স্থানীয় সংবাদ

খালিশপুরে ব্যবসায়ী সবুজ হত্যার ঘটনায় ১১ জনকে আসামী করে মামলা

# গ্রেফতারকৃত নাজমাকে কারাগারে প্রেরণ #

খুলনা প্রতিনিধিঃ নগরীর খালিশপুরে ডাব বিক্রেতা সবুজ খান (৫৩) হত্যার ঘটনায় ১১ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত মামলার তিন নম্বর আসামী নাজমা বেগমকে(৪৭) শুক্রবার কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। খালিশপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতেই নিহতের স্ত্রী শাহিনুর বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামীরা হলো, খালিশপুর হাউজিং বাজার বক্কারবস্তির বাসিন্দা আবুল কালামের ছেলে সোহেল (২৬) ও সুজন (২৪), নেছার আলীর মেয়ে নাজমা বেগম (৪৭), বাইতুলফালাহ মোড়ের বাসিন্দা মৃত নাদিমের ছেলে আরিফ (২৭), বক্কারবস্তির রহমান বেপারীর ছেলে আবুল কালাম(৪৮), কালামের ছেলে সাগর (২১), গৌতম মোড়ের ইয়াদ আলী (৫০),সহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন। অন্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে তিনি জানান। এজহারে উল্লেখ করা হয়, “আমার স্বামী সবুজ খান একজন ডাব ব্যবসায়ী। আমার ছোট বোন নাজমা তথা ৩ নং আসামী ও তার স্বামী ৫ নং আসামী কালাম এবং তাদের ছেলেদের সাথে পূর্ব থেকেই আমাদের পারিবারিক শত্রুতা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে উল্লিখিত আসামীরা আমার সন্তান ও স্বামীর ক্ষতি করার জন্য চেষ্টা করে আসছে। ৩নং আসামী আমার এ সন্তানদের নামে পূর্বে মামলা করেছে, যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আমাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তারা নানা ফন্দি-ফিকির করে আসছিলো। গত ৭/৮ মাস পূর্বে আমরা বক্কার বস্তি ছেড়ে বর্তমান ঠিকানায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছি। এর ৩ নং ও ৫নং আসামী বক্কর বস্তি এলাকায় সুদের ব্যবসার সাথে জড়িত থাকায় সুদের টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে গত ৩ অক্টোবর ৫ নং আসামী কালামকে কে বা কারা মারধর করে। এই বিষয়ে আসামীরা পূর্ব শত্রুতার জেরে – আমার বড় ছেলেকে সন্দেহ করে একাধিকবার মারধর করার চেষ্টা করে। আমি, আমার স্বামী সবুজ খানসহ পরিবারের লোকেরা নিজেদেরকে বাঁচাতে গত ৫ অক্টোবর খুলনা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করি। আসামীরা এই কারনে ক্ষিপ্ত ‘হয়ে আমাদের উপরে প্রতিশোধ নিতে ভাড়াটে গুন্ডা নিয়ে নানা কৌশল করতে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় ৯ অক্টোবর আমার স্বামী সবুজ খান আমাদের ভাড়া বাড়ি থেকে বাজার করার উদ্দেশ্যে হাউজিং বাজারে যাওয়ার পথে সকাল সাড়ে ১০ টার সময়ে খালিশপুর হাউজিং বাজারস্থ নূরানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে জনৈক বকুল মিয়ার বাড়ির গেটের সামনে পৌঁছালে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে ৫ নং আসামীর নেতৃত্বে ১ নং, ২ নং, ৩ নং, ৪নং এবং ১নং আসামীর বন্ধু, ভাড়াটে সন্ত্রাসী ৪নং আসামী আরিফ, ৭নং আসামী ইয়াদ আলী (৫০)সহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন আমার স্বামীর পথ আটকে এলাপাথাড়ী মারতে থাকে। ১নং আসামী তার হাতে থাকা চা-পাতি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার স্বামীর গলায় কোপ দিলে নিজেকে বাঁচাতে আমার স্বামী হাত দিয়ে ঠেকাতে চেষ্টা করে তখন তার চাপাতির কোপে আমার স্বামীর ডান হাত মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। আমার স্বামীর বাম হাত ৫নং আসামী ধরে ফেলে একই সময়ে ৩নং আসামী ও ৬নং আসামী আমার স্বামীর দু’ পা ধরে ফেলে এবং অন্য আসামীরা চা-পাতি, দা ও ধারালো ছোরা দিয়ে আমার স্বামীর দু’ রানে, দু’ হাতে, পিঠে, ডান কোমরে হত্যা করার উদ্দেশ্যে এলাপাথাড়ী কুপিয়ে মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত জখম করে। আমার স্বামী রক্তক্ষরণে নিস্তেজ হয়ে গেলে আসামীরা আমার স্বামীকে ফেলে চলে যায়। আসামীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পরে উপস্থিত সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা আমার স্বামীকে নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার আমার স্বামীকে মৃত ঘোষনা করে। আমি সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার স্বামীকে না পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে তার মৃতদেহ দেখতে পাই। ময়না তদন্তের পর আমার স্বামীর মৃত দেহ আমরা বাড়ীতে নিয়ে আসি। আসামীরা পূর্ব শত্রুতার কারনে হত্যার উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে একই উদ্দেশ্যে দা, চাপাতি ও ছোড়া দিয়ে আমার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করে।” এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নাজমার নেতৃত্বে এলাকায় মাদক ও সুদ ব্যবসা জমজমাটভাবে চলছে। তার রয়েছে ১৫/২০ জনের একটি দল। যা দিয়ে তিনি এলঅকায় নানা কর্মকান্ড পরিচালনা করতো। বিগত দিনে তিনি সাবেক মহিলা কাউন্সিলর ও আ’লীগ নেত্রী পারভীনের লাঠিয়াল ছিলেন। ওই সময় ফ্যাসিস্ট পারভীনের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে এলাকায় ব্যাপক প্রভাব ছিল। তখন আ’লীগের মিছিল মিটিং-এ সবার আগে থাকতেন। আ’লীগ পালিয়ে গেলেও সুদে নাজমার প্রভাব কমেনি। তিনি এখন নতুন করে বিএনপির ঘাড়ে বসে এলাকার প্রভাব ধরে রেখেছেন। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে খুলনায় খালিশপুর হাউজিং বাজারের বক্কারবস্তির সামনে কুপিয়ে হত্যা করে সবুজ খানকে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button