স্থানীয় সংবাদ

খুবিতে কনসার্ট করে ‘সিগারেট বিক্রি’ ভন্ডুল

# সজাগ থাকার আহ্বান সংশ্লিষ্টদেও #

স্টাফ রিপোর্টারঃ শুক্রবার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) অনুষ্ঠিত ব্যান্ড সংগীতানুষ্ঠানটি একদিকে ছিল উৎসবের, অন্যদিকে জনস্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টির আশঙ্কাও ছিল প্রবল। উপাচার্যসহ খুবি প্রশাসন ও তামাকবিরোধী সংগঠনের তৎপরতায় কঠোর নজরদারি ও মনিটরিংয়ের পর কনসার্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত তামাক কোম্পানির অস্থায়ী বুথগুলো অপসারণসহ সিগারেট বিক্রি বন্ধ করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্র্যান্ডের পরিচিতি বজায় রাখতে ‘লেটস ভাইব’ স্লোগান এবং নিজেদের ব্র্যান্ডের রঙ ব্যবহার করে। সূত্রে জানা যায়, ৯০ হাজার সিগারেট বিক্রির টার্গেট নিয়ে জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল ‘ঢাকা ব্রডকাস্ট’ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘লেটস ভাইব’ শিরোনামে কনসার্ট আয়োজন করে। বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের (বিএটিএ) সদস্য ফারহানা জামান লিজা বলেন, ‘তামাক কোম্পানিগুলোর মূল টার্গেট কিশোর ও তরুণরা। এই কিশোর-তরুণদের সিগারেটের নেশা ধরিয়ে দিতে তামাক কোম্পানি বিভিন্নভাবে বিভিন্ন নামে প্রচারণা চালাচ্ছে। যার মধ্যে এই “লেটস ভাইব” একটি কর্মযজ্ঞ।’তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ থাকবে, তারা যেনো কোনোভাবেই ক্যাম্পাসে এই ধরনের অনুষ্ঠান করার অনুমতি না দেন।’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘অতীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের অনুষ্ঠানে সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় ছিল। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এ ধরনের অনুষ্ঠানের সুযোগ নিয়ে কেউ যাতে মাদকসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত না হতে পারে সেদিকে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।’ বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ প্রশাসনের সতর্কতাসহ কঠোর নজরদারিতে রিফ্রেশমেন্ট বুথগুলোতে সিগারেট বিক্রয় বন্ধ হয়। মাদকবিরোধী সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয় এবং পরোক্ষ প্রচারণা বন্ধ করার জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে এই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে তামাক কোম্পানির ম্যানিপুলেশন রোধে আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’ ছাত্রবিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. মো. নাজমুস সাদাত বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকের উপস্থিতি কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হয় না। ধূমপানকে না বলা হয়। সেখানে ঘোষণা দিয়ে বুথ তৈরি করে সিগারেট বিক্রির কোনও সুযোগ নেই। ঢাকা ব্রডকাস্টের সার্বিক কার্যক্রম কঠোরভাবে মনিটরিং করার মাধ্যমে বুথে সিগারেট বিক্রি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। এর আগে এ ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। তারপরও প্রশাসন নজরদারি করেছে।’ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারা ৫ অনুযায়ী, কোনও ব্র্যান্ডের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ রঙ বা স্লোগান ব্যবহার করা পরোক্ষ বিজ্ঞাপন হিসেবে গণ্য হয় এবং এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী, এই ধরনের প্রচারণার জন্য এক লাখ টাকা জরিমানা এবং তিন মাস পর্যন্ত কারাদ-ের বিধান রয়েছে। খুবি উপাচার্য ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই ধূমপানমুক্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। তাদের সংগীতানুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বুথ করে সিগারেট বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়নি। এটা বলে দেওয়ার পরও প্রশাসন থেকে কঠোরভাবে মনিটরিং করা হয়েছে।’ প্রসঙ্গত, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের খানজাহান আলী হলে শিক্ষার্থীদের নানা আয়োজনে দু’দিনব্যাপী ‘জশন-এ-খাজা’ অনুষ্ঠান হয়। সকালে রঙ উৎসব, দুপুরে প্রীতিভোজ ও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সংগীতানুষ্ঠানকে ঘিরে তামাকজাত পণ্য বিক্রি ও ধূমপানকে প্রসারিত করার লক্ষ্যে ঢাকা ব্রডকাস্ট আয়োজনের আবেদন করে অনুমতি নেয়। শুধু তাই নয়, সেখানে তামাকজাত পণ্য বিক্রি ও ধূমপানের জন্য ক্যাম্পাসে ৬টি অস্থায়ী বুথ করার অনুমতিও নেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button