স্থানীয় সংবাদ

খুলনার বিতর্কিত শিক্ষক কিরীটী রায় শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে আর কত প্রতারণা করবেন?

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনার বিতর্কিত প্রাইমারী শিক্ষক কিরীটী রায় শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে আর কত প্রতারণা করবেন? সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে বিনা অনুমতিতে ১২ বার বিদেশ ভ্রমণের তথ্য মিলেছে। এজন্য গত ৩০ নভেম্বর তার নামে একটি বিভাগীয় মামলা হয়েছে। এবিষয়ে তাকে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তার অগেই তিনি শারীরিক অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে প্রথমে ৭ দিন, পরে ১ মাসের চিকিৎসা ছুটি নিয়েছেন। ২০১২ সালের জুলাই মাসে তিনি আরও একটি বিভাগীয় মামলায় অভিযুক্ত হয়ে অনুনমোদিত ছুটি কাটিয়েছিলেন। সেই মামলায় তার বিরুদ্ধে সন্দেহাতিতভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিধিমালার ৪(৩) ডি ধারায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হয়। পরে মানবিক বিবেচনায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। এবার কী তিনি চাকরিচ্যুত হবেন? তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তিনি বিভাগীয় মামালার ব্যক্তিগত শুনানীতে হাজির হন না। ভেন্যু ও তদন্ত কর্মকর্তার পরিবর্তন চেয়ে বারবার সময় ক্ষেপণ করেন। সম্প্রতি তিনি চাকরি বাঁচাতে নানা তালবাহানা শুরু করেছেন। এই শিক্ষককের বিরুদ্ধে একধিক বিভাগীয় মামালা চলমান আছে। গত ৩ মাসে তাকে ৪টি স্কুলে বদলি করা হয়েছে। বর্তমানে তাকে নগরীর পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে সংযুক্তিতে বদলি করা হয়েছে। পিটিআই সুপার মন্ত্রণালয়ে তার বদলি বাতিল চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। খুলনা সদরের কোন স্কুলে তিনি চাকরি করতে পারছেন না।
২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর দুইজন ছাত্রীর বিরুদ্ধে যৌন পীড়নের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে খুলনা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়। সেই মামলায় তিনি জেল খাটেন। প্রায় ১ বছর চাকরি থেকে বরখাস্ত থাকার পর এবছর সেপ্টেম্বরে তাকে আবারও উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করতে বলা হয়, কিন্ত ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের বাঁধার মুখে তিনি স্কুল থেকে পালিয়ে যান। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তাকে আড়ংঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। ১ অক্টোবর তিনি ঐ স্কুলে যোগদান করতে গেলে এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের বাঁধার মুখে পড়েন। পরে তাকে পুলিশ প্রহারায় স্কুল থেকে উদ্ধার করা হয়। এরপর থানা শিক্ষা অফিসে তার হাজিরার ব্যবস্থা করা হয়। পরে তাকে নুরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি ককেয়জন শিক্ষকের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। তাকে নিয়ে থানা শিক্ষা অফিস মহাবিড়ম্বনায় পড়েন। এরপর অতিসংগোপনে তাকে রায়ের মহল বিদ্যানিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করানো হয়। গত ৪ নভেম্বর ঐ স্কুল সংলগ্ন রাস্তায় তাকে বেদম প্রহার করা হয়েছে বলে এই শিক্ষক অভিযোগ করেন। এজন্য তিনি ডাকযোগে জেলা শিক্ষা অফিস বরাবর ১ মাস ৭ দিনের চিকিৎসা ছুটির আবেদন প্রেরণ করেন। যদিও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন এবং বদলির জন্য ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে যাওয়া আসা করছেন। গত ১৮ নভেম্বর জেলা শিক্ষা অফিস থেকে তার শারীরিক অসুস্থতা সম্পর্কে জানতে খুলনা সিভিল সার্জন বরাবর মেজিকেল বোর্ডের মতামত চাওয়া হয়েছে। এ জন্য ৩ সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। গত ২৬ নভেম্বর সকাল ১০টার তাকে শারীরির পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য সময় দেওয়া হয়েছিন কিন্তু তিনি আসেননি। গত ২ ডিসেম্বর তাকে রিপোর্ট দেখাতে বলা হয়েছিল তিনি আসেননি। আজ রবিবার সকাল ১০টায় আবারও তার শারীরির পরীক্ষা নিরীক্ষার সময় দেওয়া হয়েছে। এভাবে বহুমুখী প্রতারণার মাধ্যমে চাকরি জীবন পার করছেন এই ধূর্ত শিক্ষক। নিজের অপকর্ম ঢাকতে তিনি শিক্ষা অফিসারদের নামেও একাধিকবার মামলা করেছেন। কিছুদিন আগে তিনি উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ জন নারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ১শত পৃষ্ঠার মিথ্যা অভিযোগপত্র প্রস্তুত করে তাদেরকে বদলির ব্যবস্থা করছেন। নগরীর কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক জানিয়েছেন, এই শিক্ষক ১৭ বছরের চাকরি জীবনে ১১বার স্কুল পরিবর্তন করেছেন, একাধিকবার সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। গুরুতর অপরাধে বহুবার শাস্তিযোগ্য বদলি হয়েছেন, তার বিরুদ্ধে বিনা অনুমতিতে বিদেশ ভ্রমণের গুরুতর অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি ভূয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে চিকিৎসা ছুটিতে আছেন। আমরা এই শিক্ষকের স্থায়ীভাবে বরখাস্ত চাই।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button