যশোরে কয়েকদিনের ব্যবধানে ডাকাতি খুন চুরিসহ অসংখ্য অপরাধমূলক কর্মকান্ড ঘটেছে
# রাত হলেই ডাকাত আতঙ্ক #
মোঃ মোকাদ্দেছুর রহমান রকি যশোর থেকে ঃ রাত হলেই ডাকাত,চোর ও সন্ত্রাসীদের আতংকে দিনাতিপাত করছে যশোরের ১৫ টি ইউনিয়নের বাসিন্দারা। সম্প্রতি যশোর সদরের পাঁচবাড়ীয়া গ্রামে ও ১০ নভেম্বর গভীর রাতে শহরতলী শেখহাটি বাবলাতলা প্লট-১, সেক্টর-১০ এসিআই এগ্রি বিজনেস ডিপোতে সশস্ত্র ডাকাতি বিভিন্ন পেশার মানুষের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। ডাকাতির পাশাপাশি খুন,ছিনতাই,মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও বাসা বাড়িতে চুরি রীতিমতো চরমভাবে আতংকের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। পুলিশ আছে ও মামলা হয়েছে তবে ডাকাত সনাক্ত ও লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধারে পুলিশ তেমন কোন সফলতা দেখাতে পারছেনা। দিনের পাশাপাশি রাতে অহরহ ঘটে যাচ্ছে চুরির ঘটনা। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে দু’টি ডাকাতি,খুনসহ অসংখ্য অপরাধ মূলক ঘটনা ঘটলেও পুলিশের কার্যক্রম তেমন চোখে পড়ার মতো নেই। যার কারনে দিনদিন আতংক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কোতয়ালি থানায় খোঁজ নিয়ে জানাগেছে,গত ১০ নভেম্বর গভীর রাত অনুমান আড়াইটার সময় ১৪/১৫ জনের একদল সশস্ত্র ডাকাত যশোর শহরতলী শেখহাটি বাবলাতলা এসিআই এগ্রি বিজনেস ডিপোতে হানা দেয়। ডিপোতে প্রাচীরের উপর দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ডাকাতেরা প্রথমে অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী সোহেল রানা ও সজিব কুমার বিশ^াসকে গলায় ধারালো দেশীয় তৈরী অস্ত্র ধরে তাদের চোখ,হাত,পা বেঁধে ফেলে। ডাকাতেরা নিরাপত্তা প্রহরীদের লোহার রড দিয়ে মারপিট করে এবং কোন কথা বললে খুন করে ফেলবে বলে হুমকী দেয়। অফিসের দরজার তালা ভেঙ্গে অফিসের মধ্যে প্রবেশ করে। অফিসের দোতলায় ৭টি রুমের দরজার তালা ভেঙ্গে রুমের মধ্যে প্রবেশ করে অফিসে থাকা ভোল্ট যাতে গত ৭ নভেম্বর হতে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত উক্ত ডিপো থেকে বিক্রয়ের পণ্য ও ম ার্কেট থেকে কালেকশনের প্রায় ১৫ লাখ টাকা এবং অফিসের সিসিটিভি’র ডিভিআরসহ অফিসের বিভিন্ন জরুরী গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র উক্ত সংঘবদ্ধ ডাকাতেরা নিয়ে যায়। ওই দিন ভোর রাত সোয়া ৪ টার সময় ডাকাত দল উক্ত অফিল হতে লুন্ঠন করে অফিসে মেইন গেটের তালা ভেঙ্গে পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে চলে যায়। ডাকাতদের মুখ কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল। কিছু ডাকাত যশোরের স্থানীয় আঞ্চলিক ভাষায় কথাবার্তা বলে। ডাকাতদের বয়স ২০ থেকে ৪০ বছর হবে বলে মামলার বাদি জানিয়েছেন। ডাকাতেরা একটি ক্যাশ ভোল্ট যার মূল্য দেড় লাখ টাকা, ভোল্টে থাকা নগদ ১৫লাখ টাকা ,১টি সিসিটিভির ডিভিআর, বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের ৩টি চেকের পাতা ১টি পূবালী ব্যাংকের চেকের পাতা, সর্বমোট ৪টি চেকের পাতাসহ অফিসের বিভিন্ন জরুরী কাগজপত্র নিয়ে গেছে। ডাকাতেরা নৈশ্য প্রহরীদের হাস,পা,মুখ বেঁধে ফেলে গলায় ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে ঘরের দরজার তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে। ডাকাতেরা নগদ টাকা ও বিভিন্ন মালামাল লুটপাট করে নির্বিঘেœ পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত ১১ নভেম্বর রাতে উক্ত ডিপোর সিনিয়র ডিপো ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৪/১৫ জনের নাম উল্লেখ করে ডাকাতি মামলা করেন। এর কয়েকদিন আগে,যশোর সদর উপজেলার পাঁচবাড়ীয়া গ্রামের ওয়াদুদ রহমানের বাড়িতে সশস্ত্র ডাকাতি সংঘঠিত হয়েছে। ডাকাতেরা উক্ত ব্যক্তির বাড়ির প্রধান গেটের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে। ডাকাতেরা ঘরে ঢুকে একজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা ও বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। অপরদিকে, ছুরিকাঘাতে আসাদুল ইসলাম (৩৫) নামে এক পরিবহন শ্রমিক খুন হয়। গত ১১ শনিবার সকাল ১১ টার সময় তিনি মারা যান। পুলিশের ধারনা ছিনতাইকারীদের হাতে ছুরিকাঘাত করে রক্তরক্ষণ ঘটে। পরবর্তীতে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে আসাদুল ইসলাম মারা যায়।এছাড়া, শহরের খালধার রোড এলাকা থেকে দিন দুপুরে মোটর সাইকেল চুরি সংঘঠিত হয়েছে। সংঘবদ্ধ চোরেরা ৩০ অক্টোবর দুপুরের বিকেলে পালসার মোটর সাইকেল চুরি করে সটকে পড়ে। অভিযোগে শহরের খালদার রোড পন্ডিত পুকুর পাড়ের রেজাউল করিমের বাড়ির ভাড়াটিয়া সুজন হোসেন অভিযোগে তোলেন বিকেলে বাড়ির সামনে তার ব্যবহৃত লালকালো ১৫০ সিসি ডাবল ডিক্সের পালসার মোটর সাইকেল যার রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার (যশোর ল-১৪-০০২৯) রেখে ঘরের ভিতরে যান। সন্ধ্যায়বােির বের হয়ে দেখেন তার মোটর সাইকেলটি নেই। পরে সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পান একজন ব্যক্তি এসে কৌশলে তার মোটর সাইকেলটির তালা খুলে নিয়ে চলে যায়। সদর উপজেলার পাঁচ বাড়িয়া গ্রামের ওদুদ এর বাড়িতে সশস্ত্র ডাকাতি সংঘঠিত হয়েছে। ডাকাতেরা ওদুদসহ তার ছেলে ও ছেলের বউদের জিম্মি করে উক্ত বাড়িতে হতে নগদ টাকা স্বর্ণালকারসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যায়। এ সংক্রান্ত কোতয়ালি থানায় ডাকাতি ধারায় মামলা হয়েছে।এছাড়া,যশোরের বিভিন্ন উপজেলা এলাকায় ডাকাতেরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ডাকাতেরা যে বাড়িতে টার্গেট করবে সেই বাড়িতে রাতের যে কোন সময় ডাকাতি করে। সশস্ত্র ডাকাতের ন্যায় চুরি,চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ড করে বেড়াচ্ছে। ডাকাতি ছাড়াও চাঁদাবাজি ছিনতাইয়ের ঘটনাও আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুলিশের কার্যক্রম স্বল্প পরিসরে হওয়ার সুযোগে ডাকাতসহ বিভিন্ন অপরাধীরা বিভিন্ন কৌশলে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে যশোরের সচেতন এলাকাবাসী তত্বাবধায় সরকারের উপদেষ্টাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেরছেন।