স্থানীয় সংবাদ

খালিশপুরে প্রতারকচক্রের কবলে পড়ে দিশেহারা এক মুক্তিযোদ্ধা ঃ মামলা হলেও গ্রেফতার নেই

স্টাফ রিপোর্টারঃ নগরীর খালিশপুরে প্রতারকচক্রের নামে ফৌজদারী কার্য্যবিধি আইনের ৯৮ ধারা মোতাবেক মামলা দায়ের করা হয়েছে। পিপলস পাঁচতলা কলোনীর ২৬ কাচা বাসার বাসিন্দা বীরমুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ বাদী হয়ে চারজনকে আসামী করে আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলো, খালিশপুর ১১নং ওয়ার্ড ১৬নং সড়কের তৈয়েবা কলোনীর বাসিন্দা চান শিকদার ওরফে চান পুলিশের ছেলে কামরুজ্জামান লিটন(৫০), সজিব শেখ, তেরখাদা উপজেলার কোলার বাজার এলাকার বাসিন্দা জাফর শেখেল মেয়ে কেয়া খাতুন, খালিশপুর ১১নং ওয়ার্ডের রোড নং-২১৬, প্লট নং-২১ এর বাসিন্দা আঃ রশিদের ছেলে জয়নাল (৩৬)। ঘটনার তারিখ হচ্ছে ৮ নভেম্বর রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, তিনি সহজ সরল আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি। অপরপক্ষগন ঠক, প্রতারক, পরসম্পদলোভী, মিথ্যাবাদী। বাদী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চাকুরী হতে অবসর পরবর্তী সময়ে পরিবার পরিজন নিয়ে শান্তিপ্রিয়ভাবে উল্লেখিত ঠিকানায় বসবাস করেন। গত ৮ নভেম্বর’২৪ রাত ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে আসামীরা জোর পূর্বক বাদীকে আটকে রেখে ৩ ফর্দের ১০০ টাকা মূল্যমানের নন জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পের চুক্তিনামায় অস্ত্র ঠেকায়ে স্বাক্ষর নেয়। আসামী কামরুজ্জামান লিটন বাদীর পূর্ব পরিচিত। আসামী বাদীকে ১টি মোবাইল নম্বর ০১৮০৪-৫০৫৮১০ দিয়ে অনুরোধ করে বলে, “আপনি ফোন করে বলেন লিটন পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে। লিটন ও আবু সাইদ একই এলাকায় বসবাস করায় পূর্ব পরিচিত হওয়ার কারনে ১মপক্ষ উক্ত নম্বরে ফোন করে এবং ২য়পক্ষের কথামত বিষয়টি অবহিত করে। তখন ২য়পক্ষ লিটন সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে চায়। কিছুক্ষন পর আসামী সজিব বাদীকে ফোন করে বিভিন্ন রকম হুমকী প্রদর্শন করে এবং বলে, আপনার সকল কথা আমি রেকর্ড করে রেখেছি। আপনি লিটনকে গুম করে রেখেছেন। কোথায় তাকে রেখেছেন আমাকে বলেন। পরবর্তীতে ২য়পক্ষ তার মোবাইল নম্বর দিয়ে গত ৭ নভেম্বর রাত ৮ টার সময় ফোন করে ১মপক্ষকে আসতে বলে। ১মপক্ষ আসতে পারবে না। পরে আসলে সাক্ষাতে কথা বলতে পারবে। ২য়পক্ষ ৮ নভেম্বর পুনঃরায় ফোন করে ১মপক্ষকে আসতে বলে। ১মপক্ষ ৩নং ২য়পক্ষের সাথে সন্ধ্যার পর পিপলস কলোনীর ৫তলায় সাবেক কাউন্সিলর ওয়াদুদ মুন্সীর কার্যালয়ের সামনে দেখা করে। ১মপক্ষ ওখানে গেলে সাথে আরও ৫/৭ জন লোক কাছে আসে এবং আমি লিটনকে চিনি কিনা তা জিজ্ঞাসা করে। আমি বলি লিটন আমার পূর্ব পরিচিত এবং সম্পর্কে আমার ভাইপো হয়। তারা আমাকে নিয়ে লিটনের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে প্লাটিনাম জুট মিলের সাবেক সেক্রেটারী হুমায়ুনের পানির প্রজেক্টের নিকট যাওয়ার পর আরও ৭/৮ জন লোক এসে তাদের সাথে যোগ দেয়। বিভিন্ন কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তারা আমার পিপলস কলোনীস্থ হোল্ডিং নং-২৬ (কাঁচা বাসা) আমাকে নিয়ে এসে আমার পুত্রবধূ নাজমার সামনে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। আমাকে কিল, ঘুষি দিতে থাকে এবং আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। আমাকে ও আমার পুত্রবধুকে জিম্মি করে আমার নিকট থেকে তাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন জাতীয় পরিচয়পত্র কেড়ে নেয়। তাদের মধ্যে থেকে ১জন আমার জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে বাইরে চলে যায় এবং কিছুক্ষন পরে ষ্ট্যাম্প নিয়ে ফিরে আসে। তখন ৪নং ২য়পক্ষ আমার মাথায় চাকু ঠেকায়ে ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। যার ষ্ট্যাম্প নং- খহ ৬৮২০৮৬৯, খহ ৬৮২০৮৭০, খহ ৬৮২০৮৭১। উক্ত চুক্তিপত্র ২য়পক্ষগনের মধ্যে ২নং ২য়পক্ষ মোঃ সজিব শেখ (দাতা) এবং ১নং ২য়পক্ষ (গ্রহিতা) কামরুজ্জামান লিটন। উক্ত চুক্তিপত্রে আট লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকার লেনদেন হয় মর্মে উল্লেখ থাকে এবং আমাকে জামিনদার হিসাবে চাকু ঠেকায়ে ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। চুক্তিপত্রে আরো উল্লেখ থাকে, গ্রহিতা কামরুজ্জামান লিটন ১ সপ্তাহের মধ্যে উক্ত টাকা পরিশোধ করতে না পারলে জামিনদার হিসাবে বাদী উক্ত টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবেন। চুক্তিপত্রে আরো উল্লেখ থাকে, একসপ্তাহের মধ্যে টাকা পরিশোধ করলে ব্যর্থ হলে আসামীরা বাদীর পিপলস কলোনীস্থ বাসাটি দখল করে নেবে। আসামী বাদীর মধ্যেকার চুক্তিপত্র ও লেনদেনের বিষয়টি ছিল সাজানো নাটক ও কাগুজে কারবার মাত্র। কারন দাতা ও গ্রহিতার মধ্যে কোন প্রকার লেনদেন হয়নি। পূর্বপরিকল্পিতভাবে ১মপক্ষকে ফাঁসানোর লক্ষ্যে চুক্তিপত্রের জামিনদার হিসাবে জোর পূর্বক মারধর করায় স্বাক্ষর নেওয়ার ঘটনাটি ছিল দুরভীসন্ধিমূলক। যা ১ ও ২নং ২য়পক্ষের সাজানো নাটক। উক্ত বিষয়টি ১মপক্ষ গত ১১ নভেম্বর খালিশপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করলে থানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগটি গ্রহন করেন এবং আদালতের দারস্থ হওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। এমতাবস্থায় ৮ নভেম্বর সৃজিত টাকা লেনদেনের চুক্তিপত্র যা জোরপূর্বক ১মপক্ষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জামিনদার করা হয়। ২য়পক্ষণন ১মপক্ষকে হুমকি প্রদান করে চলছে যে, চুক্তিপত্রে উল্লেখিত টাকা ফেরত প্রদান করতে হবে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত খুলনায় এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছেন খালিশপুর থানার এসআই অনুকুল চন্দ্র। তিনি বলেন, আদালত বাদী স্ট্যাম্প উদ্ধারে ওয়ারেন্ট জারি করেছে। যারা স্ট্যাম্প নিয়েছে তাদের স্ট্যাম্প ফেরত দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ এলাকায় নেই। এ বিষয়টি তিনি আদালতকে প্রতিবেদন আকারে জানাবেন। পরে আদালত কি করে তা অপেক্ষামান। বাদী আবু সাঈদ বলেন, এ ঘটনায় একটি শক্তিশালী প্রতারকচক্র জড়িত। পিপলস পাঁচতলা কলোনীর মধ্যে এ গ্রুপের নেতার বসবাস। এ চক্রের কবলে পড়ে অনেকে সর্বশান্ত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button