চিতলমারীতে মানুষের কোটি কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে রেনেসাঁ
আজাদুল হক, বাগেরহাট প্রতিনিধি ঃ বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার রেনেসা এন্টারপ্রাইজ নামের আলোচিত একটি অর্থ-লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান মানাুষের কোটি কোটি টাকা নিয়ে অবশেষে পালিয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের স্বঘোষিত মালিক পিতা ও ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পেড়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীরা মানুষেরা। এখন মুলপুঁজি ফিরে পেতে আইনগত সহায়তা চেয়ে উপজেলা নির্বাহী বরাবরে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগিরা। এ ছাড়াও মানববন্ধন, মিছিল ও সমাবেশও করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ সাধারন গ্রাহকরা। চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন অনিবন্ধিত এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে খোঁজ খবর নিয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ঘটনা বিষয়ে সরেজমিনে ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা গেছে, বাগেরহাট সদরের বিষ্ণুপুর হালিশহর গ্রামে আনন্দ মোহন বিশ্বাস নামের এক ব্যাক্তি প্রথমে ‘জ্ঞান বিজয় সেবাশ্রম’ নামের একটি আশ্রম গড়ে তোলেন। এই সেবাশ্রমের ব্যানারে আনন্দ মোহন বিশ্বাস ‘রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজ’ নামে অর্থলগ্নিকারী অপর একটি প্রতিষ্ঠান করেন পাশর্^বর্ত্তি চিতলমারী উপজেলায়। এই প্রতিষ্ঠানে ৬ বছরের দ্বিগুন লাভ দেওয়ার কথা বলে ফিক্্রড ডিপোজিট, ডিপিএস, সঞ্চয় গ্রহণ, মাসিক মুনাফা স্কীমসহ বিভিন্ন প্রলোভনে অত্র এলাকার মানুষের কাছ থেকে নগদ টাকা নেওয়া শুরু করেন। সম্প্রতি গ্রাহকরা টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে দেখেন অফিসের গেটে তালা ঝুলছে। গ্রাহকরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আনন্দ মোহন বিশ্বাস ও তার ছেলে প্রবীর বিশ্বাস ওরফে তারক গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। পিতা-পুত্র পালিয়ে গেলেও তাদের পোষ্য ক্যাডাররা গ্রাহকদের নানা ধরনের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকেরা এই বিষয়ে বিচার চেয়ে ও টাকা ফেরতের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সরকারী একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। প্রতিবাদে ক্ষতিগ্রস্থরা মানববন্ধন, মাইকিং ও সভা-সমাবেশ করছে ‘রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগকারী চিতলমারী উপজেলার ভূক্তভোগী উত্তম হালদার, ইতি রানী হুই , বিকাশ বালা, লিপি মন্ডল, হাসি রায় ও লিপি পোদ্দারের করা অভিযোগ থেকে বলা হয় ‘বিজয় বিশ্বাস এতদাঞ্চলের একজন সনাতন ধর্মের গুরু ছিলেন। এ অঞ্চল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তার অসংখ্য ভক্তবৃন্দ রয়েছেন। এটাকে পুঁজি করে তার ছেলে আনন্দ মোহন বিশ্বাস জ্ঞান বিজয় সেবাশ্রমের ব্যানারে চিতলমারী উপজেলা সদরের দুর্গাপুর নামক স্থানে রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। এই প্রতিষ্ঠানে ৬ বছরে দ্বিগুন করে টাকা দেওয়ার কথা বলে ফিক্্রড, ডিপিএস, সঞ্চয় গ্রহণ, মাসিক মুনফা স্কীমসহ বিভিন্ন প্রলোভনে আশ্বাস দিয়ে অত্র এলাকার ও সেবাশ্রম ভক্তদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া শুরু করেন। তাদের লোভনীয় এই প্রলোভোনে এবং ধর্মীয় বিশ্বাসে আমারা মাসিক লাভ হিসেবে প্রতি লাখে মাসে ১ হাজার ২০০ টাকা হিসেবে ১০ লাখ টাকা ডিপিএস করি। তারা প্রতারনার মাধ্যমে আমার টাকা আত্মসাৎ করেছে। এখন অফিসে তালা দেওয়া রয়েছে। টাকা চাইতে গেলে তাদের ক্যাডার বাহিনীর লোকজন গালিগালাজসহ নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলেন, আনন্দ মোহন বিশ্বাস ও তার ছেলে প্রবীর বিশ্বাস ওরফে তারক কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে। এখন টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য অত্র অঞ্চলের শতশত গ্রাহক সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, মাইকিং ও সভাসমাবেশ করছে। তবুও টাকা ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। উপজেলার কাননচক গ্রামের দিনমজুর হাসি রায় বলেন,‘আমি বিধবা নারী। আমার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। মেয়েটি নাসিং পড়াশুনা করে। সে জন্য বহু কষ্টে আনন্দ মোহন বিশ্বাসের শ্যালক সুশাংশু শেখর সদাই আমার পূর্ব পরিচিত হওয়ায় রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজে টাকা জমা রাখতে বলেন। আমি টাকা না রাখতে চাইলে সদাই বলে আপনার টাকা লাভসহ তিনি ফেরত দেবেন। তার প্রলোভনে আমি ৬ বছরে ডাবলের একটি হিসেবে ২ লাখ টাকা, আমার মেয়ে দিপা রায়ের নামের সঞ্চয়ী হিসেবে ৮ হাজার ৫০০ টাকা ও ছেলে সুজন রায়ের নামে সঞ্চয়ী হিসেবে ৮ হাজার ৫০০ টাকা জমা রাখি। এখন দেখি অফিসে তালা। আর সুধাংশু শেখর সদাইয়ের কাছে গেলে সে আমাকে টাকা না দেওয়ার জন্য নানা তাল বাহানা করছে। এখন টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য গত রবিবার ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। একই গ্রামের লিপি মন্ডল বলেন,‘রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজের মালিক আনন্দ মোহন বিশ্বাস ও তার শ্যালক সুশাংশু শেখর সদাইয়ের কথামত মাসে প্রতি লাখে ১ এক হাজার ২০০ টাকা হিসেবে ৪ লাখ ৭ হাজার টাকা ফিক্্রড ডিপোজিট করি। ৬ বছরে ডাবলের আরও একটি হিসেবে ২০ হাজার টাকা জমা রাখি। আমার বাবা অনাদী মন্ডল জায়গা বিক্রি করে তার নামে ৬ বছরে ডাবলের আরও একটি হিসেবে দেড় লাখ টাকা জমা রাখে। আমার মেয়ে তিষা মন্ডলের নামের সঞ্চয়ী হিসেবে ৮ হাজার ৫০০ টাকা ও আমার ছেলে পল্লব মন্ডলের নামে সঞ্চয়ী হিসেবে ১৭ হাজার টাকা জমা করি। আমার পরিবারের মোট ৬ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকাসহ শতশত মানুষের আনন্দ মোহন বিশ্বাস ও তার ছেলে নিয়ে পালিয়েছে। রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজের মাঠকর্মী সুধাংশু শেখর সদাই, প্রশান্ত ও সত্যজিৎ মন্ডল বলেন, ‘আমরা ওই প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছি। প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ গ্রাহক রয়েছে। মালিকপক্ষ গা ঢাকা দিয়েছেন। গ্রাহকদের জমাকৃত টাকা ফেরত না দেওয়ায় আমরাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজের পরিচালক আনন্দ মোহন বিশ্বাসের মুঠোফোনে পাওয়া যাচ্ছেনা। রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজের বিজনেস অপারেশন ম্যানেজার প্রবীর বিশ্বাস ওরফে তারকের মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাপস পাল বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। অভিযোগ গুলো ক্ষতিয়ে দেখে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।