রূপসায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তুলছেন ছাত্রদল নেতা নাঈম

প্রতিদিন দোকানপ্রতি গুণতে হয় ২শ’ টাকা
প্রতিকার দাবি ভুক্তভোগীদের
অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি বিএনপি নেতার
স্টাফ রিপোর্টার : রূপসা কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুন নাঈমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। পূর্ব রূপসা ঘাটে ফল ও বেল বিক্রেতারা এ অভিযোগ তুলেছেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে ফল বিক্রেতা মোহাম্মদ নান্নু মিয়া ওরফে নান্না ও তার ছেলে মামুনের কাছ থেকে প্রতিদিন ২শ’ টাকা করে মাসে ৬ হাজার টাকা চাঁদা তুলছেন নাঈম। এমনকি প্রায় ১৫-২০ দিন পূর্বে ফল বিক্রেতা নান্নার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে ওই ছাত্র নেতা। কিন্তু ফল বিক্রেতা নান্না এত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেও তার কাছ থেকে জোর পূর্বক ৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগীর অভিযোগ। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ভূক্তভোগীরা স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, পূর্ব রূপসা ঘাটের ফল বিক্রেতা মোহাম্মদ নান্নু মিয়া ওরফে নান্না দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর ধরে পূর্ব রূপসা ঘাটে মৌসুমী ফলের ব্যবসা করে আসছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে রূপসা ডিগ্রী কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাইম জোরপূর্বক তার কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে আসছে। এছাড়াও নাইম অন্যান্যদের কাছ থেকেও চাঁদা তুলছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। চাঁদার টাকা ঠিকমতো না দিতে পারলে ফলের দোকান সরিয়ে ফেলাসহ নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
পূর্ব রূপসা ঘাটের ফল বিক্রেতা মোহাম্মদ নান্নু মিয়া ওরফে নান্না বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে রূপসা ডিগ্রী কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাইম জোরপূর্বক চাঁদা দাবি করে। বর্তমানে আমার এবং আমার ছেলের দোকান থেকে প্রতিদিন ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। নাইম অন্যান্যদের কাছ থেকেও চাঁদা নিচ্ছেন, তবে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। আমার উপর ধারাবাহিকভাবে অত্যাচার চালাচ্ছে এবং টাকা দিতে ব্যর্থ হলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। জীবন নাশের হুমকিও দেয়।
ভুক্তভোগী নান্না আরও বলেন, গতকাল রাত ১টার সময় নাইম আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ৫শ’ টাকা চাঁদা দাবি করে। কিন্তু ৫শ’ টাকা না থাকায় ২শ’ টাকা দিলে সে আমার ছেলেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং টাকা দিতে না পারলে আমার ফলের দোকান সরিয়ে ফেলার হুমকি দেয়। এর আগে নাঈম ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে । পরে সমিতি থেকে তুলে তাকে ৫ হাজার টাকা দিই।
তিনি বলেন, আমি শান্তি ও শৃঙ্খলার মধ্যে যেনো ব্যবসা করতে পারি। কোনো জুলুম, অত্যাচার বা হামলার শিকার যেন না হতে হয়। প্রশাসনের প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই, তারা সর্বদা সাহায্য করে এবং আমাদের জিজ্ঞেস করেন কেউ চাঁদা নিচ্ছে কিনা। তবে নাইম আমাদের হুমকি দেয়। যে কারণে ভয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে পারি না। এ বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নেতৃবৃন্দের কাছে প্রতিকারের জোরালো দাবিও জানান তিনি।
পূর্ব রূপসা ঘাটের বেল বিক্রেতা মোহাম্মদ মামুন বলেন, গত বছর আগস্ট মাসের ৫ তারিখের পর থেকে আমাদের কাছে জোরপূর্বক চাঁদা নিচ্ছেন রূপসা কলেজের ছাত্র নাইম। প্রায় ১৫ দিন আগে নাইম আমার আব্বার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। দিতে না পারলে দোকান ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়। দোকান ঘর বাঁচানোর জন্য আমার আব্বা পাঁচ হাজার টাকা ধার করে এনে নাঈমকে দেয়। পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার পরও হুমকি দেয়। আমাদের সংসারসহ যাবতীয় খরচ এই দোকানের উপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে ৩ জন এতিমের খরচও বহন করতে হয়।
মামুন আরও বলেন, নাইম আমার নিকট থেকে গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা জোরপূর্বক নিয়েছে। প্রতিদিন সে চাঁদা নেয়। বিএনপির মিছিল বা মিটিং থাকলে আরও বেশি টাকা দাবি করে। টাকা তিনি সরাসরি বা অন্য কোন মাধ্যমে নিয়ে যান। দিতে না পারলে দোকান ভাঙার হুমকি দেয়। গতকাল রাতে আমাকে ডেকে নিয়ে নাঈম ৫’শ টাকা চাঁদা দাবি করে। যা দিতে না পারায় হুমকি দেয় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। বহু বছর ধরে আমার বাবা এবং আমার ফুফু বিএনপি করে। অর্থাৎ আমরা বিএনপির সমর্থক। তবু আমাকে এবং আমার পরিবারকে আওয়ামী লীগ সমর্থক বলে ভয় দেখায় নাঈম। এমনকি রূপসা ঘাটে থাকতে দেবে না বলে হুমকি দেয়। আমাদের একটাই দাবি এই নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি এবং সরকার, প্রশাসন, বিএনপির নেতারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।
চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করে রূপসা কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুন নাঈম এ প্রতিবেদককে বলেন, নান্না চাচার সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। তার কাছ থেকে আমি কখনও চাঁদা নেয়নি। এ অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। তার সম্মান ক্ষুন্ন করতে কেউ এ ধরণের অভিযোগ করতে পারে। তবে, তিনি এ বিষয়ে সাক্ষাত করে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
রূপসা কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি পাপ্পু মীর বলেন, ফল বিক্রেতাদের কাছ থেকে ছাত্রদল নেতার চাঁদা আদায়ের বিষয়ে কেউ তাকে কিছু বলেনি। তবে বেশ আগে একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতার কাছে কে বা কারা ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। বিষয়টি জানার পর আমরা খোঁজ নিতে গেলে আর তার নাম বলেনি। তবে ভয়ে ওই ঝালমুড়ি বিক্রেতা আর ঘাটে আসেনা বলেও জানান তিনি। এখন আবার কেউ চাঁদাবাজি করলে বিষয়টি দলের উর্দ্ধতন নেতৃবৃন্দকে অবহিত করে প্রতিকারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন পাপ্পু মীর।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও রূপসা, তেরখাদা-দিঘলিয়া উপজেলার সাংগঠনিক কমিটির প্রধান খান জুলফিকার আলী জুলু বলেন, আমাদের বিএনপি গণমানুষের প্রিয় দল। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কেউ যদি চাঁদাবাজি করে থাকে তাহলে দলে তাদের কোন ঠাই নেই। কারোর বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেটা পূবেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও নেওয়া হবে।



