স্থানীয় সংবাদ

খুলনা বিভাগীয় বইমেলা শুরু ২৬ নভেম্বর

# কবি সাহিত্যিকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ #

স্টাফ রিপোর্টার ঃ আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত দিনব্যাপী খুলনা বিভাগীয় বইমেলা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এ মেলার আয়োজন করছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত প্রেসব্রিফিংয়ে এসকল তথ্য জানানো হয়। এদিকে বই মেলার স্থান পরিবর্তন ও কবি সাহিত্যিকদের দাওয়াত না দেয়ায় তাদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। গতকাল সন্ধ্যায় বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারে অনুষ্ঠিত কবি সাহিত্যিকদের আলোচনা সভায় এ ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কবি মশিরুজ্জামান। পরিচালনায় ছিলেন সাইফুল ইসলাম মল্লিক। প্রেসব্রিফিংকালে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফ বলেন, জ্ঞানের বাহক হলো বই। তাই জ্ঞানভিত্তিক জাতি গড়তে নিয়মিত পাঠাভ্যাসের বিকল্প নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ই-বুকের পাশাপাশি কাগজে ছাপা বইয়ের প্রতিও আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। মানুষের মাঝে পাঠাভ্যাস ফিরিয়ে আনতে বিভাগীয় বইমেলা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বইমেলা প্রতিদিন বিকাল তিনটা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত চলবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন মেলা সকাল ১০টায় শুরু হয়ে একটানা রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত চলবে। মেলার ৮০টি স্টলের মধ্যে ৬০টিতে ঢাকা থেকে আগত প্রকাশনীগুলোর বই প্রদর্শন ও বিক্রি করা হবে। এছাড়া ১০টি স্টল খুলনা বিভাগের প্রকাশকদের, চারটি স্টল বিভিন্ন সরকারি অফিস ও দুইটি স্টল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জন্য বরাদ্দ থাকবে। মেলা প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য মিডিয়া কর্নার, কবি-সাহিত্যিকদের জন্য লেখককুঞ্জ ও খাবারের স্টল থাকবে। মেলা চলাকালে মেলা প্রাঙ্গণে অবস্থিত মঞ্চে আলোচনাসভা, সেমিনার, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ পাঠ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শিশু-কিশোরদের জন্য কুইজসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। আগামী ২৬ নভেম্বর বিকাল তিনটায় মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হবে। প্রেসব্রিফিং এ অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো: হুসেইন শওকত, বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের প্রিন্সিপাল লাইব্রেরিয়ান-কাম-উপপরিচালক মোহাম্মদ হামিদুর রহমান-সহ খুলনায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে মেলা শুরুর আগেই স্টল ও মাঠ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। কারিগররা দিন রাত স্টল তৈরীর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অন্য দিকে বই মেলার চিরচেনা স্থান বিভাগীয় গণগ্রন্থগার প্রাঙ্গণে বই মেলা না করা এবং কবি সাহিত্যিকদের দাওয়াত না দেয়ার ঘটনায় করণীয় নির্ধারণ সম্পর্কে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বলা হয়, গণগ্রন্থগারের সাথে বই মেলা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। বয়রা গণগ্রন্থগার প্রাঙ্গণে প্রতি বছর বই মেলা হলেও এবার স্থান পরিবর্তন করার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বক্তারা। আসন্ন বই মেলা নিয়ে যেসব ত্রুটি হয়েছে তা যেন ভবিষ্যত একুশে বই মেলা নিয়ে না হয় সে দিকে সর্তক থাকার জন্য বলা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে একুশে বই মেলার প্রস্তুতি সভা আগামী মাসের মাঝামাঝি সময় করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সাথে ডিসেম্বর মাসে গণগ্রন্থগার প্রাঙ্গণে সাহিত্য মেলা করারও প্রস্তাবনা রাখা হয়। সব মিলিয়ে আগামী একুশে বই মেলা যাতে আরো সুন্দর ও স্বার্থকভাবে করা যায় তার জন্য পূর্ব থেকে প্রস্তুতি থাকতে হবে। কোন চক্র যাতে বিভাগীয় বই মেলার মত একুশে বই মেলার স্থান পরিবর্তন করতে না পারে সে জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। যানজটের অজুহাতে বিভাগীয় বই মেলার স্থান পরিবর্তন খুবই দুঃখজনক বলে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মল্লিকের আহ্বানে “খুলনা বিভাগীয় বইমেলা ২০২৪ এবং আমাদের করনীয়” শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তৃতা করেন বিভাগীয় গণগ্রন্থগারের উপ-পরিচালক হামিদুর রহমান, আবু আসলাম বাবু, আইনুল্লা পারভেজ, শাহ জিয়াউর রহমান, সাইফুর রহমান মিনা, আজাদুল হক, মনিরুজ্জামান মোড়ল, এস এম বদরুল আলম রয়েল, মতিয়ার রহমান, কাউসারি জাহান মঞ্জু, নুরুন্নাহার হীরা, সুদীপ কুমার কুন্ডু, এস এম শাহারুজ্জামান, সোহেলী পারভীন রুমা, আবরার আজম, সৈয়দা সোনিয়া হক, সাংবাদিক খলিলুর রহমান সুমন, সেলিম মাহবুবসহ খুলনার বিভিন্ন পর্যায়ের অর্ধ শতাধিক কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-সংস্কৃতিজন উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে খুলনায় বইমেলার অগ্রদূত, একুশে বইমেলার রূপকার এস এম হারুনুর-উর-রশীদ বাচ্চু এবং ৫২, ৬৯, ৭১, ২৪ এর গণআন্দোলনে শহীদদের উদ্দেশ্যে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ বিভাগীয় বইমেলার স্থান বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার থেকে সরিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কার্য্যালয় প্রাংগণে পরিবর্তন, মেলার প্রস্তুতি কমিটিতে কবি সাহিত্যিকদের না রাখা, স্বৈরাচারের দোসরদের বইমেলার সাথে সম্পৃক্ত করা, বিভাগীয় প্রশাসনের বিমাতাসুলভ এবং রহস্যজনক আচরণ, মেলার স্থান পরিবর্তনের কারনে সমস্যাসমূহ এবং ২০২৫এর ২১শে বইমেলা উপলক্ষ্যে করণীয় কাজসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরিশেষে খুলনা বিভাগীয় বইমেলার সার্বিক সাফল্যের জন্য সহযোগিতার অংগীকার ব্যক্ত করার মধ্যে দিয়ে সভার পরিসমাপ্তি ঘটে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button