স্থানীয় সংবাদ

খুলনাঞ্চলের সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ

এক বছরে ঝরল ৬৩৩ প্রাণ ঃ শীর্ষে যশোর

স্টাফ রিপোর্টার ঃ ২০২৪ সালে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ৬৮৯টি। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৬৩৩ জন। আহত হন ৬৫১ জন। সবচেয়ে বেশি ঘটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুহার বেশি। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলঃ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিসংখ্যান মতে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন যশোরে। এ জেলায় ১৫০টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৩৪ জন এবং আহত হন ১৫৫ জন। খুলনা জেলায় সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৩৬টি। এতে নিহত হন ৪০ জন এবং আহত হন ২৯ জন। বিআরটিএ’র খুলনা বিভাগীয় পরিচালক প্রকৌশলী মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ৬৮৯টি। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৬৩৩ জন। আহত হন ৬৫১ জন। খুলনা জেলায় সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৩৬টি। এতে নিহত হন ৪০ জন ও আহত হন ২৯ জন। বাগেরহাট জেলায় সংঘটিত ৭৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৭৪ জন এবং আহত ১০৬ জন। সাতক্ষীরা জেলায় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৫৩টি, এতে নিহত হন ৫৮ জন এবং আহত হন ৬৩ জন। যশোর জেলায় সংঘটিত ১৫০টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৩৪ জন এবং আহত হন ১৫৫ জন। নড়াইলে ২৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ২৯ জন এবং আহত হন ৪০ জন। মাগুরায় ৩৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত এবং ৩০ জন আহত হন। ঝিনাইদহে ৭৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৭৯ জন এবং আহত হন ৬৬ জন। কুষ্টিয়ায় ৯৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮১ জন নিহত ও ৪৩ জন আহত হন। চুয়াডাঙ্গায় ৯৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৭ জন নিহত এবং ৭৭ জন আহত হন। মেহেরপুরে ৪২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত এবং ৪২ জন আহত হন। যে কারণে ঘটছে দুর্ঘটনাঃ নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) মহানগর শাখার সভাপতি নাসির উদ্দিন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুহার এখন বেশি। এদের বেশিরভাগই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ সড়কের বিশৃঙ্খলা। রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের যান চলাচল করে। বিশেষ করে বর্তমানে দুই ও তিন চাকার গাড়ির আধিক্যে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সড়কে নরক অবস্থাঃ খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় সড়ক-মহাসড়কগুলো যেন ভয়ঙ্কর মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। কোথাও খানাখন্দ, আবার কোথাও পিচ উঠে গেছে। সড়ক নির্মাণের বছর না ঘুরতেই যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খুলনা নগরীতে প্রবেশের অন্যতম প্রবেশদ্বার শিপইয়ার্ড সড়কের মাত্র চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি প্রশস্ত ও উন্নয়নের জন্য নেওয়া প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল দুই বছরের মধ্যে। কিন্তু গত ১১ বছরে ৬-৭ বার মেয়াদ বাড়ানোর পরও সেই কাজ সম্পন্ন হয়নি। উল্টো বারবার মেয়াদ বাড়াতে গিয়ে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১৫০ কোটি টাকারও বেশি। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে এই প্রকল্পের ধীরগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পরও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এমন কি বিষয়টি বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার কেডিএ’র সাথে যোগাযোগ করলেও কাজের অগ্রগতি নেই। কয়েক দফা খুলনায় গিয়েও বিষয়টির সুরাহা করতে পারেননি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ফলে এ সড়কে নরক যন্ত্রণা নিয়ে চলছেন লাখ লাখ যাত্রী। খুলনা-সাতক্ষীরা, যশোর-খুলনা, ঝিনাইদহ-যশোর, খুলনা-মোংলা মহাসড়কসহ বিভাগের অন্তত পাঁচটি আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। গত এক বছরে অন্তত ৪৫টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৩০ জন। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। যশোর-খুলনা মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় সড়কের উপরিভাগের কোথাও ছোট-বড় গর্ত, আবার কোথাও উঠে গেছে পিচ। যশোর-খুলনা মহাসড়কে কখনও গাড়ি উল্টে যাচ্ছে, কখনও টায়ার ফেটে যাচ্ছে। ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের অবস্থা আরও বেহাল। ঝিনাইদহ থেকে যশোরগামী ভুটিয়ারগাতী, তেঁতুলতলা, বিষয়খালী, নিতমলাসহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্তের। এখন ধুলার কারণে চলা দায় হয়েছে পড়েছে। চলাচলের জন্য এসব স্থানে ইটের সলিং করায় ভোগান্তি যেন চরমে পৌঁছেছে। প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। সাতক্ষীরা-শ্যামনগর আঞ্চলিক মহাসড়কটির অবস্থাও খারাপ। দীর্ঘ এক যুগেও সংস্কার হয়নি সড়কটিতে। একই চিত্র দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র বন্দরে যাওয়ার পথ খুলনা-মোংলা মহাসড়কেও। সড়কটির অন্তত ১০ কিলোমিটার রাস্তায় গতি কমিয়ে প্রতিনিয়ত হেলে-দুলে চলাচল করছে বন্দরগামী ভারী যানবাহন। এসব সড়কের পিচ উঠে বড় বড় গর্ত হয়ে গেছে। পাথর ও খোয়া উঠে মাটি বের হয়ে গেছে। বৃষ্টি ও জোয়ার এলে অনেক সড়ক পানিতে ডুবে থাকে। ঘটে দুর্ঘটনা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button