তু তার আশেপাশে কয়েকজন আছেন- যারা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দু-একটা রাজনৈতিক দল জীবনেও ক্ষমতায় আসবে না, আসলেও কারও পিছে পিছে আসতে পারে। তারা মনে করে ক্ষমতায় এসে গেছে। অফিসে আদালতে এখানে সেখানে পোস্টিং-ট্রান্সফার নিয়ে ব্যস্ত। আমরা এই সরকারকে সহযোগিতা করবো। একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে, এর বেশি আমাদের কোনো কথা নেই। পরিবর্তন আছে, সংস্কার আছে, সব কিছুর সঙ্গে আমরা একমত। কিন্তু একটি নির্বাচিত সংসদ ছাড়া সংবিধানের কোনো কিছু পরিবর্তন করা যায় না। তিনি কয়েকজনকে ইঙ্গিত করে বলেন, কারো কারো ভাবখানা এমন তারা হাসিনারে তাড়িয়েছে, আর আমরা শেখ হাসিনার পাকা চুলে কলপ লাগিয়েছি। ছাত্রদের আন্দোলনের ফসল এরাই ধ্বংস করে দেবে। কারণ তাদের রাষ্ট্র চালানোর অভিজ্ঞতা নেই, রাজনীতির অভিজ্ঞতা নেই। তারা আবোল-তাবোল কথা বলে, কটাক্ষ করে আমাদের। আমরা ১৬ বছর কী করেছি- শেখ হাসিনার মাথায় বাতাস করেছি? তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সময় মরা মানুষ ভোট দিয়েছে, কিন্তু জীবিত মানুষ ভোট দিতে পারেনি। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, আমাদের অনেক নেতাকর্মী নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে। অসংখ্য মামলার আসামি হয়েছি, জেল খেটেছি। তিনি ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান দেশে এক দলীয় বাকশাল কায়েম করেছিলেন। এরপর তিনি মারা পওয়ার পর দেশের মানুষ ৭ই নভেম্বর একটি বিপ্লবের মাধ্যমে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
র্যালিপূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার দোসরা এখনো সক্রিয় আছে। দোসরদের ব্যাপারে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে। গবেষণা সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম বলেন, আমাদের আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি। আমরা আন্দোলন করেছি ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। যতদিন না জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে ততদিন আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য শেখ মুজিবর রহমান, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খান রবিউল ইসলাম রবি। এসময় মঞ্চে মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশ শেষে প্রধান অতিথি বেলূন ফেস্টুন উড়িয়ে পরে বর্ণাঢ্য র্যালির উদ্বোধন করেন। র্যালীটি শিববাড়ি মোড় থেকে শুরু হয়ে ময়লাপোতা, সাতরাস্তার মোড়, রয়েল চত্ত্বর গিয়ে শেষ হয়। র্যালিতে বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বেলা আড়াইটা থেকে বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে বাদ্যযন্ত্র, দলীয় ও জাতীয় পতাকা নিয়ে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে জমায়েত হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। বিকাল সাড়ে ৩টার মধ্যে শিববাড়ি জিয়াহল চত্ত্বর কানায় কানায় র্পুন হয়ে যায়।