দশ মাসে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ২৫৭৫টি
এর মধ্যে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪৩৩ টি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৯৭টি ; যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক
প্রবাহ রিপোর্ট : নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার মাত্রা ক্রমাগতই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দশ মাসে মোট ২৫৭৫ টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে এগিয়ে আসুন, সহিংসতা প্রতিরোধে বিনিয়োগ করুন: Unite to End Violence against Women and Girls, Invest to Prevent Violence প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলনটি হয়। মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের প্রোগ্রাম অফিসার (কাউন্সেলিং) সাবিকুন নাহার। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার, উন্নয়ন সংগঠন, নারী ও মানবাধিকার সংগঠন, নারী আন্দোলন বহুমাত্রিক কাজ করলেও নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার মাত্রা ক্রমাগতই বৃদ্ধি পাচ্ছে, এর সাথে বাড়ছে বর্বরতার ধরণ। এবছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১৩টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে মোট ২৫৭৫টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪৩৩ টি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৯৭ টি। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ উদ্বেগের সাথে আরও লক্ষ্য করছে যে, বর্তমানে সময়ে অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমে ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক অভিঘাতের কারণে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতাও বাড়ছে। এ সকল পরিস্থিতির উত্তরণে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ‘সমন্বিত বিনিয়োগ’ অপরিহার্য বলে মনে করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আইন-নীতিমালা-কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা এবং সংবেদনশীলতা বৃদ্ধিতে জেন্ডার বাজেটে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে, পাশাপাশি নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ, সহিংসতার কারণ নির্ণয় এবং এর আলোকে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে গবেষণায় বিনিয়োগ করতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং অ্যাডভোকেসি শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে নারীর মানবাধিকার সংগঠন, নারী আন্দোলনে আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ভূমিকা পালনের ওপর জোর দিতে হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মডারেটরের বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষকের সাথে ধর্ষণের শিকার নারীর বিয়ে হয়। আইনের বিধানে এধরণের বিয়ে দিয়ে সমাধানের কথা বলা নেই। এতে নারীর আত্মমর্যাদার উপরে আঘাত আসে, তার নিরাপত্তাও বিঘিœত হয়। নারীর মর্যাদা ও মানবাধিকার রক্ষায় ধর্ষকের সাথে বিয়ে কোনোভাবেই কাম্য নয়। অন্যদিকে ধর্ষণের ঘটনাসহ বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনা ও নানা হতাশাজনক অবস্থার কারণে কিশোর-কিশোরী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আত্মহত্যার ঘটনা প্রতিরোধে মানসিক সহায়তা, কাউন্সিলিং সেবার পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ অন্যতম একটি কারণ হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। শুধু দরিদ্র পরিবারেই নয় বরং মধ্যবিত্ত পরিবারেও বাল্য বিয়ে হচ্ছে। বিয়েতে যৌতুক নেওয়া বন্ধে ও যৌতুকের কারণে সৃষ্ট সহিংসতা প্রতিরোধে যৌতুক নিরোধ আইন প্রণয়ন করা হলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। যৌতুকের কারণে হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। একই সাথে ডিভোর্সের সংখ্যা ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সকল ঘটনায় কেবল নারীকে দোষারোপ না করে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে তিনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, কর্মক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, গণপরিবহন ও গণপরিসর যৌন হয়রানিমুক্ত করে গড়ে তোলা, সম্পদ-সম্পত্তিতে নারীদের সম-অধিকার দেওয়া, নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে বিনিয়োগের ক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের মধ্যে সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী ও শাহানা কবির, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগমসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।