স্থানীয় সংবাদ

মণিরামপুরে সরকারি খাল দখল করে মাছের ঘের নির্মাণের অভিযোগ

মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধিঃ
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী যশোর-চুকনগর মেইন সড়কের ছাতেনতলা ব্রীজ হতে হাসাডাঙ্গা টেপুর বিলের মাঝখান পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার সরকারি খাল দখল করে মাছের ঘের করে আসছে স্থানীয় সুলতান মোড়ল নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। অথচ ওই খাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে সাড়ে তিন বছর আগে ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে পুন:খনন কাজ করা হয়েছে। একদিকে সরকারি খাল দখল করে দীর্ঘদিন ধরে মাছের ঘের করা ও সরকারের ১৭ লাখ টাকা বিফলে যাওয়া নিয়ে এলাকার জনগনের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। পক্ষান্তরে এলাকাবাসী প্রভাবশালী সুলতানের বিরুদ্ধে প্রশাসনের দপ্তরে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিত অভিযোগ দিতে ভয় পাচ্ছে।
অভিযোগে ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার সীমান্তবর্তী দূর্গাপুর গ্রাম সংলগ্ন হরিহর নদী হতে ছাতেনতলা মেইন সড়কের ব্রীজ হয়ে পশ্চিম দিকে টেপুর বিলের মাঝখান পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ সরকারি খাল রয়েছে। কিন্তু হাসাডাঙ্গা গ্রামের সুলতান মোড়ল দীর্ঘ ১৫/২০ বছর ছাতেনতলা মেইন সড়কের ব্রীজের মুখ বন্ধ করে টেপুর বিলের মাঝখান সীমানা পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার সরকারি খাল দখল করে মাছ চাষ করে আসছে। সম্প্রতি দখল করা ওই খালের মাঝখানে বাঁধ দিয়ে স্যালোমেশিন চালিয়ে ঘেরের পানি নিস্কাশন করছে। যে কারণে শ্যামকুড় ইউনিয়নের হাসাডাঙ্গা, নাগোরঘোপ, চিনাটোলা, আমিনপুর ও জামলা গ্রাম পানি বন্দি হয়ে পড়ে। ফলে এসব এলাকায় মাঠ-ঘাটে জলাবদ্ধতায় কাঙ্খিত ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়না। কারণ বিল থেকে পানি খাল হয়ে হরিহর নদীতে বের হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড এই বিবেচনা করে প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে খালটি পুন:খনন করে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে ২০২১-২২ সালের অর্থ বছরে সরকার ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে পিআইসির (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) মাধ্যমে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে দিকে খনন কাজ করা হয়। এই খালের উত্তরপাশে নাগোরঘোপ,পূর্বপাশে দূর্গাপুর,পশ্চিমপাশে হাসাডাঙ্গা, দক্ষিণপাশে কেশবপুরের মধ্যকুল গ্রাম অবস্থিত। খাল খননের দায়িত্ব পান পিইসির সভাপতি কেশবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে হাসাডাঙ্গা বিলের মধ্যবর্তি স্থান থেকে খাল পুন:খননের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। খনন করা হয়েছে বিলের এক পাশ থেকে। তাছাড়াও যে পরিমান মাটি কেটে গভীর করার কথা সেটাও করা হয়নি। যৎসামান্য মাটি কেটে দুই পাড়ে বাঁধ দেয়া হয়েছে। কোন স্থানে ওই সময় গভীর করা হয় তিন ফুট আবারও কোন স্থানে গভীর করা হয়েছে দুই ফুট। তাছাড়া হাসাডাঙ্গা টেপুর বিল সীমানা থেকে খালের সংযোগ স্থল হরিহরনদীর মুখে খনন করা হয়েছে খুবই অল্প। খালপাড়ের বাসিন্দা হাসাডাঙ্গা গ্রামের আলমগীর হোসেন ও নজরুল ইসলাম বলেন, মাছের ঘেরের কারণে খাল খননে গভীর করার পরিবর্তে শুধুমাত্র দুই পাড় বাঁধা হয়। তড়িঘড়ি করে যৎসামান্য মাটি কেটে দায়সারাভাবে খনন কাজ করা হয়।
সরকারি খাল দখল করে মাছ চাষ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত সুলতান মোড়ল বলেন, সরকারি খাল আমি দখল করেনি। বিলের পানি সেচ দিয়ে খালে দেওয়া হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারি প্রকৌশলী ফিরোজ হোসেন খাল পুন:খননের কথা স্বীকার করে বলেন, খাল দখলের বিষয়টি উদ্ধর্তন কতৃপক্ষকে তিনি জানাবেন। মণিরামপুর সহকারী কমিশনার (ভুমি) নিয়াজ মাখদুম বলেন, সরকারি খাল দখল করে কেউ যদি ঘের বানিয়ে মাছের চাষ করে, তাহলে সেটা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না বলেন, খাল দখল করে ঘের বানানো প্রশ্নই আসে না। তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি, এসিল্যান্ডের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, সরকারি খাল দখল করে কেউ ঘের বা পানি প্রভাবে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারবে না। দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button