মণিরামপুরে আলোচিত ধনাঢ্য মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনের নামে ”বীর নিবাসের” বাড়ি বরাদ্দ বাতিল করলো প্রশাসন

মণিরামপুর (যশোর)প্রতিনিধি ঃ যশোরের মণিরামপুরে আলোচিত ধনাঢ্য মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনের নামে বীর নিবাসের সরকারি বাড়ি বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না বরাদ্দকৃত বাড়িটি গত মঙ্গলবার এটি বাতিল করেন। অভিযোগ রয়েছে, তথ্য গোপন করে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য সচিব মোঃ আলাউদ্দিন নিজেকে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করে সরকারের বীর নিবাস প্রকল্প থেকে ১৮ লাখ টাকার বরাদ্দের একটি বাড়ী বরাদ্দ নেন। এ ব্যাপারে অতি সম্প্রতি বিভিন্ন গনমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাদ্দকৃত তালিকা থেকে তার নামটি বাদ দেন।
জানা যায়, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলাউদ্দিন ২০০৯ সালে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদসের কমান্ডারের দায়িত্ব পান। সেই থেকে টানা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত তিনি কামান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। গত ৩০ আগস্ট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নুতন করে সাত সাদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠান করা হয়। এ কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পান আলাউদ্দিন। সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে সরকার মণিরামপুরে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে পাঁচজনকে ”বীর নীবাস” প্রকল্পের আওতায় বাড়ি নির্মান করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ইতিমধ্যে তদন্তের মাধ্যমে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে পাঁচজনের নামের একটি তালিকা চুড়ান্ত করে বাড়ি নির্মানের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। ওই তালিকায় মোঃ আলাউদ্দিনের নাম রয়েছে চার নম্বর সিরিয়ালে। চুড়ান্ত তালিকায় আলাউদ্দিনের নামে বাড়িটি নির্মান করা হবে উপজেলার ঝাঁপা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের তার পৈত্রিকভিটায়। অথচ তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তথ্য গোপন রাখা হয়েছে। মণিরামপুর পৌরশহরের সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে নিজস্ব জমিতে আলাউদ্দিনের রয়েছে প্রাচীর ঘেরা একটি একতলা বাড়ি। ইতিমধ্যে একতলা বাড়িটি সম্প্রসারন করে তিনতলায় রুপান্তরের কাজ এগিয়ে চলেছে। এছাড়া ঢাকার একটি অভিজাত এলাকায় তার রয়েছে একটি ফ্ল্যাট বাসা। ঢাকার ওই বাসায় মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন ও তার স্ত্রী বসবাস করেন। মাঝেমধ্যে তিনি ঢাকা থেকে মণিরামপুরে এসে কাজকর্ম করে থাকেন। তার দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে এখন একটি জাহাজের মেরিন ইঞ্জিনিয়ার এবং মেয়ে অষ্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন। তিনি প্রতিমাসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও চাকুরির পেনশন পেয়ে থাকেন।
এ ব্যাপারে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এলাকায় রিতিমত হৈচৈ পড়ে গেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানিয়েছিলেন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার নাম বাদ দেওয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন বলেন, আমার নামে বীর নিবাসে বরাদ্দকৃত বাড়িটি নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না জানান, নিজেকে অস্বচ্ছল দাবি করে প্রকৃত তথ্য ও অবস্থান গোপন করে গ্রামের ঠিকানায় আবেদন করেছিলেন আলাউদ্দিন। প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের পর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন বাড়িটি নিতে অনিচ্ছাপ্রকাশ করে গত সোমবার তার কাছে লিখিত আবেদন করেন। ফলে তার নামটি মঙ্গলবার বাদ দেওয়া হয়েছে।



