স্থানীয় সংবাদ

সম্প্রতি খুলনায় যন্ত্রণার আরেক নাম ‘কারেন্ট পোকা’

# খাদ্যের অভাবে ফসলের ক্ষেতের ক্ষুদ্র এই পোকা এখন লোকালয়ে #
# ক্ষুদ্র এই পোকার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন #

মো. আশিকুর রহমান : সম্প্রতি সময়ে খুলনা নগরীতে সন্ধ্যা নামতে না নামতেই নগরবাসীকে চরম যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে একটি ক্ষুদ্র পোকার কারণে। যে কারণে রাস্তাঘাট হতে শুরু করে, বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, এমনকি ঘরের দোড় গোড়া পর্যন্ত পৌচ্ছে যাচ্ছে ক্ষুদ্র এই পোকা। এদের হাত হতে স্বস্তি মিলছেনা ঘরে বাইরে কোথাও। এই পোকার আগমনে জনজীবনে চরম বিরক্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে সর্বস্তরে। তবে এই ক্ষুদ্র পোকাটি মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারণ না হলেও ধানের জন্য ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় বলে জানা গেছে। নগরীর একাধীক স্থান ঘুরে ভোগান্তিতে পড়া মানুষের সাথে কথা বলে এই পোকার দূর্ভোগ সম্পর্কে জানা গেছে। বর্তমানে সন্ধ্যার পর বিভিন্ন খাবারের দোকান, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ীতে এই ক্ষুদ্র পোকাটি চরম ভোগান্তির সৃষ্টি করছে। আলো দেখলেই যেন এই পোকা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে যেখানে সেখানে। ভোগান্তিতে পড়া ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ এদের হাত হতে সামায়িকভাবে মুক্তি পেতে লাইটের নিচে নীম পাতা ঝুলিয়ে রাখছে। অনেকে আবার বাতিও নিভিয়ে রাখছে এই পোকা হাত হতে রক্ষা পেতে। শুরু মাত্র ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি বাড়ছে না, এই পোকা উড়ে গিয়ে চলন্ত পথচারীর চোখে মুখে ঢুকে পড়ছে। ফলে চলন্ত পথে দূর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে এই ক্ষুদ্র পোকার কারণে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পোকার নাম হলো বাদামী গাছ ফড়িং, যা কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় ইৎড়হি চষধহঃ ঐড়ঢ়ঢ়বৎ (ইচঐ) নামে পরিচিত। তবে প্রান্তিক চাষীদের কাছে এই পোকা ‘কারেন্ট’ পোকা নামে পরিচিত। প্রতি বছর রোপা আমন ধান কাটার ১৫/২০ দিন আগে এই পোকার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে রোপা আমন কর্তন। যে কারণে এই বাদামী গাছ ফড়িংয়ের বা কারেন্ট পোকার প্রার্দুভাব চরম আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো বলছে, সবুজ ধানের শক্র এই বাদামী গাছ ফড়িং। এদের বাচ্চা ও পূর্ণবয়স্ক উভয় পোকা দলবদ্ধভাবে পাতার খোল, পাতা ও পাতার মধ্যশিরার ভেতরে ডিম পারে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ৭-৯দিন সময় লাগে। বাচ্চাগুলো ৫বার খোলস বদলায় এবং পূর্নবয়স্ক ফড়িং’এ পরিনত হতে ১৩-১৫ দিন সময় লাগে। এক জোড়া বাদামী ফড়িং ৩-৪ প্রজন্মে ৩৫ লক্ষ পোকার জন্ম দিতে পারে এবং ৫ হাজার মাইল পথ অতিক্রম করতে পারে। ধান গাছের গোড়ার দিকে অবস্থান করে গাছ থেকে রস খায়। আর এ কারণে গাছ দ্রুত শুকিয়ে যায়। এদের তীব্র আক্রমনে গাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে যায়, ফলে দূর হতে আক্রমন করা ফসলের ক্ষেতটি পুড়ে যাওয়া বা বাজ পড়ার মতো দেখায়। এ ধরনের ক্ষতিকে‘ হপার বার্ণ’ বলে। বীজতলা থেকে শুরু করে ধান পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত যেকোনো সময় এদের আক্রমন দেখা দিতে পারে। বর্তমানে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে, যে কারণে এদের পরিমিত খাবার না পাওয়ার কারণে এরা ফসলের ক্ষেত ছেড়ে বাহিরে চলে এসেছে। তবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই পোকার উপস্থিতি হ্রাস পাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মুজগুন্নি ফুচকা ব্যবসায়ী স্বাধীন জানান, সংসার চলে এই দোকানের উপর। পার্কের সামনে দোকান হওয়ার সন্ধ্যার পর বেশ ভীড় জমে। কেনাবেচা ভালোই হয় কিন্তু সম্প্রতি সময়ে ছোট ছোট পোকা অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছি। এদের সংখ্যা এতো যে কোনো খাবার খোলা রাখা যাচ্ছে না। উড়ে গিয়ে খাবারের মধ্যে পড়ছে। সামনে নিম পাতা ঝুলিয়ে রেখেছি, কাজ হচ্ছে না। কেবলমাত্র লাইট বন্ধ করে দিলে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়। অন্ধকারে দোকান চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। সমাধান কি?
দৌলতপুর মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী অশোক ঘোষ জানান, সন্ধ্যার পর কেনাবেচা ভালো হয়। কিন্তু কিছুদিন ধরে সন্ধ্যা হতে না হতে কোথা থেকে ঝাকে ঝাকে ছোট পোকা এসে হাজির হচ্ছে। উড়ে গিয়ে মিষ্টির মধ্যে পড়ছে। এদের অত্যাচারে পাগল হয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে এই পোকা আলো দেখলে বেশি আসে। তাই না পেড়ে লাইন কমিয়ে দেয়। প্রতি বছরই এদের দেখা মেলে। পোকার কারণে বেশ দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কেনাবেচা করতে চরম অসুবিধা পোহাতে হচ্ছে।
ইস্পাহানী কোলনীর মুদি দোকান ব্যবসায়ী শাহিন জানান, প্রতি বছরই শীতের আগে এই পোকার আগমন ঘটে। এরা আলো দেখলে বেশি আসে। জানি না এই পোকা মানব দেহের জন্য কোনো ক্ষতি করে কিনা। ক্ষতি করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত। তবে যতটুকু শুনেছি, ধানের খুব ক্ষতি করে। তবে এদের অত্যাচারে সাধারন মানুষ চরম অতিষ্ঠ। কেনাবেচার চরম অসুবিধা হচ্ছে বর্তমানে।
পথচারী আলামিন জানান, বর্তমানে প্রায় সর্বত্রই একটা ছোট পোকার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরা সর্বত্রই উড়ে বেড়াচ্ছে। মোটরসাইকেলে চলার সময় আলো দেখলে দ্রুত সেই দিকে দৌড় মারছে। দৌড়ে চোখে মুখে ঢুকে পড়ছে। এতো দূর্ঘটনা ঝুকি বাড়ছে। এদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে।
ডিপ্লোমা কৃষিবিদ মোঃ মাফিজুর রহমান জানান, প্রতি বছর রোপা আমন ধান কাটার ১৫/২০ দিন আগে এই পোকার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়। এটি ফসলের জন্য ক্ষতিকারক হলেও মানব দেহের জন্য যেমন ক্ষতি সাধন করে না। খাদ্যের অভাবে এটা ফসলের ক্ষেত ছেড়ে চলে আসে। যেখানে আলো বেশি থাকে, সেখানে এদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়। খাবার না পেলে এই বাদামী গাছ ফড়িং আপনা আপনি মারা যায়। এ ব্যাপারে দুশ্চিন্তার কিছু নাই। এ ব্যাপারে দৌলতপুর মেট্রোপলিটন কৃষি অফিসের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন অফিসার হিরন্ময় কুন্ডু জানান, সম্প্রতি সময়ে সন্ধ্যা হলেই যন্ত্রনা পোহাতে হচ্ছে একটি ক্ষুদ্র পোকার কারণে, যার নাম বাদামী গাছ ফড়িং (ইৎড়হি চষধহঃ ঐড়ঢ়ঢ়বৎ (ইচঐ)। স্থানীয় কৃষকদের কাছে এই পোকা কারেন্ট পোকা নামে পরিচিত। প্রতি বছর রোপা আমন ধান কাটার ১৫/২০ দিন আগে এই পোকার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে রোপা আমন কর্তন। যে কারণে এই বাদামী গাছ ফড়িংয়ের প্রার্দুভাব চরম আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ক্ষেতের ফসল কাটার কারণে খাবার না পাওয়ার কারণে এরা ফসলের ক্ষেত ছেড়ে বাহিরে চলে এসেছে। ৫/৭ দিনের মধ্যে মেট্রো এলাকায় এই বাদামী গাছ ফড়িংয়ের উপস্থিতি হ্রাস পাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। মেট্রোপলিটন কৃষি অফিস দৌলতপুর খুলনার ৪টি ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের এই পোকা সম্পর্কে সচেতনতা বৃৃদ্ধির জন্য কৃষকদের নিয়ে নিয়মিত উঠান বৈঠক, মাঠ পর্যবেক্ষন, আলোক ফাঁদ স্থাপন, লিফটেল বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যহত আছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button