স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় ‘অপ্রতিরোধ্য’ মাদক কারবারি!

# নগরীতে মাদক সিন্ডিকেটকে কেন্দ্র করে বেড়েই চলছে অপরাধ #
# ছাঁয়ার বাইরে থাকছে রাঘব-বোয়াল, ইয়াবা আসক্তিতে ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনার নগরী জুড়ে প্রতিদিনই কেএমপি’র নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযানের বিভিন্ন মাদক সেবন দ্রবাদী ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিল, দেশীয় চোলাই মদ জব্দ ও উদ্ধারের পাশাপাশি আসামী গ্রেফতার হলেও খুলনাতে এখনো মাদক নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। খুলনার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন গোপন তথ্যসূত্রের ভিত্তিতে নিরালস প্রচেষ্ঠার মাধ্যম একটি পরিচ্ছন মাদকমুক্ত শহর হিসাবে খুলনাকে উপহার দেওয়ার জন্য নিরালস কাজ করে চললেও, প্রতিনিয়ত নগরীতে বিভিন্ন কায়দার সু-কৌশলে মাদকের বিকিকিনি চলছে। তবে, প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানে দু’চারটা চুনোপুঁটি মাদককারবারি আটক হলেও আড়ালে এবং ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে রাঘব-বোয়ালরা। এসব রাঘব-বোয়লদের ছত্রছাত্রায় খুলনায় অনেকাংশে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে মাদককারবারি। বিশেষজ্ঞরা মাদককেই সামাজিক অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসাবে দেখছেন। তারা বলছেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী শহর জুড়ে অভিযান চালিয়ে ছোট খাটো মাদক বিক্রেতা বা সেবনকারীকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করলে, কয়েকদিন যেতে না যেতে জামনে বের হয়ে ফের পূর্বের আশ্রয়-প্রশয়দাতাদের দ্বারা সক্রিয় হয়ে লিপ্ত হচ্ছে মাদক বেচাবেচায়। প্রকৃতপক্ষে, আইনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকা প্রকৃত মাদক যোগানদাতাদের অভিনবপস্থা আর সুকৌশলে খুলনার অধিকাংশ এলাকায় মাদকের অভয়ারন্যে গড়ে উঠেছে। খুলনায় সম্প্রতি সময়ে যে সকল অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে, ওই সব ঘটনার অধিকাংশ কারণই মাদক সংক্রান্ত। তাছাড়া মাদকের আসক্তিতে যুব সমাজ ধ্বংসের প্রায় দ্বারপ্রান্তে। ইয়াবা সেবনে আসক্ত ব্যক্তিরা মাদক সেবন ও কেনার টানা জোগায় করতে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে।

সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বিভিন্ন এলাকাসহ সোনাডাঙ্গা, গল্লামারী, জিরোপয়েন্ট, রুপসা, বাস্তহারা কোলনী, বয়রা, বৈকালী , জোড়াগেটকোলনী, খালিশপুর, আলমনগর, দৌলতপুর, রেলিগেট, মানিকতলা, ফুলবাড়ীগেট, শিরোমনি, আটরা গিলাতলাসহ নগরীর বাইরের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও সু-কৌশলে বিক্রি হচ্ছে মাদক দ্রব্যাদি, যার মধ্যে ইয়াবা ও গাঁজার প্রভাবই বেশি। ওই সকল এলাকার সচেতন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশাজীবি মানুষের সঙ্গে একান্তভাবে কথা বলে জানা যায় যে, তারা তাদের এলাকায় কখনো দুপুরে, কখনো সন্ধ্যার পর আবার কখনো গভীর রাতেও অচেনা মানুষকে মোটরসাইকেল যোগে আসতে দেখছেন, আবার মুহুর্তের মধ্যেই ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি/ব্যক্তিদ্বয় চোখের পলকে হাওয়া হচ্ছে যাচ্ছেন। তাদের ভাষ্য, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক বিক্রেতারা সু-কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছে রমারমা ব্যবসা। কখনো কখনো তাদের মাদক হাতবদলের ক্ষেত্রে কাজ করছে কয়েক স্তরের ব্যক্তি। যাদের দেখে প্রশাসনের সন্দেহ হওয়ার কথা নয়, সে মাদকবহনকারী ব্যক্তি হতে পারে। মাদকে আসক্তির কারনে ক্রঃমশই সমাজে বেড়ে উঠছে নানা প্রকার সামাজিক অপরাধ।
সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ বলছেন, মাদকের নেশায় কারনে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে বহুশত পরিবার। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একাধীক মামলা হলেও থামছেনা মাদকের রমরমা ব্যবসা। মাদক মামলায় আটককৃত আসামীরা কয়েকদিন যেতে না যেতে জামিনে মুক্তি পেয়ে যান, যার দরুন ওই সমস্ত মাদক বিক্রেতারা পুর্নরায় যুক্ত হয় মাদক কারবারিতে। মাদকে আসক্তি হয়ে যুব সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌচ্ছে যাচ্ছে। বিশেষ করে তরুনো ইয়াবা সেবনের টাকা জোগার করার জন্য জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। তাছাড়া ইয়াবা সেবন করে শহরের অলিগলি দিয়ে উঠতি বয়সিরা জীবনের ঝুকি নিয়ে মোটরসাইকেলে অবাধে বিচরণ করছে। সমাজ সচেতন একাধীন ব্যক্তিবর্গের প্রশ্ন নগরীতে মাদকের যে রমরমা ব্যবসা, এসব মাদক কারবারিদের খুঁটির জোর কোথায় ? কোন নৈপথ্যের অদৃশ্য ছায়াই চলছে এই রমরমা ব্যবসা?

ব্যবসায়ী খালেদুর রহমান জানান, মাদক একটি সামাজিক ব্যাধি। প্রতিদিনই নতুন নতুন যুবকসহ বিভিন্ন পেশাজীবির মানুষ মাদকের সেবায় আসক্ত হচ্ছে। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে অভিনব পন্থায় কারবারি করছে মাদকের। মাদক নির্মূলে এলাকাবাসীর উচিত এলাকা, পাড়-মহল্লায় প্রকৃত মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি তাদের আইনের আওতায় আনা বলে আমি মনে করি। অভিভাবক আনিছুর রহমান জানান, বাইরে প্রচুর মাদকের ছড়াছড়ি। হাতের নাগালেই ইচ্ছা করলে পাওয়া যাবে মাদক দ্রবাদি। ছেলেরা স্কুলে পরে সারাক্ষন ভীতিতে থাকি , না জানি সঙ্গ দোষে মরণ নেশা মাদকে আবার কখন জড়িয়ে পড়ে। তাই সব সময় তাদেরকে নজরদারীতে রাখি। পাশাপাশি সকল অভিভাবকেরই উচিত তাদের সন্তান কখন, কোথায় কার সঙ্গে মেলামেশা করে সেদিকে খেয়াল রাখা।
এ বিষয়ে সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’র নগর সাঃ সম্পাদক এড. কুদরত-ই খুদা জানান, মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রনে মূল কাজ হলো পুলিশের। যারা মাদক কারবারি একক কোনো ব্যবসা না, এটির জাল অনেক উপর পর্যন্ত। পুলিশ শুধু বিক্রেতাকে আটক করবে না, গোটা চক্রকেই তাদের আইনের আওতায় আনা উচি বলে আমি মনে করি। তিনি আরো জানান, একটা সময় পুলিশ একটা রাজনৈতিক দলের উপর প্রভাবিত ছিল। তবে, বর্তমানে পুলিশের প্রতি জনগনের যে প্রত্যাশা, বিশেষ করে বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের সময়ে পুলিশের যে ভূমিকা থাকার কথা ছিল, সেনুসারে ভূমিকা রাখছেনা পুলিশ। মাদক সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হলে পুলিশ আরো দায়িত্বশীলতা সাথে দায়িত্বপালন করতে হবে। এ বিষয়ে উপপুলিশ কমিশনার তাজুল ইসলাম জানান, মাদক নিয়ন্ত্রন ও নির্মূলে আমাদের বিভিন্ন টিম কাজ করছে। প্রতিদিনই মাদক সংক্রান্ত অপরাধে জড়িতদের আটক ও মামলা করা হচ্ছে। মাদক কারবারি যতবড় প্রভাবশালী হোক না কেন, কোনো ছাড় নেই। মাদকের সাথে কোনো আপোষ নেই, মাদকের ব্যাপারে জিরো ট্রলারেন্স।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button