ভীড় বাড়ছে খুলনার ‘ওএমএস’ কৃষিপণ্য বিক্রিতে
# নগরীর ১০টি পয়েন্টে বিক্রি হচ্ছে ৫ পণ্যের প্যাকেজ মাত্র ৩৫০ টাকায় #
# আলু, পেয়াজ ও ডিম সল্প দামে কিনতে পেরে চরম উপকৃত হচ্ছেন সাধারন আয়ের মানুষ #
এম.এ রহমান ঃ স্বস্তি মিলছেনা খুলনা নগরীর নিত্যপণ্যের বাজারে। নিত্যপণ্যের দাম আকাশ ছোয়া হওয়ার কারণে সাধারন নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের মাঝে সমালোচনা ও উদ্বেগের শেষ নেই। সমাজের নি¤œবিত্ত মানুষগুলো প্রতিদিন তাদের পরিবার-পরিজনের আহার যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন, কারণ তাদের আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি। এমতাবস্থায় নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রন ও সাধারন মানুষকে স্বস্তি দিতে ইতোমধ্যে খুলনার ‘খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস)’ নামে কৃষি বিপণন বিভাগের উদ্যোগে সাশ্রয়ী মূল্যে কৃষি পণ্য বিক্রি কর্মসূচি বাস্তবায়ণ হচ্ছে। খুলনার নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ‘খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস)’ কৃষিপণ্য বিক্রিতে সম্প্রতি সময়ে কয়েক দিনের তুলনায় ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে পন্য কিনছে সাধারন মানুষ। পণ্য কিনতে আসা সাধারন মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান নিত্যপণ্যের মধ্যে বাজারে আলু, পেয়াজ ও ডিম যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তার তুলনায় ট্রাক হতে দেওয়া প্যাকেজটি লাভজনক এবং সাধারন মানুষ চরম উপকৃত হচ্ছেন। বেচাবিক্রি শেষ হলেও অনেকে দাড়িয়ে থেকে প্যাকেজটি কিনতে না পেরে ফিরেও গেছেন বলে জানা গেছে। তবে যতক্ষন পর্যন্ত ট্রাকে পন্য থাকবে ততক্ষন পর্যন্ত ক্রেতাদের মাঝে পণ্য বিক্রি চলবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। কৃষি বিপণন বিভাগ খুলনার সূত্রে জানা গেছে, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রন ও নিত্যপণ্য ক্রয়ে সাধারন মানুষকে স্বস্তি দিতে সপ্তাহের ৬দিন ৫টি পণ্যের প্যাকেজ ৩৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে খুলনা মহানগরীর ১০টি পয়েন্ট শিববাড়ী মোড়, বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়, খুলনা মেডিকেল কলেজ মোড়, দৌলতপুর, খালিশপুর, গল্লামারী, লবণচরা, মুজগুন্নি বাস্তহারা, রেলিগেট/ফুলবাড়ীগেট ও জাতিসংঘ পার্ক/ শান্তিধাম মোড়। নির্ধারিত পয়েন্ট থাকলে ওই এলাকায় ঘুরে ঘুরে প্রতিদিন ট্রাকসেলের মাধ্যমে ওই সকল পণ্য সমূহ সাধারন মানুষের মাঝে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি পয়েন্ট বা ট্রাকসেল হতে ২৫০ জনের মাঝে ৫টি পণ্যের প্যাকেজ বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ২৫০ জনকে প্যাকেজ দেওয়ার পরও যদি কোনো প্যাকেজ থেকে যায়, তাও বিক্রি করা হচ্ছে সাধারন মানুষের মাঝে। খুলনায় ওএমএস কার্যক্রমে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) নগরীর দৌলতপুর পাবলা বণিকপাড়া এলাকার ট্রাক সেলটির তদারকী করে জানা গেছে, প্রতিটি প্যাকেজে ৪ কেজি আলু, ১ কেজি পেঁয়াজ, ১ ডজন ডিম, ১টি লাউ ও ১টি ফুলকপি এই ৫টি পণ্যের একটি প্যাকেজ বিক্রি করা হয়েছে। ওই প্যাকেজে প্রতি কেজি আলু ৩০ টাকায়, পেঁয়াজ ৭০ টাকায়, ডিম ডজন ১১০ টাকা, ১ টি লাউ ২৫ টাকা ও ১ টি ফুলকপি ২৫ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে। একই দিনে এই ৫টি পণ্যের বাজার মূল্য ছিল প্রতি কেজি আলু ৭৫ টাকা, পেঁয়াজ ১১০ টাকা, ডিম এক ডজন (বড়) টাকা ১৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৪০-৫০ টাকা ও ১টি ফুলকপি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। পণ্য কিনতে আসা ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ট্রাকসেলের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্য পণ্য কিনতে পেরে তারা অত্যন্ত খুশি। কারণ বর্তমান নিত্যপণ্যের মধ্যে বাজারে আলু, পেয়াজ ও ডিম যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তার তুলনায় ট্রাক হতে দেওয়া প্যাকেজটি লাভজনক এবং তারা চরম উপকৃত হচ্ছেন। পণ্য কিনতে আসা গৃহিনী রাহিলা বানু বলেন, গতকাল সকালে দেখি বাসার সামনে একটি ট্রাক দাড়িয়ে আসে। কাছে গিয়ে দেখি ৩৫০ টাকার মধ্যে আলু, ডিম, পেয়াজ ও ২ প্রকার সবজি দিচ্ছে। রবিবার বাজার থেকে আলু এনেছি ৭৫ টাকা করে। ট্রাকে দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৩০ টাকা কেজি দরে। পেয়াজ ও ডিমের দামও বাজার হতে অনেক কম। প্যাকেজটি কিনে আমি চরম উপকৃত হয়েছি। সেই সাথে বাজার হতে সল্প লাভে কিনেছি। আমার স্বামী একজন রিক্সা চালক। আমাদের মতো গরীব মানুষের জন্য এই কার্যক্রম যেন চলমান থাকে, তাহলে পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকবো। পণ্য কিনতে আসা গৃহিনী উর্মিলা ঘোষ নামে এক গৃহিনী বলেন, বাজারে আলু, পেয়াজ, ডিমসহ সবজির যে দাম কিনতে হিমশিম খাচ্ছি আমাদের মতো সাধারন মানুষ। কিন্তু ট্রাকে করে মাত্র ৩৫০ টাকায় ডিমসহ ৫ প্রকারপণ্য দেওয়া হয়েছে। কম দামে এসব পণ্য পেয়ে আমরা গরীব মানুষেরা বর্তমান সময়ে চরম উপকৃত হয়েছি, এই কার্যক্রম যে চলমান থাকে। এই কার্যক্রম চলমান থাকলে সাধারন মানুষ স্বস্তি পাবে। যে আলু বাজারে ৭৫ টাকা, তাই ট্রাকে ৩০ টাকা করে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের যে আমরা সল্পমূল্য এসব পন্য কিনতে পারছি। কলেজ ছাত্রী টুম্পা মল্লিক জানান, আমরা কয়েকজন ক্লাসমেট মিলে একটি ছাত্রী নিবাসে থাকি। ড্রাইনিং চালিয়ে খেতে হয়। নিজেদের বাজার, নিজেদের করতে হয়। সেই সুবাদে বাজারে যাওয়া পড়ে। গতকাল বাজারে যাওয়ার সময় পাবলা গাছতলা মন্দিরের সামনে দেখি ট্রাকে করে ৫টি পণ্যে একটি প্যাকেট ৩৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে আলু, ডিম ও পেয়াজের যে দাম ট্রাকে তার হতে অনেক দাম কম। বিশেষ করে আলু, পেয়াজ ও ডিমের। কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না, এই উর্ধ্বগতির বাজারে এমন একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এই কর্মসূচিতে সাধারন মানুষ লাভবান ও চরম উপকৃত হবেন। ট্রাকসেলে আসা মনিটরিং অফিসার শেখ মো. নজরুল ইসলাম জানান, আমরা একটি ট্রাক হতে প্রথমে ২৫০ জনকে ৪ কেজি আলু, ১ কেজি পেঁয়াজ, ১ ডজন ডিম, ১টি লাউ ও ১ ফুলকপি এই ৫টি পণ্যের ৩৫০ টাকার প্যাকেজ বিক্রি করছি। পন্য থেকে গেলে তাও ক্রেতাদের মাঝে বিক্রি করি। বিগত দিনগুলো হতে বর্তমানে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়ে গেছে। ক্রেতারা জানিয়েছেন, এই পন্য পেয়ে তারা চরম উপকৃত হচ্ছেন। আমাদের এই কার্যক্রম নিয়মিত চলমান রয়েছে। ট্রাকসেলে পন্য বিক্রি হচ্ছে খবর শুনে নারী-পুরুষ আগ্রহের সাথে পন্য কিনেছে। খুলনা কৃষি বিপণন বিভাগের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা (ইনচার্জ) আব্দুস সালাম তরফদার জানান, খুলনার ‘খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস)’ নামে কৃষি বিপণন বিভাগের উদ্যোগে সাশ্রয়ী মূল্যে কৃষি পণ্য বিক্রি কর্মসূচি বাস্তবায়ণ হচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রন ও সাধারন মানুষকে স্বস্তি দিতে সপ্তাহের ৬দিন খুলনা মহানগরীর ১০টি পয়েন্টে ৫টি পণ্যের সমান্বয়ে ৩৫০ মূল্যের প্যাকেজ বিক্রি করা হচ্ছে। নির্ধারিত পয়েন্ট ছাড়াও ওই এলাকায় ঘুরে ঘুরে প্রতিদিন ট্রাকসেলের মাধ্যমে প্যাকেজটি সাধারন মানুষের মাঝে বিক্রি করা হচ্ছে। আমাদের এই প্যাকেজটিতে সাধারন নি¤œবিক্ত মানুষ উপকৃত হচ্ছেন বলে অনেকেই জানিয়েছে। তারা নিয়মিত এই কর্মসূচি চালু রাখারও দাবি জানিয়েছেন। খুলনার নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলমান থাকবে।